Bow Barracks

ক্রিসমাস আর নস্টালজিয়ায় ভরা বো ব্যারাকস

ঘুম ভাঙা পাড়াটা যেন বড়দিনের খুশিতে আত্মহারা। চারদিকে আলো, স্পিকারে বাজছে ক্রিসমাসের গান।

Advertisement

মধুবন্তী রক্ষিত

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ১৫:০১
Share:

ঘুম ভাঙা পাড়াটা যেন বড়দিনের খুশিতে আত্মহারা। চারদিকে আলো, স্পিকারে বাজছে ক্রিসমাসের গান। ক্রিসমাস ক্যারল, হালের ইংরেজি গান। উত্সবের মেজাজ গোটা পাড়া জুড়ে। অঞ্জন দত্তর গানে বার বার ফিরে আসা নস্টালজিয়ায় ভরা বো ব্যারাকস।

Advertisement

সারা বছর ঘুমিয়ে থাকা সারবাঁধা লাল বাড়িগুলো যেন ক্রিসমাসের সময় জেগে ওঠে। জমকালো আলোয় সেজে ওঠা রাস্তার এক পাশে তৈরি হয়ে রয়েছে স্টেজ, অন্য পাশে সারি সারি বাহারি খাবারের দোকান। মোমো, সুই মাই, ওয়ানটন যেমন রয়েছে, তেমনই কোনও দোকানে পাওয়া যাচ্ছে সুস্বাদু গরম কাবাব, কোল্ড ড্রিঙ্ক। আর বিনামূল্যে চা, কফি।

ঝলমলে গলি জমে উঠেছে নতুন প্রজন্মের ভিড়ে। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার অপেক্ষা করতে করতেই চলছে পেটপুজো, গল্প, সেলফি সেশন। একটু পরেই শুরু হল বাচ্চাদের অনুষ্ঠান, স্থানীয় গায়কের গান। তালে তালে নেচে উঠছে গোটা গলি। কোথাও হাতে হাত মিলিয়েছে বাবা, মেয়ে, কোথাও নস্টালজিয়ায় মাতোয়ারা বয়স্ক দুই পুরনো বন্ধু।

Advertisement

পাঁচ দশক ধরে বো ব্যারাকসের বাসিন্দা রেনি ফোরান জানালেন, বিয়ের পর এসেছিলেন বো ব্যারাকসে। এখানেই জন্ম চার সন্তানের। আনন্দের আমেজ পাল্টায়নি এক বিন্দুও। বো ব্যারাকসই তাঁর কাছে বাড়ি, পরিবার সব। বিদেশে ছেলে ক্রিস্টোফার, পুত্রবধূ রিতু ও নাতনি দানিয়েলের কাছে অস্ট্রেলিয়ায় মাঝে মাঝে গেলেও ভালবাসার টানেই বার বার ফিরে আসেন বো ব্যারাকসে।

প্রতি ক্রিসমাসে পরিবার, বন্ধু, প্রতিবেশীদের জন্য ট্রাঙ্ক ভরে কেক বানান রেনি। ক্রিসমাস ইভের আগের রাতে ফোরান বাড়ি জমে ওঠেছিল বন্ধু, বান্ধবদের সমাগমে। অকপট আন্তরিকতায় সকলকে পরিবেশন করলেন নিজে হাতে তৈরি হার্ট কেক, ফ্রুট কেক আর রেনি স্পেশ্যাল ছানা কেক। সঙ্গে ওয়াইন।

ছোটবেলার ক্রিসমাসের স্মৃতি বলতে ক্রিস্টোফারের মনে পড়ে ক্রিসমাস মাস-এর আগের রাতে বন্ধুদের সঙ্গে গান, বাজনা। মাস-এর পর জ্বালানো হত বিরাট এক বনফায়ার। থাকত ক্রিসমাস ট্রি। এখন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিসমাস হয়তো অনেক আধুনিক, কিন্তু বো ব্যারাকসের সেই আন্তরিকতা খুঁজে পান না ক্রিস্টোফার। ছোটবেলায় বো ব্যারাকসের বাইরে গোটা শহরটা ছিল কল্পনার জগত্। বাস্তবের দুনিয়া জুড়ে ছিল শুধুই বো ব্যারাকস। বিদেশে স্কুলে চাকরির ব্যস্ততার মাঝেও বার বার ফিরে আসেন লাল ইটের পাড়ায়।

ফোরান পরিবারের আন্তরিকতার টানে কলকাতায় উড়ে এসেছেন ফরাসি তরুণীও। কয়েক বছর আগে স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের সময় ক্রিস্টোফারের সঙ্গে এক বছর ছিলেন তিনি। সেই আতিথেয়তার টানে আবার কলকাতা ফিরে এসেছেন। সেন্ট টমাস খিদিরপুরে পড়ানোর সময় ক্রিস্টোফারের ছাত্র, সিঙ্গাপুরে থাকার সময় তাঁর সহকর্মী, সকলেই আজও বার বার আসেন ফোরান পরিবারের কাছে।

বিদায় নিয়ে চলে আসার সময় কানে ভেসে আসছিল হাসির আওয়াজ। মেরি ক্রিসমাস ফোরান পরিবার। মেরি ক্রিসমাস বো ব্যারাকস।

আরও পড়ুন: বাঙালিয়ানায় ভরপুর চাপড়ার খ্রিস্টীয় মেলা

এ বার বড়দিনে নিজেই বানান কেক, কুকিজ

বড়দিন আমার প্রেমের দিন, লিখছেন অঞ্জন দত্ত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন