book review

জনসংখ্যাবৃদ্ধি ও ধর্মের সম্পর্ক কী?

অস্বীকার করার উপায় নেই, এই প্রশ্নগুলো ভারতীয় রাজনীতিতে এখন যতখানি তাৎপর্যপূর্ণ, এর আগে কখনও তা ছিল না।

Advertisement

বীতশোক মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৪৩
Share:

লেখক জানিয়েছেন, প্রায় পঁচিশ বছর ধরে তিনি এই বইটা প্রকাশ করবেন বলে ভাবছিলেন। কিন্তু, প্রতি বারই কোনও না কোনও নতুন পরিসংখ্যান হাতে আসছিল, এই বইয়ে যার বিশ্লেষণ থাকা প্রয়োজন। ফলে, পিছিয়ে যাচ্ছিল বই প্রকাশ। কথাটা এই বইয়ের প্রতিটি পাতায় অনুভব করা যায়। বহু বছরের খাটুনির ছাপের পাশাপাশিই থেকে গিয়েছে দেরি হয়ে যাওয়ার দাগও। লেখক এস ওয়াই কুরেশি এই বইয়ে একটা প্রশ্নকেই ধরতে চেয়েছেন— সত্যিই কি মুসলমানরা খুব বেশি সন্তান উৎপাদন করেন? তাঁদের ধর্মের কারণেই কি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অন্য সম্প্রদায়ের চেয়ে বেশি?

Advertisement

অস্বীকার করার উপায় নেই, এই প্রশ্নগুলো ভারতীয় রাজনীতিতে এখন যতখানি তাৎপর্যপূর্ণ, এর আগে কখনও তা ছিল না। উগ্র হিন্দুত্বের রাজনীতি মুসলমানদের জনসংখ্যাবৃদ্ধির প্রশ্নটিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুর মনে ভীতি তৈরির কাজে ব্যবহার করছে মারাত্মক ভাবে। কিন্তু, পাশাপাশি এই কথাটাও সত্যি যে, মুসলমান জনসংখ্যা প্রসঙ্গে গত কয়েক বছরে যত সদর্থক আলোচনা হয়েছে, তা-ও কম নয়। আজ গণপরিসরে কেউ একটু খুঁজলেই দেখতে পাবেন, অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মতো মুসলমানদের মধ্যেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমছে— সেই হার ক্রমশ রিপ্লেসমেন্ট রেট-এর কাছাকাছি আসছে। এটাও জানা যাবে যে, ধর্মের সঙ্গে নয়, বরং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের সঙ্গে প্রকৃষ্ট যোগ রয়েছে শিক্ষার, আর্থিক উন্নতির, কর্মসংস্থানের, মহিলাদের ক্ষমতায়নের। প্রতিটি প্রশ্নেই ভারতে মুসলমানরা সম্প্রদায়গত ভাবে সবচেয়ে পশ্চাৎপদ। ফলে, এই সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ে যদি প্রশ্ন ওঠে, তবে আঙুল তুলতে হবে স্বাধীন ভারতীয় রাষ্ট্রের দিকে, জনসংখ্যার এক অংশের কাছে উন্নয়ন পৌঁছে দিতে না পারার জন্য। কুরেশি তাঁর বইয়ে এই সব প্রসঙ্গ এনেছেন, চমৎকার ভাবে যুক্তি গুছিয়ে দিয়েছেন— কিন্তু, তার মধ্যে নতুনত্ব নেই। অবশ্য, অমর্ত্য সেনের একটা কথা মনে রাখা ভাল— যত ক্ষণ না পরিস্থিতি পাল্টায়, তত ক্ষণ অবধি এক কথা বলে যেতে হবে। বলা প্রয়োজন, কুরেশি যে ভাবে পরিসংখ্যানকে সাধারণ মানুষের নাগালে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন, তা প্রশংসনীয়। বহু কথা বলেও যা বোঝানো যায় না, ঠিক ভাবে পেশ করা কিছু সংখ্যা সেই ছবিটা চোখের সামনে তুলে ধরতে পারে।

এই বইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হল, যেখানে কুরেশি ইসলামের কোষগ্রন্থগুলি থেকে তুলে এনেছেন একের পর এক নির্দেশিকা, বয়ান। দেখতে চেয়েছেন, সত্যিই কি ইসলামে জন্মনিয়ন্ত্রণের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে? বিভিন্ন ইসলামিক পণ্ডিত এই বয়ানের ব্যাখ্যা করেছেন কী ভাবে? যাঁরা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করেন, তাঁদের বলে খুব লাভ হবে বলে বিশ্বাস হয় না— কিন্তু, সাধারণ মানুষের কাছে যদি এই ব্যাখ্যা পৌঁছে দেওয়া যায়, তবে হয়তো মন বদলাতে পারে খানিক। কুরেশি দেখিয়েছেন, ধোঁয়াশা আছে অনেক জায়গায়, জন্মনিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বারণও আছে, আবার জন্মনিয়ন্ত্রণের পক্ষে স্পষ্ট সওয়ালও আছে। বহুমতকে সমদৃষ্টিতে প্রতিফলিত করার মধ্যে এক বিরল সততা রয়েছে, যা প্রশংসনীয়।

Advertisement

দ্য পপুলেশন মিথ: ইসলাম, ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যান্ড পলিটিক্স ইন ইন্ডিয়া
এস ওয়াই কুরেশি
৪৯৯.০০
হার্পার কলিন্স

তবে, একটি চেনা ফাঁদেও পা দিয়েছেন তিনি। মুসলমানদের মধ্যে বহুবিবাহ প্রথাই তাঁদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির বর্ধিত হারের কারণ, এই চলতি বিশ্বাসটাকে ভাঙতে যুক্তির অবতারণা করেছেন, প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে, মুসলমানদের মধ্যে বহুবিবাহ সর্বজনীন ভাবে প্রচলিত রীতি নয়। এই যুক্তিক্রম নিঃসন্দেহে জরুরি। কিন্তু, খুব সাদামাটা ‘কমন সেন্স’ থেকে একটা প্রশ্ন মাথায় আসে— সন্তান ধারণ তো করেন মহিলারা; অতএব, তাঁদের যখন এক জনই স্বামী, ফলে সেই স্বামীর কতগুলি বিবাহ, সেটা অবান্তর তথ্য, তাই না? মহিলা তাঁর জীবৎকালে যে ক’টি সন্তানের জন্ম দেওয়ার, তাই দেবেন। এই সাধারণ যুক্তিটি মানুষের মাথায় ঢোকানো জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন