আজও পূজিত হন ভাস্করের শালগ্রাম

কী পরিস্থিতিতে মরাঠা সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিতের সঙ্গে আলিবর্দির সংঘাত শুরু, বর্গিরা ঘাঁটি তৈরি করল ইন্দ্রাণীনগরে, সে কথা দিয়েই বইয়ের সূচনা। মির হবিবের নেতৃত্বে রাজধানী মুর্শিদাবাদে পর্যন্ত পৌঁছে গেল বর্গিরা, আক্রান্ত হল বাণিজ্যকেন্দ্র হুগলিও।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:০৫
Share:

বঙ্গে বর্গিহাঙ্গামা/ ইতিহাস ও কিংবদন্তি
স্বপনকুমার ঠাকুর
৪০০.০০
কারিগর

Advertisement

বাংলা বিহার ওড়িশার মসনদে তখন নবাব আলিবর্দি খান। ১৭৪২ খ্রিস্টাব্দে ধেয়ে এল ভয়ঙ্কর বর্গি আক্রমণ। প্রায় এক দশক ধরে বাংলায় চলেছিল তাদের ব্যাপক লুটতরাজ, অত্যাচার, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড। গ্রামীণ লোককথায় আজও তার আভাস মেলে। নিবিড় ক্ষেত্রানুসন্ধানে স্বপনকুমার ঠাকুর উদ্ধার করেছেন লোককাহিনি আর ইতিহাসের পাথুরে প্রমাণ।

কী পরিস্থিতিতে মরাঠা সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিতের সঙ্গে আলিবর্দির সংঘাত শুরু, বর্গিরা ঘাঁটি তৈরি করল ইন্দ্রাণীনগরে, সে কথা দিয়েই বইয়ের সূচনা। মির হবিবের নেতৃত্বে রাজধানী মুর্শিদাবাদে পর্যন্ত পৌঁছে গেল বর্গিরা, আক্রান্ত হল বাণিজ্যকেন্দ্র হুগলিও। কারা এই বর্গি? তাদের নেতাই বা কারা ছিল, সে উত্তরও খুঁজেছেন লেখক। বাংলার প্রাচীন রাজবংশগুলির উপর বর্গি হানার ফল কী হয়েছিল? পুরুলিয়ার গড়পঞ্চকোট রাজ্য ধ্বংস হয়, বর্ধমানরাজ চিত্রসেন চলে আসেন বর্ধমান থেকে শ্যামনগর-কাউগাছি। নদিয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রাজ্যপাট স্থাপন করেন শিবনিবাসে। এমনকি কলকাতাতেও বর্গি ঠেকাতে কাটা হয় মরাঠা খাল। বাঁকুড়ার মল্লরাজত্বে বর্গিহানা আর সংশ্লিষ্ট নানা লোকশ্রুতি স্বাভাবিক ভাবেই গুরুত্ব পেয়েছে।

Advertisement

তবে এই বইয়ের সব থেকে উল্লেখযোগ্য অংশ নয় থেকে চতুর্দশ অধ্যায়। শুধু মানুষ নয়, দেবদেবীরাও কী ভাবে বর্গিদের হাতে নিগৃহীত হন, ক্ষেত্রসমীক্ষায় সে ইতিহাস উদ্ধার করেছেন গবেষক। বর্ধমানের কয়রাপুরের দেবী ত্রৈলোক্যতারিণী, আড়ংঘাটার যুগলকিশোর, বর্ধমানের কাঁকোড়া ও মাঝিগ্রামের শাকম্ভরীদেবী আজও বর্গি আক্রমণের স্মৃতি বহন করছেন। বর্ধমানের চাণ্ডুলি গ্রামে আজও পূজিত হচ্ছেন ভাস্কর পণ্ডিত প্রদত্ত নারায়ণশিলা। আবার মরাঠা সেনাদের অনেকে এই বাংলাতেই স্থায়ী ভাবে থেকে গিয়েছিলেন। ক্ষেত্রসমীক্ষাভিত্তিক আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চায় স্বপনকুমার ঠাকুরের বইটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।

লোকসংস্কৃতি গবেষণা ১
সম্পাদক: সনৎকুমার মিত্র
৫০০.০০
সাহিত্য প্রকাশ

অধ্যাপক সনৎকুমার মিত্রের ‘ড্রিম প্রজেক্ট’ ছিল ‘লোকসংস্কৃতি গবেষণা’ পত্রিকা, লিখেছেন পল্লব সেনগুপ্ত (‘মুখবন্ধের পরিবর্তে’)। ২৪ বছর ধরে এই ত্রৈমাসিক পত্রিকার ৮৭টি সংখ্যা প্রকাশ করতে পেরেছিলেন প্রয়াত লোকসংস্কৃতিবিদ সনৎকুমার মিত্র। দেড়শোরও বেশি লেখকের হাজারখানেকের উপর প্রবন্ধে তৈরি হয়ে উঠেছিল লোকসংস্কৃতির এক কোষগ্রন্থ। সংখ্যাগুলি আজ নিতান্তই দুর্লভ। সনৎবাবুর কন্যা মহুয়া মুখোপাধ্যায় এবং ছাত্র তথা গুরুসদয় সংগ্রহশালার কিউরেটর বিজন মণ্ডল যেমন পত্রিকাটি পুনঃপ্রকাশের ব্যবস্থা করেছেন, তেমনই শুরু করেছেন হারিয়ে যাওয়া সংখ্যাগুলির পুনর্মুদ্রণ। আলোচ্য প্রথম খণ্ডে সঙ্কলিত হয়েছে লোকসংস্কৃতি গবেষণা পত্রিকার প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের মোট ৮টি সংখ্যা। রয়েছে ২৪ বছরের সূচি। মূল ছবিগুলি অবশ্য এখানে অনুপস্থিত।

সংখ্যাগুলি দেখলেই বোঝা যায়, কতটা সমৃদ্ধ ছিল পত্রিকাটি। একটি সাধারণ সংখ্যার পরেই প্রকাশিত হয় গ্রাম-সমীক্ষা সংখ্যা, ডাইনী সংখ্যা, লোকসংস্কৃতিবিদ সংখ্যা, রবীন্দ্রনাথ ও লোকসংস্কৃতি সংখ্যা, ছৌ-নৃত্য সংখ্যা, লোকভাষা সংখ্যা, এবং আদিবাসী সংস্কৃতি সংখ্যা। দেখতে পাই, অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মেয়েলি ব্রত (১৩০৩ বঙ্গাব্দ) বইয়ের ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, ‘‘...যাহারা স্বদেশকে অন্তরের সহিত ভালবাসে তাহারা স্বদেশের সহিত সর্বতোভাবে অন্তরঙ্গরূপে পরিচিত হইতে চাহে এবং ছড়া, রূপকথা, ব্রতকথা প্রভৃতি ব্যতিরেকে সেই পরিচয় কখনো সম্পূর্ণতা লাভ করে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন