পাহাড়ে শিক্ষক নিয়োগে ‘দুর্নীতি’র দুর্নীতির অভিযোগে আবার কলকাতা হাই কোর্টে ধাক্কা খেল ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ বা জিটিএ। বেআইনি নিয়োগের অভিযোগে ৩১৭ জনের চাকরি খারিজ করল বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর বেঞ্চ। বিচারপতির মন্তব্য, ওই নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বেআইনি এবং আইনবিরোধী।
সংশ্লিষ্ট ওই শিক্ষকদের নিয়োগ করে জিটিএ। সেই নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বুধবার এই মামলায় হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, জিটিএ-র বৈঠকে রোশন গিরি সকল শিক্ষকের নিয়মিতকরণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। রাজ্য সরকার সেই প্রস্তাবে স্পষ্ট আপত্তি জানায়।
জিটিএ-র দাবি, তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে নিয়মিত নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্ভব ছিল না। তবে আদালত জিটিএ-র ওই যুক্তি সম্পূর্ণ ভাবে খারিজ করে দেয়। আবেদনকারীদের বক্তব্যে মান্যতা দিয়ে আদালত জানায়, ওই একই সময়ে অন্য ক্ষেত্রে নিয়োগ হয়েছে, ফলে ‘অসম্ভব’ বলে জিটিএ যে যুক্তি দিয়েছে তা ভিত্তিহীন।
নিয়মিতকরণের কথা বলা হলেও, তা প্রকৃতপক্ষে ছিল নতুন নিয়োগ, শুনানিতে জানায় বিচারপতি বসুর বেঞ্চ। আদালত আরও বলে, নতুন নিয়োগ নিয়মিতকরণের আড়ালে করা হয়েছে, তা স্পষ্টতই আইনলঙ্ঘনের সামিল। যে সব জায়গায় নিয়োগ হয়, তা বেসরকারি স্কুল বলে আদালতে দাবি করা হয়েছিল। যদিও আদালত তা মানতে চায়নি। জিটিএ আইনের ৭৩ নম্বর ধারার উল্লেখ করে আদালত জানায় যে, ওই স্কুলগুলি আইন অনুযায়ী পরিচালিত এবং রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। শিক্ষকদের চাকরি বাতিলের পাশাপাশি সিআইডি তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার পক্ষেও নির্দেশ দেয় আদালত।
আরও পড়ুন:
জিটিএ আওতাভুক্ত এলাকায় শিক্ষক নিয়োগ ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ উঠেছিল। রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতরের অভিযোগের ভিত্তিতে বিধাননগর উত্তর থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়। সেই অভিযোগে সিবিআই-কে অনুসন্ধান করে দেখার নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্টের বিচারপতি বসুর সিঙ্গল বেঞ্চ। এই সংক্রান্ত রিপোর্ট আদালতে দিতে বলা হয়েছিল কেন্দ্রীয় সংস্থাকে। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চতর বেঞ্চে যায় রাজ্য। কিন্তু সেখানে ধাক্কা খেতে হয় রাজ্য সরকারকে। ২০২৪ সালের ১৯ এপ্রিল কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি হরিশ টন্ডন ও বিচারপতি মধুরেশ প্রসাদের ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ বহাল রাখে। যদিও রাজ্য পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যেতে পারবে বলে ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি গবইয়ের বেঞ্চ রাজ্যের যুক্তি মেনে নিয়ে জানিয়েছিল, হাই কোর্ট তাড়াহুড়ো করে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। হাই কোর্টের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ খারিজ করে দেয় দেশের শীর্ষ আদালত।