Editorial News

স্পর্শকাতর সন্ধিক্ষণে আমরা

পশ্চিমবঙ্গে ভাল ফল করতে মরিয়া বিজেপি যে এ রাজ্যেও একই দাওয়াই প্রয়োগ করতে তৎপর হবে, তা নিয়ে সংশয় অনেকেরই ছিল না। মেয়ো রোডে অমিত শাহের জনসভা মিটে যাওয়ার পরে গোটা রাজ্যের কাছেই স্পষ্ট হয়ে গেল যে, বিজেপি ধর্মীয় আবেগ নিয়েই কথা বলবে এ রাজ্যে। 

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৮ ০০:৩৩
Share:

আশঙ্কাটা ছিলই। সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের হাওয়াটা যে এ রাজ্যের রাজনীতিতে বাড়তে পারে, তা অনেকেই হয়তো আঁচ করতে পারছিলেন। হলও ঠিক তাই। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ কলকাতায় জনসভা করলেন। অমিত শাহের ভাষণে অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে গেল যে, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, ঝাড়খন্ড সহ বিভিন্ন রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও মেরুকৃত পথেই হাঁটতে চলেছে বিজেপি।

Advertisement

উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের আগে শ্মশান আর কবরস্থানের বিভাজন সামনে আনা হয়েছিল। রাজস্থানের দরজায় এখন বিধানসভা নির্বাচন কড়া নাড়ছে। তাই রাজস্থানেও স্বঘোষিত গোরক্ষকদের হামলা বাড়তে শুরু করেছে। গুজরাতে বিধানসভা নির্বাচনের আগে একটি বলিউডি ছবির মুক্তিকে কেন্দ্র করে সামাজিক আবেগ উস্কে দেওয়া হয়েছিল। কর্ণাটকে বিধানসভা নির্বাচনের ঘণ্টা বাজতেই টিপু সুলতানের নামে আকথা-কুকথা শুরু হয়ে গিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে ভাল ফল করতে মরিয়া বিজেপি যে এ রাজ্যেও একই দাওয়াই প্রয়োগ করতে তৎপর হবে, তা নিয়ে সংশয় অনেকেরই ছিল না। মেয়ো রোডে অমিত শাহের জনসভা মিটে যাওয়ার পরে গোটা রাজ্যের কাছেই স্পষ্ট হয়ে গেল যে, বিজেপি ধর্মীয় আবেগ নিয়েই কথা বলবে এ রাজ্যে।

কী কী বললেন অমিত শাহ?

Advertisement

জাতীয় নাগরিকপঞ্জির প্রয়োজনীয়তা, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বিতাড়ন, দুর্গাপূজার বিসর্জন, সরস্বতী পূজায় বাধা, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান শরণার্থী, মুসলিম অনুপ্রবেশকারী —একের পর এক স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে মুখ খুললেন অমিত শাহ। প্রত্যেকটা বিষয়ে স্পষ্ট করে বললেন বিজেপির অবস্থান কী, বিজেপি কী চায়। বিজেপি কাদের পক্ষে রয়েছে এবং কাদের পক্ষে নেই, তাও বেশ স্পষ্ট করে জানালেন।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

বিজেপি সভাপতির ভাষণ মেরুকরণের হাওয়া বইয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। তৃণমূল বার বারই তীব্র স্বরে বিজেপির এই অবস্থানের বিরোধিতা করছে। কিন্তু মজার কথা হল, তৃণমূলের বার্তাতেও অনেকেই মেরুকরণের চেষ্টা খুঁজে পাচ্ছেন। একটা মেরুকরণের চেষ্টাকে প্রতিহত করতে অন্য পক্ষকে যতটা সংবেদনশীল হয়ে কথা বলতে হয়, ততটা সংবেদনশীল হয়ে তৃণমূলও কথা বলছে না বলে অনেকেরই আজ মনে হচ্ছে। পুরোপুরি সংবেদনশীল না হওয়াটা ইচ্ছাকৃত নয় তো? এমন প্রশ্নও উঠছে।

আরও পড়ুন: হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানরা শরণার্থী, তাঁরা ভারতেই থাকবেন: শাহের মন্তব্যে মেরুকরণ স্পষ্ট

সব মিলিয়ে কী দাঁড়াল তা হলে? দাঁড়াল এই যে, সময় অত্যন্ত সংবেদনশীল। কিন্তু এ বাংলার রাজনীতিতে দুই প্রধান প্রতিপক্ষ সংবেদনশীলতা থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে, সম্ভবত ইচ্ছাকৃতই যাচ্ছে। নিজের নিজের ভোটব্যাঙ্ক বুঝে নেয়াটাই যেন একমাত্র লক্ষ্য তাঁদের কাছে। কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে, ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে এখন যে কোনও রকমের মূল্য চোকাতে প্রস্তুত বাংলার বর্তমান রাজনীতির দুই প্রধান শিবির। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সেই মূল্য চোকাতে প্রস্তুত তো? বা আদৌ আগ্রহী তো? সেটা বুঝে নেওয়া দরকার সর্বাগ্রে। রাজ্যের মানুষকে অপ্রস্তুতে ফেলে কোনও দলই কিন্তু মহৎ কোনও কার্যসিদ্ধি করতে পারবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন