Advertisement
E-Paper

‘কোনও যোগ্য ভোটারের নাম বাদ যাবে না, দ্বিতীয় বার শুনানি হবে প্রয়োজনে’, খসড়া তালিকা প্রকাশ করে প্রতিশ্রুতি সিইও-র

কমিশন জানিয়েছে, খসড়া তালিকায় নাম থাকার কথা ছিল কিন্তু ওঠেনি, এমন ভোটারেরা প্রথমে জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানাতে পারবেন। দ্বিতীয় অভিযোগ করা যাবে সরাসরি সিইও দফতরে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:৫৮
Election Commission releases draft electoral roll in West Bengal

সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল। —নিজস্ব চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গের ভোটারদের পূর্ণাঙ্গ খসড়া তালিকা প্রকাশ করল নির্বাচন কমিশন। খসড়া তালিকায় নিজেদের নাম রয়েছে কি না, তা মঙ্গলবার সকাল থেকেই তা দেখে নিতে পারছিলেন ভোটারেরা। কমিশনের নির্দিষ্ট অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটে এপিক নম্বর দিয়ে তা জেনে নেওয়া যাচ্ছিল। সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে আনুষ্ঠানিক ভাবে গোটা রাজ্যের পূর্ণাঙ্গ খসড়া তালিকা প্রকাশ করেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়াল।

সাংবাদিক বৈঠকে সিইও জানিয়েছেন, খসড়া তালিকায় নাম থাকার কথা ছিল কিন্তু ওঠেনি, এমন ভোটাররা প্রথমে জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানাতে পারবেন। দ্বিতীয় অভিযোগ করা যাবে সরাসরি সিইও দফতরে। তিনি বলেন, ‘‘যাঁদের নাম বাদ যাবে তাঁদের তার কারণ জানানো হবে। যোগ্য সব ভোটারের নাম থাকবে। কারও নাম বাদ যাবে না।’’ সেই সঙ্গে তাঁর ঘোষণা, কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণে প্রথম বার শুনানিতে অংশ না নেওয়া গেলে। দ্বিতীয় বার সুযোগ দেওয়া হবে। শুনানি নিয়ে একটি পদ্ধতি জানানো হবে এবং সব ‘নো ম্যাপিং’কে শুনানিতে ডাকা হবে বলেও ঘোষণা করেন তিনি।

বুধবার থেকেই শুনানির নোটিস দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন সিইও মনোজ। প্রকৃত ভোটারদের সকলের নাম তালিকায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘হুগলির কাউন্সিলর বাদ যাওয়ার ঘটনায় ডিইও-র কাছে রিপোর্ট চেয়েছি। ইচ্ছাকৃত ভাবে হলে বিএলও-এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে।’’ শুনানিপর্বের জন্য ২৮০০ অতিরিক্ত ইআরও (ইলেকটোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার) নিয়োগ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সদ্য প্রকাশিত খসড়া তালিকায় রয়েছে ৭ কোটি ৬৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫২৯ জনের নাম। মৃত, অন্যত্র চলে যাওয়া, নিখোঁজ বা ভুয়ো ভোটার এবং যাঁরা এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করেননি, তাঁরা বাদে সকলেরই নাম থাকার কথা এই তালিকায়। সূত্রের খবর, যাঁরা এনুমারেশন ফর্ম শুধুমাত্র সই করে জমা দিয়েছেন, তাঁদেরও নাম থাকছে কমিশনের খসড়া তালিকায়। কেবল মৃত, অন্যত্র চলে যাওয়া, নিখোঁজ এবং একাধিক জায়গায় নাম থাকা ভোটারদের নাম বাদ গিয়েছে খসড়া তালিকা থেকে। এ ছাড়া অনেকে এমনও রয়েছেন, যাঁরা এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করেননি। অর্থাৎ, তাঁরা ভোটার হতে চান না। এই নামগুলি খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়ছে। সব মিলিয়ে এই সংখ্যাটি হল ৫৮ লক্ষ ২০ হাজার ৮৯৯ জন।

কমিশনের হিসাবে, ওই ৫৮ লক্ষ ২০ হাজার ৮৯৮ জনের মধ্যে মৃত ভোটার রয়েছেন ২৪ লক্ষ ১৬ হাজার ৮৫২ জন। এ ছাড়া ১২ লক্ষ ২০ হাজার ৩৯ জন নিখোঁজ ভোটার, ১৯ লক্ষ ৮৮ হাজার ৭৬ জন স্থানান্তরিত ভোটার এবং ১ লক্ষ ৩৮ হাজার ৩২৮ জন ভুয়ো ভোটার (একাধিক জায়গায় নাম রয়েছে যাঁদের)। পাশাপাশি ৫৭ হাজার ৬০৪ জন রয়েছেন যাঁরা এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করেননি। এই সংখ্যক নাম সরাসরি বাদ গিয়েছে কমিশনের খসড়া তালিকা থেকে। জানা যাচ্ছে, এগুলি বাদে বাকি ৭ কোটি ৬৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫২৯ জন ভোটারের নাম খসড়া তালিকায় জায়গা পেয়েছে।

সূত্রের খবর, ভোটারদের মোট তিনটি তালিকায় ভাগ করেছে কমিশন— নিজস্ব ম্যাপিং, প্রোজেনি ম্যাপিং এবং নন-ম্যাপিং। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় (রাজ্যে শেষ বার এসআইআর হয়েছিল ২০০২ সালে) যাঁদের নাম ছিল, তাঁরা নিজস্ব ম্যাপিংয়ের তালিকায় পড়ছেন। এমন ২ কোটি ৯৩ লক্ষ ৬৯ হাজার ১৮৮ জন ভোটারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যাঁদের নাম ২০০২ সালের তালিকায় না-থাকলেও বাবা-মা বা আত্মীয়ের নাম আছে, তাঁরা প্রোজেনি ম্যাপিং তালিকায় রয়েছেন। রাজ্যে তেমন ভোটারের সংখ্যা ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ ৫৫ হাজার ৯৩৯ জন।

এ ছাড়া, ৩০ লক্ষ ভোটার রয়েছেন, যাঁদের নিজেদের নাম বা আত্মীয়ের নামও ২০০২ সালের তালিকায় নেই। তাঁরা নন-ম্যাপিং তালিকাভুক্ত। এই তৃতীয় তালিকার সকলকেই কমিশনের তরফে শুনানিতে ডাকা হবে। তাঁদের তথ্যপ্রমাণ, নথি যাচাই করে দেখা হবে। কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণে প্রথম বার শুনানিতে অংশ না নেওয়া গেলে দ্বিতীয় বার সুযোগ দেওয়া হবে বলে কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে।

এদের পাশাপাশি আরও দেড় কোটির বেশি ভোটারের এনুমারেশন ফর্মের তথ্য সন্দেহজনক ঠেকেছে কমিশনের। কোনও ক্ষেত্রে ভোটারের চেয়ে তাঁর বাবা বা মা মাত্র ১৫ বছরের বড়। কোথাও আবার ঠাকুরদা বা ঠাকুরমার চেয়ে ভোটার ৪০ বছরেরও ছোট নয়। মাঝে এক প্রজন্ম ব্যবধানের পরেও বয়সের ফারাক ৪০ বছরের কম। কোথাও ভোটারের সঙ্গে তাঁর বাবা-মায়ের বয়সের ফারাক ৫০ বছরেরও বেশি। আবার কোথাও ছয়ের বেশি ভোটারের বাবার নাম একই রয়েছে। এমন বিভিন্ন সন্দেহজনক তথ্য ওই ১ কোটি ৬৭ লক্ষ ৪৫ হাজার ৯১১ ভোটারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুনরায় যাচাই করবেন বিএলও-রা। যাচাই প্রক্রিয়া সন্তোষজনক না-হলে, সংশ্লিষ্ট ভোটারকে ডেকে পাঠানো হবে শুনানির জন্য।

SIR Voter List Controversy Voter List rectification Election Commission Manoj Agarwal Special Intensive Revision Voter List Chief Electoral Officer CEO
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy