সভায় বক্তব্য রাখছেন অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।
জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করলেন অমিত শাহ। অসমে এনআরসি তো হবেই, হবে বাংলায়ও— মেয়ো রোডের জনসভা থেকে শনিবার এমনই বার্তা দিয়ে গেলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। তবে অত্যন্ত পরিষ্কার ভাবে অমিত শাহ এ দিন সীমারেখা টেনে দিলেন ‘শরণার্থী’ ও অনুপ্রবেশকারী’দের মধ্যে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব দিয়ে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করলেন। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগ তুলে পরামর্শ দিলেন, ‘‘মমতাজি, ভ্রান্তি ছড়ানো বন্ধ করে দিন।’’
পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার একটা বড় অংশই পূর্ববঙ্গ বা বাংলাদেশ থেকে আসা। ফলে এনআরসি ইস্যু অত্যন্ত সংবেদনশীল চেহারা নিয়েছে এ রাজ্যে। অসমে এনআরসি তৈরি করে যে ভাবে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ চিহ্নিত করা হচ্ছে, বাংলাতেও সে রকমই এনআরসি চাই বলে বিজেপি সুর চড়াতে শুরু করেছে। আর তৃণমূল বলছে, এনআরসি-র নামে ‘দেশের মানুষকে উদ্বাস্তু’ করতে চাইছে বিজেপি। বিষয়টি নিয়ে গোটা বাংলায় দফায় দফায় পথে নেমেছে তৃণমূল। সংসদেও তুমুল হইচই করেছেন তৃণমূল সাংসদরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও তীব্র স্বরে এনআরসি-র বিরোধিতা শুরু করেছেন। শুধু কলকাতায় নয়, দিল্লিতে গিয়েও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকার এবং অসম সরকারের তীব্র নিন্দা করেছেন।
শনিবার মেয়ো রোডের জনসভা থেকে বিজেপি সভাপতি যে তৃণমূল চেয়ারপার্সনকে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করবেন, তা প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু জবাব দিতে গিয়ে অমিত শাহ এনআরসি ইস্যুতে সুর নরম করলেন না একটুও। বরং বললেন, ‘‘অসম থেকে বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করে বার করার জন্যই এনআরসি তৈরি হয়েছে।’’ তিনি আরও বললেন, ‘‘মমতাজি, আপনি আটকানোর চেষ্টা করলেও এনআরসি আটকাবে না।’’
আরও পড়ুন: বাংলায় সরকার গড়তে না পারলে বাকি সব মূল্যহীন: মমতাকে উৎখাতের ডাক শাহের
এনআরসি-র পক্ষে এই রকম চড়া স্বরে সওয়াল করে অমিত শাহ সুকৌশলে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন, বাংলাদেশ থেকেই আসুন বা অন্য দেশ থেকে, এনআরসি নিয়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই। ‘শরণার্থী’ আর ‘অনুপ্রবেশকারী’র বিভাজনটা আরও স্পষ্ট করে এ দিন তুলে ধরার চেষ্টা করলেন তিনি। রাজ্য বিজেপির নেতারা আগেই বলতে শুরু করেছিলেন যে, শরণার্থী আর অনুপ্রবেশকারী এক নয়। শনিবার অমিত শাহ আরও স্পষ্ট করে এবং আরও জোর গলায় সে কথা বললেন। বাংলায় এনআরসি চালুর দাবি সংক্রান্ত ইস্যুতে বিজেপির অবস্থান ঠিক কী, তা খুব পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলেন।
অমিত শাহ এ দিন বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে যত শরণার্থী রয়েছেন, তাঁদের সবাইকে আমি আশ্বস্ত করছি, এক জন শরণার্থীকেও বার করা হবে না।’’ তিনি বলেছেন, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে যে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষরা ভারতে এসেছেন, তাঁরা সকলেই শরণার্থী। এঁদের সকলকে নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য বিলও তৈরি হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে অমিত শাহের মন্তব্য— ভ্রান্তি ছড়াবেন না।
আরও পড়ুন: অমিত শাহ-র হাসি চওড়া করল জঙ্গলমহল
রাজ্য বিজেপি আগেই জানিয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে যে মুসলিমরা এ দেশে ঢুকেছেন, তাঁরা ধর্মীয় কারণে বাংলাদেশে কোনও সঙ্কটের মধ্যে ছিলেন না, তা সত্ত্বেও ভারতে এসেছেন। বিজেপির মতে, বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলিমরা হলেন অনুপ্রবেশকারী। এ দিন কলকাতায় অমিত শাহের ভাষণেও সেই সুরই স্পষ্ট ছিল। তবে তাতেই থামেননি বিজেপি সভাপতি। মেরুকরণের পালে আরও বাতাস জুগিয়ে তিনি এ দিন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন— আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিল যখন সংসদে পাশ করানো হবে, তখন কি তৃণমূল সেই বিলকে সমর্থন দিতে প্রস্তুত? কংগ্রেস কি সেই বিলকে সমর্থন দিতে প্রস্তুত? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাহুল গাঁধীর কাছ থেকে জবাব চেয়েছেন অমিত শাহ।
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের জন্য এ রাজ্যের বৈধ নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে বিজেপি সভাপতির মত। অনুপ্রবেশের চাপে এ রাজ্যের মানুষ অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে তাঁর ইঙ্গিত। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরাই পশ্চিমবঙ্গে সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে, বোমা বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে এ রাজ্যে ক্রমাগত অনুপ্রবেশ চলছে বলে বিজেপি সভাপতির দাবি। এই অনুপ্রবেশের ফলে বাংলা তথা দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। মেয়ো রোডের সভা থেকে অমিত শাহের আহ্বান— বাংলার সুরক্ষা এবং বাংলার বৈধ নাগরিকদের অধিকার রক্ষার স্বার্থে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy