দুই কেন্দ্রের টানাপড়েন

বাংলায় নবদ্বীপ থেকে ভক্তি আন্দোলনের সূচনা করেন চৈতন্যদেব। হিতেশরঞ্জন লিখছেন, ‘‘ভক্ত তাঁর নিখাদ প্রেমভক্তি শুধুমাত্র কৃষ্ণকে সমর্পণ করবেন, এই কৃষ্ণভক্তির দ্বারা ভক্তি আন্দোলন প্রণোদিত হয়েছিল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৯ ০০:২৬
Share:

বাংলার ভক্তি আন্দোলনে পরিবর্তনের ধারা
হিতেশরঞ্জন সান্যাল/ অনুবাদ: মহুয়া দাশগুপ্ত
১৯৫.০০
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস

Advertisement

ত্রয়োদশ থেকে ষোড়শ শতকের মধ্যে ভক্তি আন্দোলন প্রায় সমগ্র ভারতকে আলোড়িত করেছিল। পৌরাণিক গোঁড়া ব্রাহ্মণ্যবাদের উপযুক্ত বিকল্প হিসেবেই ভক্তিধর্মের উদ্ভব ও বিকাশ, এবং নানা প্রান্তিক সাধনার ধারাকে আত্মস্থ করার ফলে তা যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তা প্রতিষ্ঠা পায় আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যকে গুরুত্ব দিয়েই। বাংলায় নবদ্বীপ থেকে ভক্তি আন্দোলনের সূচনা করেন চৈতন্যদেব। হিতেশরঞ্জন লিখছেন, ‘‘ভক্ত তাঁর নিখাদ প্রেমভক্তি শুধুমাত্র কৃষ্ণকে সমর্পণ করবেন, এই কৃষ্ণভক্তির দ্বারা ভক্তি আন্দোলন প্রণোদিত হয়েছিল। চৈতন্যদেব নিজে কৃষ্ণের সাথে মিলনের আকাঙ্ক্ষায় উদ্‌গ্রীব থাকতেন। কিন্তু বাংলার ভক্তরা চৈতন্যদেবকে শুধু একাগ্রচিত্ত কৃষ্ণভক্তির প্রতিরূপ হিসেবে নয়, তাঁরা তাঁকে স্বয়ং কৃষ্ণ হিসেবে দেখলেন।’’ তাঁর জীবদ্দশাতেই বাংলায় তাঁর মূর্তিপূজা শুরু হয়ে যায়। নিত্যানন্দ, অদ্বৈত, গদাধর দাসের মতো চৈতন্যদেবের আদি শিষ্যরা বাংলার বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু ভক্তি আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত তাত্ত্বিক ও আধ্যাত্মিক অনুশীলনের জন্য বৃন্দাবনে একটি কেন্দ্র গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন চৈতন্যদেব, পাঠিয়েছিলেন রূপ-সনাতনের মতো শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত কর্নাটকি ব্রাহ্মণকে। এ ভাবেই আস্তে আস্তে গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের দুই কেন্দ্র— গৌড়মণ্ডল ও ব্রজমণ্ডলের মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শ্রীজীব গোস্বামী তাঁর তিন শিষ্য শ্রীনিবাস, নরোত্তম ও শ্যামানন্দকে বৃন্দাবন থেকে বাংলায় পাঠান গোস্বামীমত প্রচারের দায়িত্ব দিয়ে। নরোত্তম বাংলার মতো করে সেই মত ও পথে সামান্য পরিবর্তন সাধন করেন। ধাপে ধাপে এই পরিবর্তনের সংক্ষিপ্ত অথচ সুগভীর আলোচনা করেছেন অকালপ্রয়াত গবেষক হিতেশরঞ্জন সান্যাল (১৯৪০-৮৮)। তাঁর ইংরেজি লেখাটি সেন্টার ফর স্টাডিজ় ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল, এ বার অক্সফোর্ড মূল ইংরেজি বইটি প্রকাশের সঙ্গে বাংলা অনুবাদগ্রন্থটিও আলাদা করে প্রকাশ করেছে। সেন্টারের নির্বাচিত বক্তৃতা ও মনোগ্রাফ দুই ভাষাতেই গ্রন্থমালা আকারে প্রকাশ করছে অক্সফোর্ড। এই ‘সমাজবিজ্ঞান পুস্তকমালা’র ভূমিকা লিখেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও রোসিঙ্কা চৌধুরী, আর হিতেশরঞ্জনের বইটির উপক্রমণিকা লিখেছেন গৌতম ভদ্র। অনুবাদ সাবলীল, বিষয়ের সঙ্গে এগিয়ে যেতে সমস্যা হয় না। সূত্রনির্দেশ যত্ন করে মেলানো হয়েছে, কয়েকটি সংশোধন থেকে তা স্পষ্ট। ছোট ছোট পুস্তিকাগুলি পথিকৃৎ চিন্তকদের কাজের সঙ্গে পাঠকের সম্যক পরিচয় ঘটিয়ে দিতে পারবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন