ফায়দা মিলল ঠিকই। কিন্তু তা বলে পুরোটা নয়।
বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর উল্কার বেগে পড়তে থাকার জেরে শুক্রবার পেট্রোল ও ডিজেলের দাম কমাল রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি। তবে তার আগে এ দিনই ওই দুই জ্বালানির উপর ফের উৎপাদন শুল্ক বাড়িয়েছে মোদী-সরকার। ফলে তা না-চাপানো হলে দাম যতটা নামতে পারত, আখেরে কমলো তার প্রায় অর্ধেক। কলকাতায় পেট্রোল লিটারে ২.০২ টাকা কমে হয়েছে ৬৬.৬৪ টাকা। আর ডিজেল ২.০১ টাকা নেমে ৫২.৯৯।
বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম কয়েক মাসের মধ্যে ব্যারেলে ১১০ ডলার থেকে নেমে এসেছে ৫০ ডলারের নীচে। কিন্তু সম্প্রতি তার সুফল সাধারণ মানুষ সে ভাবে পাননি। কারণ, অল্প সময়ের মধ্যে তিনবার পেট্রোল-ডিজেলের উপর উৎপাদন শুল্ক বাড়িয়েছে কেন্দ্র। একই ভাবে এ দিনও জানানো হয় যে, ওই দুই জ্বালানির উপর ফের লিটারে ২ টাকা উৎপাদন শুল্ক চাপাচ্ছে তারা। ফলে তখন মনে হয়েছিল, এ বারও দাম কমবে না। কিন্তু তার কিছুক্ষণ পরেই দিল্লিতে পেট্রোল ২.৪২ টাকা ও ডিজেল ২.২৫ টাকা কমানোর কথা জানায় তেল সংস্থাগুলি।
অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, এ কথা ঠিকই যে, এ বার শুল্ক না-বসালে দাম কমতে পারত লিটারে ৪ টাকারও বেশি। কিন্তু তা-ও যে অন্তত কিছুটা দর কমছে, তার কারণ মূলত দু’টি
(১) চার দফায় পেট্রোল ও ডিজেলের উপর মোট যথাক্রমে ৭.৭৫ ও ৬.৫০ টাকা শুল্ক চাপিয়েছে কেন্দ্র। ফলে বিরোধীরা ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন যে, তা বসানো না-হলে দাম ওই পরিমাণ কমতে পারত। ফলে দিল্লি বিধানসভা ভোটের প্রচার যখন তুঙ্গে উঠেছে, তখন একেবারে দাম না-কমার রাজনৈতিক ঝুঁকি নিতে চায়নি কেন্দ্র।
(২) তা ছাড়া প্রশ্ন উঠছিল, পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাজারের হাতে ছাড়ার পরেও বিশ্ব বাজারের কম দরের সুযোগ কেন মিলবে না? কেন বারবার কর চাপিয়ে তা আটকে দেবে কেন্দ্র? এ বার দাম কমায় সেই অস্বস্তি কিছুটা এড়ানো যাবে বলে মনে করছে কেন্দ্র।
সাধারণ মানুষ পুরো ফায়দা না-পেলেও, বিশ্ব বাজারে তেলের দরে পতন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির কাছে কার্যত মেঘ না চাইতে জলের সামিল। কারণ, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজকোষ ঘাটতিতে লাগাম পরানোর চেষ্টা করছেন তিনি। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, চার দফায় শুল্ক বাড়ায় রাজকোষে বাড়তি আসবে ২০-৩০ হাজার কোটি টাকা। ফলে ঘাটতিকে ৪.১ শতাংশে বেঁধে রেখে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে আরও সুদ কমানোর রাস্তা তৈরি রাখতে পারবেন জেটলি।
তবে সেই তাগিদের পাশাপাশি এ দিন রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতাও মনে রেখেছে মোদী-সরকার। সাধারণত মাসের ১ ও ১৫ তারিখে তেলের দাম ঘোষিত হয়। এ বার হল ১৬ তারিখ। প্রথমে ইন্ডিয়ান অয়েলের চেয়ারম্যান পেট্রোল, ডিজেলের দাম না-কমার কারণ ব্যাখ্যা করলেও, পরে তার দর কমলো। ফলে পুরো ঘটনা পরম্পরাকেই রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।