বইমেলায় উত্তমকুমারের শতবর্ষ স্মরণ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
থাকবে প্রেক্ষাগৃহ। সেখানেই তাঁর উপস্থিতি। না, তিনি একা আসছেন না। তাঁর সমসাময়িক এবং পরবর্তী প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়েই ফিরছেন। ২০২৬-এ উত্তমকুমারের শতবর্ষ। আগামী বছরের বইমেলাও উত্তমময়!
খবর, পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড খ্যাতনামীর স্মরণে বিশেষ এক প্রদর্শনীর আয়োজন করতে চলেছ। সেই প্রদর্শনীর দায়িত্বে ‘আর্ট অলিন্দ আর্কাইভ’-এর তরফ থেকে জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য এবং ‘কলকাতা কথকতা’র তরফ থেকে চন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। আনন্দবাজার ডট কম সবিস্তার জানতে যোগাযোগ করেছিল জ্যোতির্ময়ের সঙ্গে। তিনি বলেছেন, “প্রেক্ষাগৃহের আদলে প্রদর্শনী স্থান তৈরি করার কথা ভাবা হচ্ছে। সেখানে থাকবে উত্তমকুমারের অনেক কিছু। যেমন, তাঁর লেখা চিঠি, চিত্রনাট্য, ছায়াছবির কিছু মুহূর্ত, স্থিরচিত্র, ছবির পোস্টার, কাটআউট, ছবির টিকিট, অভিনেতার ব্যবহত পোশাক-সহ অনেক কিছু।” প্রেক্ষাগৃহের আদলে তৈরি মণ্ডপে ভেসে আসবে আবহও। কখনও দোতারায় বাজবে সত্যজিৎ রায়ের ছবি ‘হীরক রাজার দেশে’র গান ‘কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়’। কখনও হয়তো শোনা যাবে, দর্শকের টিকিট কাটার কোলাহল। বইমেলা শুরু হবে ২২ জানুয়ারি। চলবে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
‘গৃহদাহ’ ছবিতে প্রদীপকুমার, উত্তমকুমার। ছবি: আর্ট অলিন্দ আর্কাইভ।
উত্তমকুমারের ছবি মানেই তখন প্রেক্ষাগৃহে ‘গুরু গুরু’ ধ্বনি। সেই আবহও কি শুনতে পাবে এই প্রজন্ম?
পুরোটা বিষয়টিই এখনও ভাবনার পর্যায়ে, জানিয়েছেন জ্যোতির্ময়। তবে উত্তমকুমার একা আসবেন না। তাঁর আগের প্রজন্মের ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ি সান্যালেরাও যেমন থাকবেন, তেমনই থাকবেন পরবর্তী প্রজন্মও। “এই প্রজন্ম বাংলা ছবি সম্পর্কে ততটাও ওয়াকিবহাল নন। তাঁদের তাই উত্তমকুমারকে চিনতে গেলে আগের এবং পরের প্রজন্মকেও জানতে হবে। তবে তাঁরা বুঝতে পারবেন, বাংলা বিনোদনদুনিয়ার কতখানি জুড়ে ছিলেন খ্যাতনামী।” তাই পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের সময়কেও সম্ভবত দেখানো হবে প্রদর্শনীতে।
‘সপ্তপদী’ ছবিতে বাইকে চেপে উত্তমকুমার-সুচিত্রা সেনের গান ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ এখনও মুখে মুখে ফেরে। সেই আদলের একটি বাইকও প্রদর্শনীপ্রাঙ্গণে রাখা থাকবে। এ ছাড়া, ‘আর্ট অলিন্দ আর্কাইভ’-এর তরফ থেকে ‘দ্য গোল্ডেন মোমেন্টস’ নামের একটি বই প্রকাশ করা হবে। উত্তমকুমারের সঙ্গে যাঁরা যে ভাবে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা, স্মৃতি, ঘটনা ধরা থাকবে দুই মলাটে।
‘গৃহদাহ’ ছবির সেটে সুচিত্রা সেন, উত্তমকুমার। ছবি: আর্ট অলিন্দ আর্কাইভ।
উত্তমকুমারের পরিবারের সঙ্গেও বইমেলা কমিটি বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করেছে। কী ভাবে এই বিশেষ আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত থাকছেন তাঁরা?
উত্তম-পুত্র গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় স্ত্রী মহুয়া চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “বাবার ব্যবহৃত কিছু জিনিস আমরা দেব। তবে কী কী জিনিস দেব, সেটা এখনও ঠিক করিনি। পাশাপাশি, কমিটি এবং জ্যোতির্ময়বাবু আমার সঙ্গে কথা বলে গিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সে সব মেলায় থাকবে।” আর থাকবে আলোচনাচক্র। গত বছরেও মেলা কমিটির আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন মহুয়া। এ বছরেও থাকবেন। এ ছাড়াও, কলকাতা পুরসভার পত্রিকা ‘পুরশ্রী’ তৈরি হবে উত্তমকুমারকে নিয়ে। সেই পত্রিকা এবং ‘দ্য গোল্ডেন মোমেন্টস’ উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
যাঁদের ভাবনা থেকে আগামী বছরের বইমেলার অনেকটাই উত্তমকুমারকে ঘিরে, তাঁরা কী বলছেন?
এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “আমরা দুটো পর্যায়ে বিষয়টিকে ভাগ করেছি। একটিতে থাকবে উত্তমকুমারকে নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনী। আর একটি হবে তাঁকে ঘিরে আলোচনা। বাজবে তাঁর গান। খ্যাতনামীর স্মৃতিচারণায় উপস্থিত থাকতে পারেন তাঁর নায়িকারা, পরিবারের সদস্য। যেমন, ভাবা হয়েছে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায়, লিলি চক্রবর্তী, অপর্ণা সেনের কথা। তবে এই অনুষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অতি উত্তম’। আয়োজনের দায়িত্বে মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।”
বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন মালবিকাও। তিনি জানিয়েছেন, উত্তমকুমারের নায়িকাদের যথেষ্ট বয়েস হয়েছে। তাঁরা আসতে পারবেন কি না এখনও জানাননি। ফলে, সবটাই আপাতত আলোচনাসাপেক্ষ।