অনুভূতির গহনে

কাফকার ‘‘আমি খুঁজে পাই না, আমি খুঁজি’’— এই বাক্যটির উপর ভর করে দাঁড়িয়ে যেন এ-বইয়ের লেখাগুলি। আর পড়ে যেতে যেতে এটাও টের পাওয়া যায়, মানবতার যে বোধ আদতে আধুনিকতারই বোধ— তাই বুনতে থাকেন লেখক তাঁর এক-একটি রচনায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৮ ০০:২৮
Share:

অনুভূতির গহনে

Advertisement

হে অনন্ত নক্ষত্রবীথি

চিন্ময় গুহ

Advertisement

২০০.০০

সিগনেট প্রেস

বৈশাখের কোনও এক তপ্ত মধ্যাহ্নে কোনও এক অজানা বেদনা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের কাছে ছুটে গিয়েছেন রানী চন্দ। ‘‘কবি তাঁকে দেখিয়েছেন একটি সদ্য-আঁকা ছবি, নীল-সবুজ-সাদা রঙের ঢেউ, যেন সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ। বলেছেন, মানুষের বেলায়ও তাই, কেবলই তরঙ্গ। তরঙ্গ আছে বলেই সে বেঁচে আছে।’’ লিখেছেন চিন্ময় গুহ, গুরুদেব ও আলাপচারি রবীন্দ্রনাথ— রানী চন্দের বই দু’টি নিয়ে একটি লেখায়। কাফকার ‘‘আমি খুঁজে পাই না, আমি খুঁজি’’— এই বাক্যটির উপর ভর করে দাঁড়িয়ে যেন এ-বইয়ের লেখাগুলি। আর পড়ে যেতে যেতে এটাও টের পাওয়া যায়, মানবতার যে বোধ আদতে আধুনিকতারই বোধ— তাই বুনতে থাকেন লেখক তাঁর এক-একটি রচনায়। সেই প্রতিটি রচনায় আবার এক আন্তর্জাতিকতার বোধও গমগম করে, কিন্তু কখনও তা শিকড় হারায় না। কাফকা নিয়ে লিখছেন ‘‘সাধারণ তুচ্ছাতিতুচ্ছ মানুষ। নামহীন, পার্শ্বরেখায়িত ‘না-মানুষ’। প্রধান চরিত্রটিও নামের আদ্যক্ষর শুধু। একটি অক্ষর, তার অনন্ত শূন্যতা নিয়ে।... সেই শূন্যতা-বিন্দুকে নির্মম ও নিরপেক্ষভাবে মূর্ত করতে গিয়ে কাফকা হয়ে উঠেছেন কথাশিল্পের এক এক্সপ্রেশনিস্ট... ।’’ ঔপন্যাসিক কিংবা কবিদের পাশাপাশি চলচ্চিত্রকার ও চিত্রকরেরাও ‘‘বারবার আমার ঘুমকে আলোড়িত করেছেন। অক্ষররেখা দিয়ে আমি তাঁদের অনুরণনকে ছুঁতে চেয়েছি।’’ জানিয়েছেন লেখক। এ-বইয়ের সঙ্গে তাঁর আগের বই ঘুমের দরজা ঠেলে-র সুরের মিল থাকলেও এটি স্বতন্ত্রই। জীবনের বাঁকে বাঁকে সৃষ্টির যে উজ্জ্বল অনুষঙ্গ আর অফুরান মুহূর্ত তৈরি হয়েই চলেছে প্রতিনিয়ত, সে সব থেকেই রস টেনে এনে সময়ের দেওয়ালে প্রোথিত করে দেন তিনি। শিল্পের ইতিহাসকে গদ্যের অন্তঃশরীর দিয়ে ছুঁতে চান, ফলে তাঁর প্রবন্ধের বেড়া ভেঙে ঢুকে পড়ে কবিতার নির্যাস। মাতিস সম্পর্কে লিখছেন ‘‘ক্রমশ রংহীন এই পৃথিবীতে হাড়ের ভেতর মৃদু কাঁপুনি দিয়ে শীত করে। চারপাশে এক হেমন্ত নিঃস্বতা। তার মধ্যে একা একা হাঁটতে হাঁটতে আমি মাতিসের রঙের বিস্ফোরণ খুঁজি।’’ আবার ‘হিরোশিমা মনামুর’-খ্যাত আল্যাঁ রেনে কী ভাবে ‘‘চিত্রশিল্প আর সাহিত্য থেকে আহরণ করে নিলেন নতুন চিত্রভাষার রসদ।’’— লিখেছেন তাও। বইটি যেন এক গহন অনুভূতির দেশে, তারাভরা আকাশের তলায় দাঁড় করিয়ে দেয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন