কৃত্রিম ভাবে অনুৎপাদক সম্পদ কমিয়ে রাখা ঠিক নয় বলে মন্তব্য করলেন রঘুরাম রাজন।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর বলেছেন, বেশ কিছু ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান পড়ে থাকা ঋণকে অনুৎপাদক সম্পদের তকমা না-দেওয়ার আর্জি জানিয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কছে এই ধরনের বেশ কিছু আর্জি জমা পড়েছে বলে জানান তিনি। ওই সমস্ত সংস্থার বহু ঋণগ্রহীতাই তিন বছর যাবৎ টাকা শোধ করার পথে হাঁটেননি। তা সত্ত্বেও হিসাবের খাতায় তাঁদের নেওয়া ঋণকে অনুৎপাদক সম্পদ হিসাবে চিহ্নিত করতে একান্ত আপত্তি সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক ও আর্থিক সংস্থার।
রাজন বলেন, খাতায়-কলমে ওই ধরনের ঋণকে এড়িয়ে গেলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। তাঁর কথায়। “ওই ঋণ আজ শোধ না-হলে কাল যে শোধ হবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। ” তাঁর মতে, শেষ পর্যন্ত ওই সব পড়ে থাকা ঋণের জেরে ব্যাঙ্কের মুনাফায় টান পড়বেই। রাজনের মতে এই ফাঁদ থেকে বেরোনোর একমাত্র পথ যে-কোনও ঋণই যাতে আদায় করা যায়, তা নিশ্চিত করা। তা হলেই লাভজনক হয়ে উঠবে ব্যাঙ্কের ব্যবসা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অনুৎপাদক সম্পদ বাড়লে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম মেনে তার জন্য আর্থিক সংস্থান করতে হয় ব্যাঙ্ককে। আর্থিক সংস্থান বাবদ বরাদ্দ টাকা মুনাফা থেকে বাদ দিয়েই তৈরি করতে হয় ব্যালান্স শিট। সেই কারণেই অনুৎপাদক সম্পদ কম করে দেখাতে তৎপর বিভিন্ন ব্যাঙ্ক। আর, তা নিয়েই আপত্তি তুলেছের শীর্ষ ব্যাঙ্ক কর্তা।
এখানে সম্প্রতি আরবিআই পরিচালিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ব্যাঙ্ক ম্যানেজমেন্ট-এর সমাবর্তন উপলক্ষে রাজন এ প্রসঙ্গে ইচ্ছাকৃত ভাবে ধার শোধ করছে না, এমন কর্পোরেট সংস্থার প্রতি কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, “সংস্থা খারাপ আথির্ক ফল করা মানেই ব্যাঙ্কঋণ বাকি ফেলে রাখাটা ওই ধরনের সংস্থার কোনও ‘পবিত্র অধিকার’ নয়। রাজন ব্যঙ্কগুলির উদ্দেশে বলেন, ওই সব ঋণকে বকেয়া না-দেখানোর জন্য বিশেষ ছাড় দাবি করাটা কোনও সমাধানসূত্র নয়। বরং ব্যাঙ্ককে তার প্রতিটি ঋণ আদায় করার জন্য উঠে-পড়ে লাগতে হবে। সেটি যাতে প্রকৃত সম্পদ হিসাবে ব্যালান্স শিট সমৃদ্ধ করতে পারে, তা দেখতে হবে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে। এটা সহজ কাজ নয় বলেও মন্তব্য করেন রাজন। তবে এক বার এই পথে হেঁটে ব্যালান্স শিটকে অনাদায়ী ঋণমুক্ত করতে পারলে বাজার থেকে তহবিল সংগ্রহ, লগ্নি বাড়ানো, বা অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে ঋণদান, সব দিকেই এগিয়ে যেতে পারবে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক।