হঠাৎ বেরিয়ে পড়লে মনমতো আস্তানার খোঁজ এ বার রাজ্যেও

দরকারি জিনিসপত্র কাঁধের ব্যাগে পুরেই যাঁরা বেড়াতে ভালোবাসেন, সেই ‘ব্যাকপ্যাকার্স’-দের মাথা গোঁজার ঠিকানা ভারতে তথৈবচ। যেমন তেমন ঘর। পরিচ্ছন্নতার অভাবের মতোই ঘাটতি আধুনিক পরিষেবাতেও। সেই অভাবকেই পুঁজি করে ব্যাকপ্যাকার্স-দের জন্য নতুন ধরনের হস্টেল চালুর ব্যবসায় নেমে পড়েছেন ম্যানেজমেন্ট এবং আইআইটি-র সাত পড়ুয়া। সব কিছু ঠিকঠাক চললে আগামী দিনে তাঁদের এই নতুন ধরনের হস্টেল ‘জস্টেল’-এর মানচিত্রে ঠাঁই পাবে কলকাতা, দার্জিলিঙের মতো এ রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলিও।

Advertisement

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৪ ০২:০৮
Share:

দরকারি জিনিসপত্র কাঁধের ব্যাগে পুরেই যাঁরা বেড়াতে ভালোবাসেন, সেই ‘ব্যাকপ্যাকার্স’-দের মাথা গোঁজার ঠিকানা ভারতে তথৈবচ। যেমন তেমন ঘর। পরিচ্ছন্নতার অভাবের মতোই ঘাটতি আধুনিক পরিষেবাতেও। সেই অভাবকেই পুঁজি করে ব্যাকপ্যাকার্স-দের জন্য নতুন ধরনের হস্টেল চালুর ব্যবসায় নেমে পড়েছেন ম্যানেজমেন্ট এবং আইআইটি-র সাত পড়ুয়া। সব কিছু ঠিকঠাক চললে আগামী দিনে তাঁদের এই নতুন ধরনের হস্টেল ‘জস্টেল’-এর মানচিত্রে ঠাঁই পাবে কলকাতা, দার্জিলিঙের মতো এ রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলিও।

Advertisement

আপাতত রাজস্থানের যোধপুর ও জয়পুরে দুটি জস্টেল চালু করা সাত জনের ওই দলে আইআইএম-কলকাতার পড়ুয়া পবন নন্দ, অখিল মালিক, ধরমবীর সিংহ, তরুণ তেওয়ারির সঙ্গী আইআইটি-বিএইচইউ-র অভিষেক ভুত্রা, চেতন চহ্বান। তাঁদের সপ্তম সঙ্গী সিদ্ধার্থ জঙ্ঘু মুম্বইয়ে উপদেষ্টা সংস্থা জেপি মর্গ্যানে কর্মরত। অভিষেক ও চেতন পুরোদমে জস্টেল-এর দায়িত্বে রয়েছেন। পেশাদার পাঠ্যক্রম শেষ করে সহজেই ঝাঁ চকচকে বহুজাতিক সংস্থায় চাকরির আকর্ষণ ছিলই। কিন্তু তাঁদের কাছে এই ব্যবসার হাতছানি অনেক বেশি বলেই জানাচ্ছেন পবন। পড়ার পাঠ চুকিয়ে তাঁরাও দেশ জুড়ে পুরোদস্তুর এই জস্টেল চেন খোলার ব্যবসায় যোগ দেবেন। ক্যাম্পাস ইন্টারভিউতেও আর পা রাখবেন না।

কেন চাকরির চেয়ে ব্যবসা টানল তাঁদের? যদি বা তা করতেই হয়, তা হলেও তো আর পাঁচটা ব্যবসা রয়েছে? তাঁদের দাবি, সাবধানী হিসেবেও ভারতের ব্যাকপ্যাকার্স-দের খাওয়া-বেড়ানো বাদ দিয়ে শুধুমাত্র থাকার ব্যবসার অঙ্কটা বছরে প্রায় ১২০০ কোটি টাকার। এই বাজার বাড়ছে প্রায় ১৫% হারে। এর সঙ্গে রয়েছে পেশাদার পড়াশোনার ক্ষেত্রে তাঁদের নিজেদের হস্টেলে থাকার অভিজ্ঞতা। সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ব্যাপারেও একটা ধারণা তাঁদের পরিকল্পনা রূপায়ণে সাহায্য করেছে। জস্টেল-এ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডর্মিটরি, সাধারণ রান্নাঘর, টিভি-ইন্টারনেট পরিষেবার মতো আধুনিক পরিষেবা-সহ থাকতে ৫০০ টাকারও কম খরচ হবে বলেই দাবি তাঁদের।

Advertisement

সাধারণ ভাবে যে-সব বিদেশি ব্যাকপ্যাকার্স ভারতে বা কলকাতায় আসেন, তাঁদের অধিকাংশই কয়েক মাসের লম্বা ছুটিতে নানা কারণে এ দেশে আসেন। কেউ নিছক ভারতীয় সংস্কৃতি ও সমাজের সঙ্গে পরিচিত হতে, কেউ বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার জন্য কাজ করতে। কিন্তু তাঁদের থাকার জায়গা নিজেদেরই সাধারণত ঠিক করতে হয়। হয় ছোটখাটো হস্টেল, বা হোটেলে থাকেন তাঁরা। সরকারি কিছু হস্টেল থাকলেও সেগুলির অবস্থা তথৈবচ।

কলকাতায় ব্যাকপ্যাকার্সদের অন্যতম ঠিকানা সদর স্ট্রিট। ডেনমার্ক থেকে আসা দুই বন্ধু ক্রিস্টোফার ও নীলস জানালেন, সেখানকার এক হোটেলে ঘর ভাগ করে থাকতে তাঁদের মাথাপিছু খরচ হয়েছে ১৫০ টাকা করে। দক্ষিণ ভারত ঘুরে দার্জিলিং যাওয়ার পথে কয়েক দিন কলকাতায় কটিয়ে গেলেন তাঁরা। হোটেলের ঘর তথৈবচ। হেসে দেখালেন, ফরসা হাতে অসংখ্য মশার কামড়ের দাগ। জস্টেল-এর আধুনিক পরিকাঠামো তাঁদের মতো ব্যাকপ্যাকার্সদের আগ্রহী করবে বলেই ইঙ্গিত দিলেন তাঁরা।

আর সেই চাহিদাকেই পুঁজি করে আগামী ১২ মাসে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ৮টি এ ধরনের নতুন জস্টেল চালু করতে চান পবনরা। এর মধ্যে অন্যতম বারাণসী। পরবর্তী ধাপে জস্টেল-এর দরজা খুলবে পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও। সেই সূত্রে আসবে দার্জিলিং, গুয়াহাটির মতো শহর। আর যেহেতু পূর্ব বা উত্তর-পূর্র্বাঞ্চলে যাওয়ার আগে অধিকাংশ ভ্রমণপিপাসুই কলকাতাকে ছুঁয়ে যান, তাই এই শহরেও বড় একটি জস্টেল খুলতে চান পবনরা।

গত সাত মাসে জস্টেল-এ প্রায় তিন হাজার ব্যাকপ্যাকার্স ইতিমধ্যেই ঠাঁই নিয়েছেন। ব্যবসা না-লাভ-না-ক্ষতির পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন ব্যবসায়িক পরিকল্পনার প্রতিযোগিতা জিতেছে জস্টেল-এর ভাবনা।

একই সঙ্গে অবশ্য ছোট সফর, বিশেষ করে ট্রেকিং-এরও ব্যবস্থাও করে থাকেন ওঁরা। যদিও সেটা তাঁদের ব্যবসার মূল লক্ষ্য নয় বলেই দাবি তাঁদের। জস্টেল-এর প্রচার বাড়াতেই এ ধরনের ছুটকো কর্মসূচির ভাবনা। আইআইএম-কলকাতার ৫০ জন পড়ুয়াকে নিয়ে সম্প্রতি সিকিমে ট্রেকিং করেছেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement