সূচক উঠলেও বাজারের ধন্দ কাটেনি বাজেট নিয়ে

এক দিকে পরিকাঠামো উন্নয়নে একগুচ্ছ প্রকল্প ঘোষণা। অন্য দিকে শেয়ার ও বন্ডের বাজার চাঙ্গা করতে একাধিক পদক্ষেপ। এই দুইয়ের জেরে দীর্ঘ তিন বছর বাদে বাজেটের দিনে উঠল সূচক। শনিবার বাজেট পেশের পরে বাজার বন্ধের সময়ে সেনসেক্স ওঠে ১৪১.৩৮ পয়েন্ট। থিতু হয় ২৯,৩৬১.৫০ অঙ্কে। উল্লেখ্য, শনিবার হলেও এ দিন বাজেট উপলক্ষে খোলা ছিল বাজার। তবে সূচক উঠলেও বাজেট ভাল হল না মন্দ, তা নিয়ে ধন্দ ছিল লগ্নিকারীদের মনে।

Advertisement

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৫ ০২:০৫
Share:

এক দিকে পরিকাঠামো উন্নয়নে একগুচ্ছ প্রকল্প ঘোষণা। অন্য দিকে শেয়ার ও বন্ডের বাজার চাঙ্গা করতে একাধিক পদক্ষেপ। এই দুইয়ের জেরে দীর্ঘ তিন বছর বাদে বাজেটের দিনে উঠল সূচক। শনিবার বাজেট পেশের পরে বাজার বন্ধের সময়ে সেনসেক্স ওঠে ১৪১.৩৮ পয়েন্ট। থিতু হয় ২৯,৩৬১.৫০ অঙ্কে। উল্লেখ্য, শনিবার হলেও এ দিন বাজেট উপলক্ষে খোলা ছিল বাজার।

Advertisement

তবে সূচক উঠলেও বাজেট ভাল হল না মন্দ, তা নিয়ে ধন্দ ছিল লগ্নিকারীদের মনে। যে-কারণে লেনদেনের পুরো সময়টাই সূচক দুলেছে ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো। ২৯,৪১১ দিয়ে শুরু করে এক সময় তা নামে ২৮,৮৮২ পয়েন্ট। পরে ফের মাথা তোলে উপরের দিকে।

এ বারের বাজেটে চমকে দেওয়ার মতো তেমন কোনও ঘোষণাও ছিল না। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে দেশের আর্থিক উন্নতি নিশ্চিত করার জন্য জমি তৈরির কাজ অনেকটা সেরে রাখতে চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। যা উৎসাহিত করেছে বাজারকে।

Advertisement

এর মধ্যে রয়েছে, আগামী অর্থবর্ষে রাজকোষ ঘাটতি ৩.৯ শতাংশে বেঁধে রাখা। ২০১৪-’১৫ সালে বৃদ্ধি ৭.৪ শতাংশে ও ২০১৫-’১৬ সালে ৮.৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ধার্য করা।

বাজারের প্রত্যাশা মিটিয়ে জেটলির পরিকাঠামো চাঙ্গা করার দাওয়াইও এ দিন ইন্ধন জোগায় সূচকের উত্থানে। এই তালিকায় আছে, ২০২০ সালের মধ্যে ১ লক্ষ কিলোমিটার নতুন রাস্তা তৈরি। গরিব মানুষদের জন্য ৬ লক্ষ বাড়ি ও ৬ কোটি শৌচাগার গড়ে তোলা। বন্দর উন্নয়নেও আছে একাধিক ব্যবস্থা। জেটলি ঘোষণা করেছেন, ২০১৫-’১৬ সালেই পরিকাঠামো উন্নয়নে ৭০ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হবে।

আলাদা ভাবে শেয়ার বাজার-সহ মূলধনী বাজারকে চাঙ্গা করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করাতেও এ দিন খুশি হয় সূচক। যেমন, শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি-র সঙ্গে পণ্য লেনদেন বাজারের নিয়ন্ত্রক ফরোযার্ড মার্কেটস কমিশনকে (এফএমসি) মিশিয়ে দেওয়া। শ্রেয়ী ক্যাপিটাল মার্কেটস-এর এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর অশোক পরাখ বলেন, “মূলধনী বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ প্রশংসা দাবি করতে পারে। কারণ, ন্যাশনাল স্পট এক্সচেঞ্জে সম্প্রতি ৫,৬০০ কোটি টাকার নয়ছয় সামনে এসেছে। পণ্য লেনদেনের ওই এক্সচেঞ্জটি এফএমসির আওতাতেই ছিল। সেবি-র সঙ্গে এফএমসিকে মিশিয়ে দেওয়ার ফলে মূলধনী বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আরও মজবুত হবে।”

বাজেটে সম্পদ কর তোলার কথা বলা হয়েছে, যা স্বাগত জানিয়েছে শেয়ার বাজার। ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন সভাপতি কমল পরাখ বলেন, “এর ফলে অনেকের হাতে লগ্নিযোগ্য অথ বাড়বে। এর একটা অংশ শেয়ার বাজারে আসবে সন্দেহ নেই।” প্রবীণ বাজার বিশেষজ্ঞ ও দেকো সিকিউ -রিটিজের কর্ণধার অজিত দে-র মতে, “এ বার শুরু হবে সূচকের লম্বা দৌড়”।

ভারতের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের জন্য বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলিকে আরও উৎসাহিত করার ব্যবস্থাও বাজেটে করেছেন জেটলি। বলা হয়েছে, ওই সব সংস্থার উপর মূলধনী লাভ-কর বসবে না। চালু হবে, এর থেকে পাওনা টাকার রসিদ বা এ ধরনের নথি বাজারে লেনদেনের ব্যবস্থা। ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের এমডি-সিইও বি মাধব রেড্ডি বলেন, “এর ফলে বাজারে লেনদেনের নতুন দিক খুলে গেল।”

এ বার বাজেটে কোম্পানি কর ৩০% থেকে কমিয়ে ধাপে ধাপে ২৫% করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এতে খুশি কর্পোরেট কর্তারা। যদিও শেষমেষ এই ব্যবস্থা তাঁদের কতটা সুবিধা দিতে পারবে, তা নিয়ে সংশয়ও রয়েছে একাংশের। বেঙ্গল চেম্বারের পরোক্ষ কর কমিটির চেয়ারম্যান ও ডিআইসি ইন্ডিয়ার সিনিয়র এগ্জিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট তিমিরবরণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “করের হার কমানোর পাশাপাশি সংস্থাগুলি করে যে-সব ছাড় পায়, তার বেশ কিছু তুলে দেওয়া হবে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। সেটা হলে ওই করের হার কমলেও তা সংস্থাগুলির পক্ষে কতটা লাভজনক হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে।”

মূলধনী বাজারের ক্ষেত্রে আরও একটি উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব বাজেটে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, দেশে আর্থিক সংস্থার এসইজেড (সেজ) তৈরি হবে। সেখান থেকে বিদেশি ব্যাঙ্ক, বিমা সংস্থা-সহ বিভিন্ন বিদেশি লগ্নিকারীরা সরাসরি শেয়ার এবং পণ্য বাজারে বিদেশি মুদ্রায় লগ্নি করতে পারবেন। কী ভাবে সেজটি পরিচালিত হবে, সেই সংক্রান্ত নির্দেশাবলি খুব শীঘ্রই ঘোষণা করে হবে বলে জানান তিনি। সেজটি স্থাপন করা হবে গুজরাতে। ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসই)-এর মুখপাত্র অরিন্দম সাহা জানান, “ওই সেজ-এ স্টক এক্সচেঞ্জ চালু করার উদ্দেশ্যে এনএসই অতি সম্প্রতি গুজরাত সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন