পুস্তক পরিচয় ৩

সম্মান পেলেন পথিকৃৎ

পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাও, দু’জনের দেখা পাবে। একজন স্কটিশ, অন্যজন শিখ।’ ডব্লিউ জি আর্চার তাঁর পেন্টিংস অব দ্য শিখস বইয়ের মুখবন্ধে শিখদের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে এই মন্তব্যের সঙ্গে স্কটিশদের চারটি প্রধান গুণের কথা উল্লেখ করেন, ‘উদ্যোগ, সাহস, বুদ্ধিমত্তা ও লেগে থাকার ক্ষমতা।’ ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিপত্য বিস্তারের পর্বে স্কটল্যান্ড থেকে যাঁরা ভাগ্যান্বেষণে এসেছিলেন, তাঁদের অনেকেই এই সব গুণের জন্য স্থায়ী জায়গা করে নেন। কিন্তু স্কটিশ ডেভিড হেয়ারকে আমরা যেমন মনে রেখেছি, বিপুল কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও পুরোপুরি ভুলে গিয়েছি ফ্রান্সিস বুকানন হ্যামিল্টন-কে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৫ ০০:০৩
Share:

পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাও, দু’জনের দেখা পাবে। একজন স্কটিশ, অন্যজন শিখ।’ ডব্লিউ জি আর্চার তাঁর পেন্টিংস অব দ্য শিখস বইয়ের মুখবন্ধে শিখদের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে এই মন্তব্যের সঙ্গে স্কটিশদের চারটি প্রধান গুণের কথা উল্লেখ করেন, ‘উদ্যোগ, সাহস, বুদ্ধিমত্তা ও লেগে থাকার ক্ষমতা।’ ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিপত্য বিস্তারের পর্বে স্কটল্যান্ড থেকে যাঁরা ভাগ্যান্বেষণে এসেছিলেন, তাঁদের অনেকেই এই সব গুণের জন্য স্থায়ী জায়গা করে নেন। কিন্তু স্কটিশ ডেভিড হেয়ারকে আমরা যেমন মনে রেখেছি, বিপুল কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও পুরোপুরি ভুলে গিয়েছি ফ্রান্সিস বুকানন হ্যামিল্টন-কে।

Advertisement

বুকানন (১৭৬২-১৮২৯) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জনের চাকরি নিয়ে ভারতে আসেন ১৭৯৪-এ, আর ফিরে যান ১৮১৬ সালে। দু’দশকের এই কর্মজীবনে বিস্তৃত ভূখণ্ড চষে ফেলেন তিনি। প্রথমেই ব্রহ্মদেশ (তার অসামান্য বিবরণ আজও লুকিয়ে আছে ‘এশিয়াটিক রিসার্চেস’-এর পাতায়), তারপর মহীশূর ও দক্ষিণ ভারত, আর নেপাল (এখানে তিনি উদ্ভিদবিদ্যার নানা তথ্য সংগ্রহ করেন, যা আজ পথিকৃৎ গবেষণার মর্যাদা পেয়েছে)। ১৮০৭-এ শুরু হল বঙ্গদেশে সমীক্ষার কাজ। পরের সাত বছরে বুকানন ঘুরলেন দিনাজপুর, রঙপুর, পূর্ণিয়া, ভাগলপুর, গয়া, পটনা, সাহাবাদ। সমীক্ষা সম্পূর্ণ হল না, দশ হাজার পাতার যে রিপোর্ট তিনি তৈরি করেছিলেন, তাঁর জীবৎকালে তা ছাপা হয়নি। ১৮৩৩-এ প্রথম ছাপার মুখ দেখল দিনাজপুর রিপোর্ট। ১৮৩৮-এ মন্টগোমারি মার্টিন পুরো রিপোর্ট সংক্ষিপ্ত আকারে ইস্টার্ন ইন্ডিয়া নামে ছেপে দিলেন, নামপত্রে বুকাননের কোনও উল্লেখ ছাড়াই। এত দিনে পশ্চিমবঙ্গ জেলা গেজেটিয়ার্স (বিকাশ ভবন, সল্ট লেক) থেকে দিনাজপুর ফের ছাপা হল (৯০০.০০)। অচেনা ভূখণ্ডে, দোভাষীর ভরসায় যে পরিমাণ তথ্য সংকলন করেছিলেন বুকানন, তা আজও বিস্ময়কর।

সুমুদ্রিত এই সংস্করণ নিছক এক অসামান্য ক্ষেত্রসমীক্ষার পুনর্মুদ্রণ নয়, সঙ্গে আছে ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টারের একটি লেখা যা তাঁর পূর্বসূরির প্রতি সশ্রদ্ধ স্বীকৃতি, আর ডেভিড প্রেইন-এর লেখা বুকাননের জীবনী ও রচনাপঞ্জি, যা খুবই বিস্তারিত। বর্তমানে ব্রিটিশ লাইব্রেরির সংগ্রহভুক্ত বুকাননের মূল পাণ্ডুলিপির বিবরণও রয়েছে সঙ্গে। জন্মের আড়াইশো বছর পেরিয়েও বুকানন প্রাপ্য সম্মান পাননি, এই বই সে দুঃখ কিছুটা লাঘব করবে। মার্টিন তাঁর বইয়ে বুকানন-সংগৃহীত অজস্র মূল ছবির কয়েকটি ছেপেছিলেন, এখানে সেগুলি অন্তত সংযুক্ত হলে ভাল লাগত।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement