বেআইনি ভাবে কাঁচা পাট মজুত রুখতে সংশ্লিষ্ট বিধি কার্যকর করার কথা রাজ্যকে বলা হয়েছিল দু’মাস আগে। কিন্তু এই সময়ে এক ছটাক মজুত কাঁচা পাটও উদ্ধার করতে পারেনি তারা। সেখানে দু’টি চটকল এবং এক ডিলারের ডেরায় হানা দিয়ে বেআইনি ভাবে জমা পাট উদ্ধার করল জুট কমিশনারের দফতর। অভিযোগ, সরকার অনুমোদিত পরিমাণের থেকে অনেক বেশি কাঁচা পাট মজুত করেছিল তারা।
এ প্রসঙ্গে জুট কমিশনার সুব্রত গুপ্ত জানান, ‘‘ইতিমধ্যেই দু’টি চটকলের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছি। আরও ছয় চটকল কর্তৃপক্ষকে নোটিস জারি করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ, অনুমোদিত পরিমাণের থেকে অনেক বেশি কাঁচা পাট মজুত করে রাখার।’’
যে দুই চটকলের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে, সেগুলি হল— আগরপাড়া জুট মিল এবং হাওড়ার বালি জুট মিল। এর পাশাপাশি, সম্প্রতি বনগাঁয় লালচাঁদ-ধর্মচাঁদ নামে এক কাঁচা পাট ডিলারের গুদামে হানা দিয়ে প্রায় ২,৫০০ কুইন্টাল কাঁচা পাট উদ্ধার করেছেন জুট কমিশনারের দফতরের অফিসররা। আইন মোতাবেক কোনও ডিলার ১,৭০০ কুইন্টালের বেশি কাঁচা পাট মজুত করতে পারেন না।
কমিশনার জানান, ‘‘বেআইনি ভাবে মজুত করা কাঁচা পাট উদ্ধারের কর্মসূচি আমরা চালিয়ে যাব।’’
সম্প্রতি কাঁচা পাট মজুতের বহর দ্রুত বেড়ে যাওয়ার কারণে তার দাম বাড়তে শুরু করে হু হু করে। ফলে দর বেড়ে যায় চটের বস্তারও। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্যে বেআইনি ভাবে জমা করে রাখা কাঁচা পাট উদ্ধারের জন্য রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রিগোষ্ঠী গঠন করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সমস্যা মোকাবিলার উদ্দেশে কাঁচা পাট মজুতের ঊর্ধসীমা বেঁধে দিতে নভেম্বর মাসের গোড়ায় কেন্দ্রকে অনুরোধ করে তারা। সেই অনুযায়ী কাঁচা পাটের সর্বোচ্চ মজুতের পরিমাণ ঠিক করে দেয় কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রক।
ঠিক হয়, চটকলে সর্বাধিক দু’মাসের উৎপাদনের মতো কাঁচা পাট মজুত করা যাবে। আর ডিলাররা গুদামে রাখতে পারবেন ১,৭০০ কুইন্টাল পর্যন্ত।
রাজ্যের এনফোর্সমেন্ট বিভাগের উপর দায়িত্ব বর্তায় কাঁচা পাট মজুত সংক্রান্ত ওই বিধি যাতে কার্যকর হয়, তা নিশ্চিত করার। কিন্তু গত দু’মাসে তারা সাফল্যের মুখ দেখেনি। এই পরিস্থিতিতে নিজেরাই বেআইনি ভাবে জমিয়ে রাখা কাঁচা পাট উদ্ধারে নেমে পড়ে জুট কমিশনারের দফতর।
এ দিকে, চটের বস্তার দামের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে জুট কমিশনারের নির্দেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করেছিল চটকল মালিকদের সংগঠন আইজেএমএ। কিন্তু তা মঞ্জুর করেনি আদালত। যদিও বৃহস্পতিবার আইজেএমএ-র চেয়ারম্যান মণীশ পোদ্দার বলেন, ‘‘স্থগিতাদেশ পাইনি। তবে আমরা মামলা চালিয়ে যাব।’’