উৎপাদন শিল্পে দক্ষিণ কোরিয়ার লগ্নি আগেই টেনেছে রাজস্থান। এ বার তাদের দ্বিতীয় পছন্দ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের জায়গা পাকা করতে সরাসরি অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই সে দেশের শিল্প ও লগ্নি উন্নয়নের সরকারি সংস্থা কোটরা-কে জমি দেওয়ার প্রস্তাব দিলেন শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র। তবে তিনি খড়্গপুর, গোয়ালতোড়, পানাগড় শিল্পতালুকের একটিকে বেছে নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও, কোটরার (কোরিয়া ট্রেড ইনভেস্টমেন্ট প্রোমোশন এজেন্সি) প্রতিনিধি দল সেগুলি নিয়ে উচ্চবাচ্য করেনি। বরং তারা আগ্রহী রাজ্যের প্রথম ইলেকট্রনিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং ক্লাস্টার প্রকল্প সম্পর্কে। যা তৈরি হচ্ছে নৈহাটি শিল্পতালুকে। এবং বৈদ্যুতিন পণ্য উৎপাদনে লগ্নি টানতে এই মুহূর্তে যেটি রাজ্যের অন্যতম বড় বাজি।
সম্প্রতি বণিকসভা আইসিসির ওই অনুষ্ঠানে শিল্প তথা তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অমিতবাবু জানান, ভারতের মোট বৈদ্যুতিন পণ্য উৎপাদনের মাত্র ৪% এ রাজ্যে হয়। তাঁর দাবি, ওই হার ১০% করার লক্ষ্যে এগোচ্ছে রাজ্য। তিনি বলেন, “রাজ্যে মেধা সম্পদ রয়েছে। সুনির্দিষ্ট সরকারি নীতিও আছে। ফলে এ ধরনের প্রকল্পে লগ্নির প্রয়োজনীয় পরিবেশ ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কোটরার কর্তা ডি এস ছে এবং তাইপেই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের প্রতিনিধি টু ফু হান। বৈদ্যুতিন পণ্যের শিল্পগুচ্ছ তৈরির প্রকল্প নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন ছে। তিনি বলেন, “কলকাতার ভৌগোলিক অবস্থান ও মেধা সম্পদের জন্য এখানে লগ্নি করতে উৎসাহী হতে পারে কোরীয় সংস্থাগুলি। উৎপাদন শিল্পের কেন্দ্র (হাব) হিসেবে তাঁরা রাজস্থানকে বেছেছেন। তবে লগ্নির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সংস্থাগুলি। আমরা যোগসূত্র তৈরির কাজ করি।” পরে ছে এবং কোটরার অন্যান্য প্রতিনিধিদের নিয়ে নৈহাটিতে জমি দেখাতে যান ওয়েবেলের আধিকারিকরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৫ সালের মধ্যে দেশে বৈদ্যুতিন পণ্যের বাজার দাঁড়াবে ৩৬,৩০০ কোটি ডলারের। যা এখনও রাজ্যের অধরা। সংশ্লিষ্ট মহলের মত, পরিস্থিতি বদলাতে পারে ইলেকট্রনিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং ক্লাস্টার।
প্রসঙ্গত, গত মার্চেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রকল্পটির রিপোর্ট জমা দিয়েছে রাজ্য। এর ভিত্তিতে প্রাথমিক ছাড়পত্র দিতে চলেছে কেন্দ্র। সম্প্রতি বণিকসভা সি আই আইয়ের এক অনুষ্ঠানে ওয়েবেল কর্তৃপক্ষ জানান, নৈহাটিতে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের শিল্পতালুকে ৭০ একর জমিতে শিল্পগুচ্ছটি তৈরি হবে। প্রকল্পের জন্য ৫০% টাকা কেন্দ্রীয় অনুদান হিসেবে পাওয়া যাবে।
নৈহাটির পাশাপাশি ফলতায় দ্বিতীয় ইলেকট্রনিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং ক্লাস্টার গড়ার কাজও চলছে বলে তথ্যপ্রযুক্তি দফতর সূত্রে খবর। প্রকল্পের বিশদ পরিকল্পনা তৈরি করছে উপদেষ্টা সংস্থা আইএল অ্যান্ড এফএস। প্রয়োজনে দু’টি প্রকল্প একসঙ্গে তৈরি করে দিতেও রাজি রাজ্য। কারণ সফট্ওয়্যারে বড় লগ্নির অভাব বৈদ্যুতিন শিল্পের বিনিয়োগ পুষিয়ে দিতে পারবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট শিল্পমহল। রাজ্য সূত্রে খবর, মূল লগ্নিকারী বা ‘অ্যাঙ্কর ইনভেস্টর’ খোঁজার দায়িত্ব অবশ্য আই এল অ্যান্ড এফ এস-এর উপরেই দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প রিপোর্টও তৈরি করেছে তারাই।