ব্যস্ততা ফিরবে? ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জ। —ফাইল চিত্র
ফের লেনদেন চালু করতে সেবির নিয়ম মেনে এ বার শেয়ার কেনা-বেচার দাম মেটানোর পরিকাঠামো তৈরি করছে ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। শেয়ার বাজারে যার পোশাকি নাম ক্লিয়ারিং কর্পোরেশন। এ জন্য ৩০০ কোটি টাকা লগ্নি করছে তারা। এই পরিকাঠামো না-থাকায় ২০১৩ সালের মার্চ থেকে লেনদেন বন্ধ রয়েছে সিএসই-তে।
এই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই এমসিএক্স স্টক এক্সচেঞ্জের (এমসিএক্স এসএক্স) সঙ্গে হাত মেলানোর পথে পা বাড়িয়েছে সিএসই। অংশীদারি বেচে সিএসই-কে নিজেদের ক্লিয়ারিং কর্পোরেশনে সামিল করতে রাজি এমসিএক্স এসএক্স-ও। ফলে এখন এ বিষয়ে চূড়ান্ত ছাড়পত্র পেতে বাজার নিয়ন্ত্রক সেবির কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে সিএসই। একই সঙ্গে, ঘুরে দাঁড়াতে বিভিন্ন আঞ্চলিক স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে হাত মেলানোর বিষয়টিতেও কিছুটা এগিয়েছে তারা।
শেয়ার কেনা-বেচার পর তার দাম মেটানোর বিষয়টি দেখে ক্লিয়ারিং কর্পোরেশন। সমস্ত এক্সচেঞ্জে তা কাজ করে স্বাধীন সংস্থা হিসেবে। এক্সচেঞ্জের কোনও নিয়ন্ত্রণ তার দৈনন্দিন কাজে থাকে না। শেয়ার হস্তান্তরের পর ক্রেতা ও বিক্রেতা দু’তরফের মধ্যে দাম মেটানোর ক্ষেত্রে যাতে কোনও জটিলতা তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করতে এখন প্রতি এক্সচেঞ্জে ওই ক্লিয়ারিং কর্পোরেশন গড়া বাধ্যতামূলক করেছে সেবি। আর সেই শর্ত পূরণ করতেই এমসিএক্স এসএক্স-এর ক্লিয়ারিং কর্পোরেশনের শেয়ারে লগ্নি করতে উদোগী হয়েছে সিএসই।
সিএসই-র এমডি এবং সিইও বি মাধব রেড্ডি বলেন, “এমসিএক্স এসএক্স-এর ক্লিয়ারিং কর্পোরেশনের সঙ্গে পাকা কথা হয়ে গিয়েছে। এ নিয়ে অনুমোদন পেতে সেবির কাছে প্রস্তাবও জমা দিয়েছি।” উল্লেখ্য, এর আগে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের (বিএসই) ইন্ডিয়ান ক্লিয়ারিং কর্পোরেশনের সঙ্গে সামিল হতে উদ্যোগী হয়েছিল সিএসই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি।
কোনও এক্সচেঞ্জে ক্লিয়ারিং কর্পোরেশন না-থাকলে, এখন তা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সেবি। ফলে ফের লেনদেন চালু করতে ওই পরিকাঠামো খুলতেই হত। কিন্তু তা ছাড়াও ওই কর্পোরেশনের হাত ধরে আয়ের আর একটি সূত্র তৈরি হবে সিএসই-র। এমনিতে সম্পূর্ণ পৃথক ব্যবসা হিসেবে কাজ চালানোয় সরাসরি ক্লিয়ারিং কর্পোরেশনের আয়ের ভাগ তারা পাবে না। কিন্তু সেখানে শেয়ার থাকায় সেই বাবদ ডিভিডেন্ড পাবে সিএসই।
তবে ক্লিয়ারিং কর্পোরেশন গড়লেই চলে না। তার নির্দিষ্ট পরিমাণ নিট সম্পদ থাকতে হয়। সংশ্লিষ্ট এক্সচেঞ্জে প্রতি দিন কত টাকার লেনদেন হয়, তার উপর নির্ভর করেই ঠিক হয় ওই নিট সম্পদের অঙ্ক। সেই অনুযায়ী, সিএসই-র ক্লিয়ারিং কর্পোরেশন গড়তে প্রয়োজন ৩০০ কোটি টাকার নিট সম্পদ। এ ক্ষেত্রে সিএসই নিজেরা ওই পরিকাঠামো না-গড়ে ৩০০ কোটি টাকার শেয়ার কিনবে এমসিএক্স এসএক্স-এর ক্লিয়ারিং কর্পোরেশনে। ফলে তাদের প্রয়োজনীয় অংশীদারি থাকবে ওই পরিকাঠামোয়।
এই ৩০০ কোটি জোগাড়ের বন্দোবস্ত ইতিমধ্যেই সেরে ফেলেছে সিএসই। রাজারহাট এবং ইএম বাইপাসের ধারে তাদের প্রায় ১৫ একর জমি রয়েছে। যা বিক্রি করে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা পাওয়া যেতে পারে। ওই জমি বিক্রির প্রস্তাব অনুমোদনও করেছে সেবি।
এ ছাড়া, সিএসই-কে চাঙ্গা করতে অন্যান্য আঞ্চলিক স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে হাত মেলাতেও আগ্রহী কর্তৃপক্ষ। এক সময় দেশে কলকাতা, কোচি, আমদাবাদ-সহ ১৭টি আঞ্চলিক এক্সচেঞ্জ ছিল। এর মধ্যে ১১টিই বন্ধ করে দেওয়ার অনুমতি চেয়েছে সেবির কাছে। বাকি ছ’টি এক্সচেঞ্জের মধ্যে সিএসই ছাড়াও রয়েছে আমদাবাদ, জয়পুর, দিল্লি, ইনদওর এবং ভদোদরা। সিএসই সূত্রে খবর, ওই পাঁচ এক্সচেঞ্জ এবং আগে ব্যবসা গোটাতে চাওয়া ১১টি এক্সচেঞ্জের বেশ কয়েকটি এখন সিএসই-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে টিকে থাকতে আগ্রহী। রেড্ডির দাবি, চারটি স্টক এক্সচেঞ্জের (মধ্যপ্রদেশ, লুধিয়ানা, বেঙ্গালুরু এবং ওটিসিআই) সঙ্গে এ নিয়ে চুক্তিও হয়েছে। আলোচনা চলছে ইনদওর, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, আমদাবাদ-সহ আরও বেশ কয়েকটি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে।
রেড্ডি জানান, “বিভিন্ন এক্সচেঞ্জের সঙ্গে বিভিন্ন শর্তে চুক্তি হবে। তবে দু’টি শর্ত সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এক, ওই সমস্ত এক্সচেঞ্জের ব্রোকাররা সিএসই-র সদস্য হবেন। আর দুই, ওই সব এক্সচেঞ্জে যে সব সংস্থা নথিভুক্ত, সেগুলি সিএসই-তে নথিভুক্ত হবে। তবে কোনও ক্ষেত্রেই কোনও এক্সচেঞ্জ সিএসই-র সঙ্গে মিশে যাবে না। পুরো বিষয়টি অনুমোদনের জন্য সেবির কাছে পাঠানো হয়েছে।” এখন সিএসই-তে ২,৫০০টি সংস্থা নথিভুক্ত রয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে সেই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হবে বলে রেড্ডির দাবি।