National news

ঘরটা অগোছালো রেখে জয়যাত্রায় বেরনো সম্ভব নয়

অশুভের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখার বার্তা দিতে স্বহস্তে রাবণ বধ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রতীকী রাবণের ভীষণ মূর্তির বক্ষস্থল লক্ষ্য করে বাণটা ছুড়লেন তিনি নিজেই। অসুর বিনাশে সেনাপতি তিনিই— বার্তাটা এই।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৪৭
Share:

—ফাইল চিত্র।

অশুভের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখার বার্তা দিতে স্বহস্তে রাবণ বধ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রতীকী রাবণের ভীষণ মূর্তির বক্ষস্থল লক্ষ্য করে বাণটা ছুড়লেন তিনি নিজেই। অসুর বিনাশে সেনাপতি তিনিই— বার্তাটা এই। কিন্তু সেনাপতিকে নিজের ঘরটাও গুছিয়ে রাখতে হয়। পায়ের তলায় শক্ত মাটির উপস্থিতি নিশ্চিত করে যুদ্ধযাত্রা করতে হয়। তবেই সে যাত্রা জয়যাত্রা হয়ে ওঠে। সেনাপতি মোদীর পারিষদবর্গের আচরণ কিন্তু বলছে, রণকৌশলের এই বুনিয়াদি সত্যটুকু আজ বিস্মৃতপ্রায়। মোদীর ঘনিষ্ঠজনরা অক্লেশে অগোছালো করে চলেছেন তাঁর ঘরটা।

Advertisement

বিজয়া দশমী তথা দশেরার দিনে নরেন্দ্র মোদী এক ভাষণে বললেন, কখনও কখনও এমন পরিস্থিতি আসে যে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যে কীসের ইঙ্গিত? পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার ইঙ্গিত কি? ভারত যুদ্ধ করতে চায় না, কিন্তু যুদ্ধ ছাড়া এখন আর কোনও উপায় নেই— এমন ইঙ্গিত কি?

ভারত যুদ্ধ করবে, নাকি অন্য পথ খুঁজবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নরেন্দ্র মোদীর রয়েছে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তটা তাঁকে ভারতের হয়ে নিতে হবে, বিজেপি-র হয়ে বা এনডিএ-র হয়ে নয়। নরেন্দ্র মোদী সে কথা ভুলে যাচ্ছেন কি না, স্পষ্ট নয়। কিন্তু তাঁর পারিষদদের অনেকেই যে তা ভুলে গিয়েছেন সে কথা বেশ স্পষ্ট।

Advertisement

যুদ্ধ কোনও ইতিবাচক বিষয় নয়। যুদ্ধ এক সঙ্কটকাল। সঙ্কটকালে বিভেদ ভুলে এবং ভুলিয়ে গোটা পরিবারকে একত্রিত রাখার দায়িত্বটা পরিবারের নিয়ন্ত্রকদেরই সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর থেকে বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবার ঘটনাটির রাজনৈতিক কৃতিত্ব নিজেদের ঝুলিতে ভরতে দৃষ্টিকটূরকম তৎপর। যত ক্ষণ এই রাজনৈতিক সংকীর্ণতা শুধু দলীয় বা সাংগঠনিক প্রচেষ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, তত ক্ষণ তা খুব সঙ্কটজনক ছিল না। কিন্তু যখন নরেন্দ্র মোদীর প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর একই আচরণ করছেন, তখন জাতীয় সংহতির দেওয়ালে চিড় ধরা অবশ্যম্ভমভাবী হয়ে পড়ছে।

পর্রীকরের নির্ঘোষ বা উদ্গার সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর থেকেই চলছিল। নরেন্দ্র মোদী বুক ঠুকতে নিষেধ করেছিলেন। তা-ও পর্রীকর অপ্রতিরোধ্য। রাষ্ট্রধর্মের সব সীমা লঙ্ঘন করে এ বার তিনি বলে বসেছেন, আগে কখনও এমন অভিযান ভারতীয় সেনা করেনি। নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে ভারতীয় বাহিনীর এই অভিযান আসলে নরেন্দ্র মোদীর সাহসী রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ফসল, দাবি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর। এ কথা বলে পর্রীকর হয়তো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কংগ্রেসকে খাটো করতে চাইলেন। কিন্তু তাতে সেনার কৃতিত্বকেও খাটো করা হল না কি? যাঁরা নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়ে ফিরলেন, তাঁদের গৌণ করে নরেন্দ্র মোদীকেই কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে দেখানোর প্রয়াস উঁকি দিল পর্রীকরের এহেন মন্তব্যে। সর্বোপরি, যখন সকলকে পাশে নিয়ে এগোনো জরুরি, তখন দেশের প্রধান বিরোধী দলকে দু’হাতে ঠেলে দূরে সরিয়ে দেওয়া হল।

সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে যে সাফল্য, তাতে শাসকের ভাগ রয়েছে বলে যদি ধরেও নেওয়া হয়, তা হলেও বলতেই হচ্ছে যে, অভিযানোত্তর দিনগুলিতে বেশ রাজনৈতিক অপরিপক্কতারই পরিচয় দিল শাসক পক্ষ। কোথাও একটা বড়সড় খামতি থেকে গেল বলেই সম্ভবত বিরোধী পক্ষ প্রথমে একযোগে সরকারের পাশে দাঁড়িয়েও পরে বেসুরে বাজতে শুরু করল। যত্নশীল হয়ে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়ানোর কথা ছিল শাসক পক্ষের। কিন্তু ঠিক উল্টো পথে হেঁটে বেপরোয়া ভঙ্গিতে মুখ ঘুরিয়ে চলতে শুরু করল সরকার।

পর্রীকরের মন্তব্য পর্রীকরেরই। কিন্তু দিনের শেষে মোদীও সে মন্তব্যের দায় অস্বীকার করতে পারেন না। বুক ঠুকতে বারণ করেছিলেন তিনি। তা-ও পর্রীকর ঠুকে চলেছেন। এতে কি মোদীর প্রশয় রয়েছে? যদি না থাকে, তা হলে নিশ্চয়ই কর্মফলের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে। উত্তর দেবে সময়। অপেক্ষায় রইল দেশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন