book review

জীবনযাপন সৃষ্টি করত কবিতার নানা মুহূর্ত

প্রসঙ্গত, নজরুলের এই সত্তার স্বীকৃতি রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সরোজিনী নায়ডুদের মতো ব্যক্তিত্বদের মন্তব্যেও। নবযুগ-এ মূলত প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠস্বর, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধাচারণ করেছেন তরুণ নজরুল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৪ ০৭:১৭
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

পদ্যের প্রভুর প্রতিঃ

Advertisement

শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে নিবেদিত কবিতাগুচ্ছ

সম্পাঃ সৌমিত্র মিত্র

Advertisement

২৫০.০০

দে’জ়

“এত ভালোবাসা পাননি কেউ, শক্তি যেমন পেয়েছিলেন; এত ভালোবাসেননি কেউ, শক্তি যেমন বেসেছিলেন।” শঙ্খ ঘোষের শোকলিপির এই বাক্যের যাথার্থ্য বইটির প্রতিটি লেখায় ছড়িয়ে রয়েছে। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের বন্ধু তারাপদ রায় লিখেছিলেন, “এদিকে এই ভর সন্ধেয়/ একটা মোমবাতি জ্বেলে বারান্দায় মাদুরের ওপরে/ আমরা গেলাস-টেলাস ধুয়ে ঠায় বসে আছি;/ শালপাতায় নুন-শসা, তেলেভাজা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।/ এনামেলের কলাইচটা বাটিতে/ এই অল্প একটু সরপুঁটি মাছের সরষে-ঝাল—/ আর কতক্ষণ ধরে রাখা যাবে।” বন্ধুর জন্য এই আকুল অপেক্ষার কোনও ফল নেই, সেই সত্য তা বলে অপেক্ষাকে ছোট করতে পারে না। পূর্ণেন্দু পত্রীর লেখাতেও অকালবিচ্ছেদের আঘাতজনিত হাহাকার, “তোকে আমরা কী দিইনি, শক্তি?” না-থাকা যে শুধু বেদনার জন্ম দেয় তা তো নয়, তার থেকেই সূচনা হতে পারে অন্য রকম থাকারও। “আজ আমি আপনাকে অনুভব করলাম গর্ভে আসা/ সন্তানের অস্তিত্বকে যেমন অনুভব করেন গর্ভবতী মাতা,” শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুসংবাদ শুনে নির্মলেন্দু গুণ যে থাকার অনুভূতি পেয়েছিলেন।

তবে এই কবিতাগুলিতে ব্যক্তি শক্তি চট্টোপাধ্যায় বা তাঁর স্বেচ্ছাচারী যাপন যে ভাবে ফিরে এসেছে বারংবার, তাঁর কবিতার অবিশ্বাস্য বহুমুখী ব্যাপ্তি ধরা পড়েছে তার চেয়ে কম। শক্তি চট্টোপাধ্যায় মানেই যে শুধু বেসামাল পদক্ষেপ নয়, মধ্যরাতের রাজপথ শাসন করা নয়, বরং তাঁর সেই অসংযত জীবনযাপন সৃষ্টি করত কবিতার মুহূর্ত, এ কথাটি শক্তি নিজেই উল্লেখ করেছেন বইয়ের শেষে সঙ্কলিত ১৯৮১ সালের একটি সাক্ষাৎকারে— “মদ্যপান আমার পদ্য লেখার খানিকটা সুরাহা করে। শরীরও নষ্ট করে, সময়ও নষ্ট করে, তবে পদ্য লিখতে সাহায্য করে। আগুন যদি পোড়ে তো একা পোড়ে না। অনেককে পোড়ায়, দুব্বো ঘাস-ও পুড়ে যায়। আমার এই মদ্যপানও অনেক আপন জনকে পীড়িত করে, কষ্ট দেয়। আমি বুঝিও।... তবে উপায় নেই, পদ্য লেখার জন্য আমার মনে হয় এসবের প্রয়োজন আছে।” কবিতা যে কোনও দৈব মুহূর্তের ফসল নয়, তা প্রতি দিন কবিকে সম্পূর্ণ নিংড়ে নেয়, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বাংলা কাব্যজগতে গজিয়ে-ওঠা অনেক ছোট ছোট ‘শক্তি চট্টোপাধ্যায়’ বুঝতে পারেননি। শক্তির নিজের কথায়, “পদ্য লিখতে গেলে আসলে আমার ভীষণ পরিশ্রম হয়। এক সময় একসঙ্গে অনেক পদ্য লিখতাম, কিন্তু একটার পরে আর একটায় যেতে সময় লাগত। একটা লেখার পর শুয়ে পড়তাম, পেরে উঠতুম না শারীরিক ভাবেই। ব্যাপারটা অদ্ভুত! পদ্য লেখার পর আমার মনে হয় কেমন যেন ফাঁকা হয়ে গেলুম, কোনো জোর পাই না।”

“এবার বসন্ত শুধু মৃত্যু দিয়ে গেল”, ১৯৯৫ সালে লিখেছিলেন রাহুল পুরকায়স্থ। কী আশ্চর্য, আরও ঊনত্রিশটা বসন্ত পেরিয়েও বাংলা কবিতায় অমোঘ ভাবে জীবিত শক্তি চট্টোপাধ্যায়।

কাজী নজরুল ইসলাম’স

জার্নালিজ়মঃ আ ক্রিটিক

সম্পাঃ অর্ক দেব

১২৯৯.০০

ব্লুমসবেরি

প্রাণতোষ চট্টোপাধ্যায়ের সাংবাদিক নজরুল, আবদুল আযীয আল আমানের ধূমকেতু’র নজরুল, মুহম্মদ নূরুল হুদার নজরুলের লাঙল— এমন দু’-চারটি কাজ বাদে কাজী নজরুল ইসলামের সাংবাদিক-সত্তা নিয়ে লেখাপত্র বা বই খুব একটা নজরে পড়ে না। কিন্তু কবির সাংবাদিক জীবন নবযুগ, ধূমকেতু এবং লাঙল, এই তিনটি পত্রিকাকে কেন্দ্র করে বিস্তৃত ছিল।

প্রসঙ্গত, নজরুলের এই সত্তার স্বীকৃতি রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সরোজিনী নায়ডুদের মতো ব্যক্তিত্বদের মন্তব্যেও। নবযুগ-এ মূলত প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠস্বর, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধাচারণ করেছেন তরুণ নজরুল। ডাক দিয়েছেন ‘ভাইকে ভাই বলিয়া’ ডাকার। সেই সঙ্গে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধেও কলমে শাণ দিয়েছেন নজরুল। পাশাপাশি, ‘কালির বদলে রক্তে ডুবিয়ে’ ধূমকেতু-তে প্রবন্ধগুলি লিখেছিলেন নজরুল। ডাক দিয়েছিলেন দেশের পূর্ণ স্বাধীনতারও। প্রসঙ্গত, এখানেই সম্পাদকীয় হিসাবে প্রকাশিত কবিতা ‘আনন্দময়ীর আগমনে’র জন্য নজরুলকে জেলে যেতে হয়। লাঙল শ্রমিক-প্রজা-স্বরাজ সম্প্রদায় এবং গণবাণী বঙ্গীয় কৃষক ও শ্রমিক দলের মুখপত্র ছিল। এই সব জায়গায় নজরুলের লেখাপত্রে কবিতার পাশাপাশি নিবন্ধে শ্রমিক-কৃষকের কণ্ঠস্বর, সম্প্রীতির স্বরটি বিশেষ ভাবে ফুটে উঠেছিল। বৃহত্তর পাঠকের কাছে সাংবাদিক নজরুলের কীর্তিগুলি এত দিন কার্যত আঁধারেই ছিল। এই জায়গা থেকেই সাংবাদিক নজরুলের প্রবন্ধগুলি ইংরেজিতে অনুবাদ করে আলো জ্বালার চেষ্টা করেছে বইটি। সুসম্পাদিত বইটিতে ভূমিকা অংশে সম্পাদক একটি দীর্ঘ প্রবন্ধে ভারতীয় সাংবাদিকতার ইতিহাসে কাজী নজরুল ইসলামের মূল কীর্তিগুলি কী, তা তথ্য ও তত্ত্বের আলোয় বুঝতে চেয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন