‘অবন কথা কইছে’

দেখো মনে সব থাকে। সেই ছেলেবেলা কবে কোন্‌কালে দেখেছি রাজেন মল্লিকের বাড়িতে নীলে সাদায় নকশা কাটা প্রকাণ্ড মাটির জালা, গা-ময় ফুটো, উপরে টানিয়ে রাখত।... মানুষের মনও তাই। স্মৃতির প্রকাণ্ড জালা, তাতে অনেক ফুটো।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৫ ০০:০১
Share:

দেখো মনে সব থাকে। সেই ছেলেবেলা কবে কোন্‌কালে দেখেছি রাজেন মল্লিকের বাড়িতে নীলে সাদায় নকশা কাটা প্রকাণ্ড মাটির জালা, গা-ময় ফুটো, উপরে টানিয়ে রাখত।... মানুষের মনও তাই। স্মৃতির প্রকাণ্ড জালা, তাতে অনেক ফুটো। সেই ফুটো দিয়ে স্মৃতি ঢুকছে আর বের হচ্ছে। জালা খুলে বসে আছি, কতক বেরিয়ে গেছে কতক ঢুকছে কতক রয়ে গেছে মনের ভিতর, ঠোকরাচ্ছে তো ঠোকরাচ্ছেই, এ না হলে হয় না আবার।’’

Advertisement

ঘরোয়া-র শেষে এই স্মৃতির ছবি কথক অবন ঠাকুরের। রানী চন্দের কলমে ধরে রাখা অবনীন্দ্রনাথের প্রথম স্মৃতিচিত্রণ ঘরোয়া (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), দ্বিতীয়টি জোড়াসাঁকোর ধারে (১৩৫১ ব.)। লীলা মজুমদার যেমন লিখেছিলেন, ‘‘ঘরোয়া’ হল রবীন্দ্রনাথদের বিষয়ে গল্প, অবনীন্দ্র সেখানে যেন কেবলমাত্র সূত্রধারের থেকে বড়ো ভূমিকা নিতে অনিচ্ছুক। ‘জোড়াসাঁকোর ধারে’ একান্ত নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনের কাহিনী, বাবা জ্যাঠা মা মাসি দাদা ভাইবোন চাকরবাকর পশুপাখি আর সবটাকে ঘিরে পাঁচ নম্বরের বাড়ির কোমল ছায়াখানি।’’ আর আপন কথা গ্রন্থাকারে প্রকাশ পায় ১৩৫৩ বঙ্গাব্দে, অবনীন্দ্রনাথ প্রয়াত হন ১৯৫১-য়। ঘরোয়া পড়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘অবন কথা কইছে আমি যেন শুনতে পাচ্ছি’। তিনটি স্মৃতিকথাই বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।

সুধাংশুশেখর মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় এ বার অবনীন্দ্রনাথের সমগ্র রচনা চার খণ্ডে প্রকাশিত হচ্ছে দে’জ পাবলিশিং থেকে। প্রথম খণ্ডটি প্রকাশিত হয়েছে (রচনাসংগ্রহ ১/ স্মৃতিকথা, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ৩৫০.০০), সেখানে তিনটি স্মৃতিকথার সঙ্গে সংযোজন অংশে আছে অবনীন্দ্রনাথের বিভিন্ন রচনা থেকে টুকরো টুকরো স্মৃতিচিত্রণ, আর কিছু প্রাসঙ্গিক চিঠি। উৎস-নির্দেশ ও সংশ্লিষ্ট তথ্যও দিয়েছেন সম্পাদক।

Advertisement

সংযোজন ১ অংশে বিশেষ করে নজরে পড়ে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্যর আশুতোষ, নাটোররাজ জগদিন্দ্রনাথ, হ্যাভেল, ওকাকুরা, রামানন্দের কথা। বিশেষ করে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে অবনীন্দ্রনাথের মন্তব্য: ‘রামানন্দবাবুর কল্যাণে আমাদের ছবি আজ দেশের ঘরে ঘরে। এই যে ইণ্ডিয়ান আর্টের বহুল প্রচার— এ এক তিনি ছাড়া আর কারো দ্বারা সম্ভব হত না।... তিনি ছাড়া... কালারড প্রিন্টের আজ এতখানি উন্নতি হত না, হাফটোনও নয়...।’

সংযোজন ২ অংশে আর এক আশ্চর্য স্মৃতিকাহিনি— বোন বিনয়িনীকে লেখা চিঠিতে: ‘সারনাথ অতি আশ্চর্য্য জায়গা... জায়গাটা প্রথম থেকেই আমার খুব চেনা চেনা বোধ হয়েছিল। আমার মনে হল যে মন্দিরের ধারে, কোন কুয়োতলায় আমার দোকান-ঘর ছিল, সেখানে বসে আমি মাটীর পুতুল আর পট বিক্রী করেছি।...’

চমৎকার মুদ্রণে, শোভন প্রকাশনায় অবনীন্দ্রনাথের রচনা নতুন করে মর্যাদা পেল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement