ভোট পর্যন্ত তেজী থাকারই সম্ভাবনা শেয়ার বাজারের

উত্তেজনায় ভর করে বার তিনেক ছুঁলেও, সেনসেক্স এখনও বাইশ হাজারের শৃঙ্গে চেপে বসতে পারেনি। স্পর্শ করে প্রতিবারই নেমে এসেছে। তবে এটা বলাই যায় যে, সর্বকালীন উচ্চতার আশেপাশেই রয়েছে মুম্বই সূচক। এবং যা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে তাতে মনে হয়, নির্বাচন পর্যন্ত তা ঊর্ধ্বমুখীই থাকবে। গত কয়েক দিনে নিফ্টিও ঘুরেছে ৬৫০০ অঙ্কের বলয়ের মধ্যে।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৪ ০১:১৭
Share:

উত্তেজনায় ভর করে বার তিনেক ছুঁলেও, সেনসেক্স এখনও বাইশ হাজারের শৃঙ্গে চেপে বসতে পারেনি। স্পর্শ করে প্রতিবারই নেমে এসেছে। তবে এটা বলাই যায় যে, সর্বকালীন উচ্চতার আশেপাশেই রয়েছে মুম্বই সূচক। এবং যা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে তাতে মনে হয়, নির্বাচন পর্যন্ত তা ঊর্ধ্বমুখীই থাকবে। গত কয়েক দিনে নিফ্টিও ঘুরেছে ৬৫০০ অঙ্কের বলয়ের মধ্যে।

Advertisement

সূচকের ঊর্ধ্বগতির কারণ ১) কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপির সরকার গড়ার সম্ভাবনা। ২) ভোগ্যপণ্য মূল্যবৃদ্ধি সূচক ৫ শতাংশের নীচে নেমে আসা, যা সুদ কমানোয় ইন্ধন জোগাতে পারে, এবং ৩) বিদেশি লগ্নি-প্রবাহ বৃদ্ধি। এ ছাড়া, রফতানি না বাড়লেও, আমদানি কমে আসায় এবং বিদেশি লগ্নি বেড়ে ওঠায় বাজারে ডলারের জোগান বেড়েছে। ফলে বেশ খানিকটা বেড়েছে ডলারে টাকার দাম। কিছুটা হলেও শিথিল করা হয়েছে সোনা আমদানির উপর রাশ। ডলারের দাম কমায় সপ্তাহের শেষ দু’দিনে সোনার দামও বেড়েছে কিছুটা।

পাশাপাশি মার্কিন সরকার আর্থিক ত্রাণ কমাতে শুরু করলেও, বস্তুত তার কোনও প্রভাব পড়েনি ভারতীয় শেয়ার বাজারে। বরং এ দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশার বাণী শুনিয়েছে অগ্রণী আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা সংস্থা গোল্ডম্যান স্যাক্স। ভারতের রেটিং এক ধাপ বাড়িয়ে সাম্প্রতিক রিপোর্টে গোল্ডম্যান জানিয়েছে, আগামী এক বছরে ১৭% পর্যন্ত বেড়ে উঠতে পারে নিফ্টি। লগ্নিকারীদের জন্য এটি খুশির খবর। এর আগে ভারত সম্পর্কে আশার কথা শুনিয়েছিল বিদেশি সংস্থা বিএনপি পারিবাস। নিফ্টি ৭০০০ পয়েন্টে পৌঁছতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অগ্রণী দু’একজন ভারতীয় ইক্যুইটি বিশ্লেষকও। তা যদি হয়, তবে সেনসেক্স পৌঁছে যেতে পারে ২৬ হাজারে। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কোনও নিশ্চয়তা নেই। বাজারকে পাকাপাকি নির্ভর করতে হবে অর্থনীতির উপরেই। শিল্প এখনও মন্থর। অর্থাৎ এ বারও বড় ভরসা কৃষিই। সূচককে অনেকটাই নির্ভর করতে হবে বর্ষার উপর। পণ্যমূল্য যদি নিয়ন্ত্রণে থাকে ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যদি সুদ কমানোর পথে হাঁটে, তবে শিল্পে কিছুটা প্রাণ ফিরতে পারে। এই দিক থেকে সুদ কমানো বড় মদত জোগাতে পারে মূল দুই সূচককে।

Advertisement

সূচক এতটা ওঠায় দাম বেড়েছে বহু শেয়ারের। ভাল জায়গায় পৌঁছেছে অনেক ছোট ও মাঝারি শেয়ার। ন্যাভ বেড়েছে ইক্যুইটি-নির্ভর বেশির ভাগ মিউচুয়াল ফান্ডের। বাজারের সুদিনে আবার দেখা দিয়েছে নতুন ফান্ড ইস্যু (এনএফও)। সব মিলিয়ে আদর্শ লগ্নির পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলেও, আশা জাগানোর পরিস্থিতি অবশ্যই সৃষ্টি হয়েছে। তবে যে ক্ষেত্রটি কিছু দিন আগে পর্যন্ত দুর্বল বাজারে বড় শক্তির কাজ করছিল, সেই তথ্যপ্রযুক্তি হঠাৎই দুর্বল হয়ে পড়েছে। যার কারণ নিজেদের ভবিষ্যৎ ফল সম্পর্কে ইনফোসিস ও টিসিএস-এর কিছুটা নিরাশার বাণী শোনানো। এতে এরা ছাড়াও দাম কমেছে আরও বেশ কিছু তথ্যপ্রযুক্তি শেয়ারের।

এ দিকে, ২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষের শেষ ঘণ্টা বেজে গিয়েছে। বছর শেষ হতে আর মাত্র ৭ দিন। ২০১২-’১৩ সালের আয়করের রিটার্ন এবং ২০১৩-’১৪ বছরের কর সাশ্রয়ের জন্য লগ্নি তথা দেয় কর জমার কাজ সেরে ফেলতে হবে ক’দিনের মধ্যেই। লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ও সরকারি ব্যাঙ্কগুলি এরই মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন ডিভিডেন্ড দিয়েছে। লগ্নিকারীদের দেখে নিতে হবে সব সূত্র থেকে পাওনা ডিভিডেন্ড ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে তো!

গত সপ্তাহে মাত্র তিন দিনের জন্য সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গোল্ডম্যান স্যাক্স বাজারে ছেড়েছিল সিপিএসই ইটিএফ (সেন্ট্রাল পাবলিক সেক্টর এন্টারপ্রাইজ এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড)। উদ্দেশ্য, এই নতুন ইস্যুর মাধ্যমে বাজার থেকে ৩০০০ কোটি টাকা তোলা, যা লগ্নি করা হবে ১৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত মহারত্ন, নবরত্ন ও মিনিরত্ন শেয়ারে। এতে প্রাথমিক দামের উপর ৫% ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়। নতুন ইস্যুর লগ্নিকারীরা, যাঁরা অ্যালটমেন্টের পর এক বছর এই ইউনিট ধরে রাখবেন, তাঁরা প্রতি ১৫টি ইউনিটের জন্য পাবেন বিনামূল্যে একটি। অর্থাৎ এ দিক থেকে ৬.৬৬% লাভ হতে পারে। তবে বেশি সময় দেওয়া হয়নি। ভাল করে বুঝে ওঠার আগেই বন্ধ হয়েছে ইস্যু। খোলা বাজারে প্রকল্পটির নিয়মিত কেনাবেচা শুরু হবে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। তবে পরে ডিসকাউন্ট, বোনাস অবশ্য মিলবে না। ইউনিটের মূল্য ওঠানামা করবে সিপিএসই ইনডেক্স মাফিক। এই সূচকের ঝুড়িতে আছে ওএনজিসি, গেইল, কোল ইন্ডিয়া, আরইসি, অয়েল ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান অয়েল ইত্যাদির মতো রাষ্ট্রায়ত্ত শেয়ার। এদের বেশির ভাগই শক্তি উৎপাদনকারী সংস্থা। অন্য ক্ষেত্রের মধ্যে আছে কন্টেনার কর্পোরেশন, ভারত ইলেকট্রনিক্স ইত্যাদির মতো গোটা চারেক সংস্থা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন