সুখপাঠ্য নতুন অনুবাদ

সাহিত্য, ভাষা আর অভিধান— তিনটি গুচ্ছে লেখাগুলিকে সাজিয়েছেন সুভাষ ভট্টাচার্য। অভিধান রচয়িতাদের কথা তৃতীয় অধ্যায়ে রেখেছেন, একটি রচনা যেমন ‘অসাধ্যসাধক শব্দজীবী’। অসাধ্যসাধকই ছিলেন বটে তাঁরা... হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস, যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

ভাষা ও সাহিত্যের তিন প্রসঙ্গ
সুভাষ ভট্টাচার্য
২৫০.০০
সিগনেট প্রেস

Advertisement

সাহিত্য, ভাষা আর অভিধান— তিনটি গুচ্ছে লেখাগুলিকে সাজিয়েছেন সুভাষ ভট্টাচার্য। অভিধান রচয়িতাদের কথা তৃতীয় অধ্যায়ে রেখেছেন, একটি রচনা যেমন ‘অসাধ্যসাধক শব্দজীবী’। অসাধ্যসাধকই ছিলেন বটে তাঁরা... হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস, যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি। সাধারণত অভিধান, বিশেষত বড় অভিধান কোনও ব্যক্তির একার কাজ হতে পারে না, তাতে অসঙ্গতি ঢুকে পড়ে, অসম্পূর্ণ থেকে যায়, দলগত ভাবে কাজ না করলে সাফল্য আসে না। অথচ এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছিলেন এঁরা। ত্রুটিবিচ্যুতি অবশ্যই থাকে, কিন্তু ‘‘একজন মানুষ সম্পূর্ণ একা এমন সুবিপুল একটি অভিধান রচনা করেছেন যার শব্দসংখ্যা, ব্যুৎপত্তি-নির্দেশ, অর্থের বিবৃতি, প্রয়োগবাক্যের বিপুলতা অন্য সব অভিধানকে ছাড়িয়ে যায় বহুদূর।’’ মনে করেন সুভাষবাবু, ‘‘এর গুণাগুণ আর উপযোগিতা যে বিস্ময়কর তা কি অস্বীকার করা যায়?’’ প্রথম অধ্যায়ে সাহিত্যের আলোচনায় বাল্মীকি-রামায়ণ, রবীন্দ্রনাথ থেকে মিহির সেনগুপ্তের বরিশালের বাখোয়াজির পাশাপাশি আছে কবি অরুণ মিত্রের উপন্যাস ‘শিকড় যদি চেনা যায়’ নিয়ে আলোচনাও: ‘‘মূল্যহীন উপন্যাসের ভিড়ে অরুণ মিত্রের এই অসামান্য উপন্যাসটি যদি হারিয়ে যায় বা বিস্মৃত হয়, তবে সে হবে গভীর আক্ষেপের বিষয়।’’ ভাষা নিয়ে আলোচনাদি দ্বিতীয় অধ্যায়ে, তাতে ‘শিষ্টাচারের ভাষা’ নিয়ে লিখছেন ‘‘আমাদের সৌজন্য ও শিষ্টাচার প্রকাশের ভাষা ও ভঙ্গি অন্যরকম। তাতে আন্তরিকতা আছে, শুকনো পোশাকি কথার ব্যবহার তেমন হয় না।’’

Advertisement

প্রবন্ধসংগ্রহ
গোপা দত্ত ভৌমিক
৪৫০.০০
এবং মুশায়েরা

উনিশ শতকে অন্তঃপুরিকারা তাঁদের আত্মকথা লিখেছেন কখনও নিজে কলম ধরে, কখনও কোনও আত্মীয় লিখে দিয়েছেন শুনে শুনে, তবু তাঁদের আত্মকথার বিচিত্র কণ্ঠস্বর থেকে কী ভাবে তৈরি হতে থাকে সামাজিক ইতিহাসের পাঠ, তারই খোঁজ এ বইয়ের একাধিক নিবন্ধে। সেই অন্তঃপুরের ইতিহাসই তিনি আবার খুঁজেছেন আশাপূর্ণা-র প্রথম প্রতিশ্রুতি উপন্যাসে, লিখছেন ‘‘অগ্রগতি ও পিছুটান সমেত একটি গোটা যুগের ইতিহাস একটি গৃহবধূর জীবনদর্পণে প্রতিফলিত...।’’ তবে যাবতীয় প্রবন্ধ কোনও একমুখী অভিপ্রায় থেকে গ্রন্থিত হয়নি, আর সেখানেই এ-বইটির শক্তি। সাহিত্যের বিপুল ভাণ্ডার থেকে নির্বাচিত বিষয়ের পাঠ লেখিকার স্পষ্ট ভাষণ, স্বচ্ছ সমাজবীক্ষণ, সময়ের প্রতি দায় ও লাবণ্যময় গদ্যের সরস ভাষ্যে হয়ে উঠেছে অভিপ্রেত বিশ্লেষণ, যে ধরনের বিশ্লেষণ ক্রমশই বিরল প্রবন্ধসাহিত্যে। প্রতিষ্ঠিতদের পাশাপাশি ঠাঁই পেয়েছেন অনতিখ্যাত ও বিস্মৃতির ধুলোচাপা সাহিত্যিকেরাও। একই সঙ্গে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌-র লাল সালু, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস-এর চিলেকোঠার সেপাই, গৌরী ধর্মপাল-এর মালশ্রীর পঞ্চতন্ত্র, রামকুমার মুখোপাধ্যায়ের দুখে কেওড়া, এমনকী দিনেশচন্দ্র রায়ের ছোটগল্প পুনরাবিষ্কারের আলোচনা আমাদের বেঁচে-থাকার বহুস্বরকেই চিনিয়ে দেয়। নিজের রচনা-প্রক্রিয়ার কথাও শুরুতেই জানিয়েছেন লেখিকা: ‘‘অধিকাংশ লেখা হয়েছে এমন একটা সময় যখন সাহিত্যের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল গোপন প্রেমের মতো।’’

আমার জীবনের আদিকাণ্ড/ এক চিত্রিত কাহিনি
মোহনদাস করমচন্দ গান্ধী। অনু: আশীষ লাহিড়ী
১৯৫.০০
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস

‘‘প্রথাগত কোনো শিক্ষা ছিল না তাঁর, কেবল অভিজ্ঞতার শিক্ষাটুকু ছাড়া। বড়োজোর গুজরাতি ইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণি অবধি পড়েছিলেন। ইতিহাস আর ভূগোল কিছুই জানতেন না, কিন্তু ব্যাবহারিক কাজকর্মে প্রচুর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন।’’ বাবার কথা লিখছেন মহাত্মা গাঁধী, তাঁর আত্মজীবনীর সূচনায়। কথাগুলি পরিচিত, কিন্তু অনুবাদটি সাম্প্রতিক। গাঁধীজির জীবৎকালে তাঁর লেখার উপর ভিত্তি করেই মহাদেব দেশাই অল্পবয়সি পাঠকদের জন্য তৈরি করে দিয়েছিলেন মাই আর্লি লাইফ (অক্সফোর্ড, ১৯৩২) বইটি। ললিতা জ়াকারিয়ার টীকা-সহ তারই সচিত্র নবসংস্করণ প্রকাশিত হয় ২০১২-য়। এ বার আশীষ লাহিড়ীর অনুবাদে তা বাংলাভাষী পাঠকের হাতে এল, সঙ্গে আছে সৌরভ চট্টোপাধ্যায়ের অনেক রেখাচিত্র। অনুবাদক তাঁর নিবেদনে লিখেছেন, অল্পবয়সিদের জন্য বলেই এই অনুবাদের প্রথম শর্ত— ‘‘ভাষা হবে একেবারে ঘরোয়া, মুখের ভাষার অনুসারী। তাতে থাকবে চাপা উইট। জটিল শব্দ যতদূর সম্ভব পরিত্যাজ্য। এবং সর্বোপরি, গান্ধীজির নিজস্ব জীবনদর্শন, যা তাঁর ভাষাব্যবহারেরও দর্শন, তা দ্ব্যর্থহীনভাবে ওতপ্রোত হয়ে থাকবে সে-ভাষায়।’’ আশীষবাবু দক্ষ অনুবাদক, এর আগেও নানা গুরুত্বপূর্ণ বই তিনি বাংলাভাষী পাঠকের হাতের নাগালে এনে দিয়েছেন। এ বারে তাঁর সাফল্য আরও উল্লেখযোগ্য, কারণ এই কাজটি নবীন প্রজন্মের জন্য। এবং তারা যে এই বই এক টানে শেষ করতে কোথাও হোঁচট খাবে না, তা বলাই যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন