Nirmala Sitharaman

স্বীকারোক্তি

এই তহবিল কি নির্মাণশিল্পে, অথবা সামগ্রিক অর্থব্যবস্থায়, মন্দা ঠেকাইতে পারিবে? নূতন পুঁজির ব্যবস্থা হইলে সব না হউক, অন্তত কিছু প্রকল্পের কাজ ফের শুরু হইবে বলিয়াই আশা।

Advertisement

সম্পাদকীয় ১

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share:

ফাইল চিত্র।

নির্মলা সীতারামন শেষ অবধি বলিয়াই ফেলিলেন। জানাইলেন, ভারতীয় অর্থনীতি এখন যে গাড্ডায় পড়িয়াছে, বেল আউট ভিন্ন বাঁচিবার আর কোনও পথ নাই। সংবাদ শিরোনামে খুঁজিলে অর্থমন্ত্রীর এ-হেন উক্তি মিলিবে না। কিন্তু, অভিজ্ঞ জনমাত্রেই জানিবেন, সংবাদের কালো হরফে যে কথা ছাপা হয় না, তাহা থাকে দুই লাইনের মধ্যবর্তী সাদা শূন্যস্থানে। ভারতীয় অর্থনীতি যে শূন্যস্থানটুকু পড়িয়া লইতে ভুল করিবে না। গৃহনির্মাণ ক্ষেত্রের জন্য ২৫,০০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করিতে হয় কেন? সহজ উত্তর— আর কোনও ভাবে এই শিল্পকে চাঙ্গা করিবার উপায় নাই। ব্যাঙ্ক হইতে ধার লইবার পর যে প্রকল্পগুলি বন্ধ হইয়া গিয়াছে, সেগুলির ঋণ এখন অনাদায়ী। ফলে, ব্যাঙ্কের উপর চাপ বাড়িতেছে। গৃহনির্মাণ শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের বাজারেও মন্দা। অর্থমন্ত্রীর আশা, এই ২৫,০০০ কোটি টাকার তহবিল সেই মরা গাঙে বান না হউক, খানিক জলের ব্যবস্থা করিবে। তাহা আদৌ হইবে কি না, সে প্রসঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন। কিন্তু, তাহার পূর্বে অর্থমন্ত্রীর নিকট প্রশ্ন— দেশে মন্দা আসিয়াছে, এই কথাটি এই বার নিজ মুখে উচ্চারণ করিলে হয় না? তিনি স্বীকার করুন বা না-ই করুন, তাহাতে পরিস্থিতি পাল্টাইবে না— কিন্তু, দেশের অর্থমন্ত্রী হিসাবে তিনি সামান্য হইলেও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করিতে পারিবেন। বাস্তবকে অস্বীকার করিবার উদগ্র তাড়নায় এখন তিনি লোক হাসাইতেছেন মাত্র।

Advertisement

এই তহবিল কি নির্মাণশিল্পে, অথবা সামগ্রিক অর্থব্যবস্থায়, মন্দা ঠেকাইতে পারিবে? নূতন পুঁজির ব্যবস্থা হইলে সব না হউক, অন্তত কিছু প্রকল্পের কাজ ফের শুরু হইবে বলিয়াই আশা। তাহাতে সিমেন্ট, লোহা-সহ নির্মাণসামগ্রীর চাহিদা বাড়িবে। অর্থব্যবস্থায় খানিক গতি আসিবে। কিন্তু, সেই গতি ধরিয়া রাখা সম্ভব কি? ভারতীয় অর্থব্যবস্থায় এখন প্রধানতম সমস্যা হইল চাহিদার অভাব। অধিকাংশ মানুষের হাতে টাকা নাই। যাঁহাদের আছে, তাঁহারাও এই মুহূর্তে খরচ করিতে নারাজ, কারণ ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। ফলে, নির্মাণকার্য আরম্ভ হইলেই ঝাঁকে ঝাঁকে ক্রেতার দেখা মিলিবে, এমন আশা বাস্তবসম্মত নহে। চাকা এক পাক গড়াইয়াই ফের থামিয়া যাইবে বলিয়া আশঙ্কা। অর্থমন্ত্রী কি তখন দ্বিতীয় দফা বেল আউটের ব্যবস্থা করিবেন? অর্থশাস্ত্র সম্বন্ধে তাঁহার অতিসীমিত জ্ঞানেও বোঝা সম্ভব যে তাহা হয় না। বরং প্রশ্ন উঠিবে, ২৫,০০০ কোটি টাকার তহবিল গড়িয়া তিনি কাহারও স্বার্থরক্ষার চেষ্টা করিতেছেন না তো? এবং, আরও প্রশ্ন উঠিবে, এলআইসি বা স্টেট ব্যাঙ্কের ঘাড়ে এই বোঝা চাপাইয়া দিবার পরিণতি কী হইবে, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যথেষ্ট অবহিত তো? সাধারণ মানুষের দুশ্চিন্তা বাড়া অস্বাভাবিক নহে।

মন্দা আসিলে সরকারি ব্যয় বাড়াইতে হয়, এই কথাটি গত নব্বই বৎসরে অর্থনীতির কাণ্ডজ্ঞানে পরিণত হইয়াছে। চাপিয়া ধরিলে নির্মলা সীতারামনরাও বলিবেন, নব্যউদার অর্থনীতির দর্শন ভুলিয়া তাঁহারা কেন্‌সকে অনুসরণ করিতেছেন। কিন্তু, খরচটি কোথায় করা বিধেয়, তাহা বুঝিতে কাণ্ডজ্ঞান অপেক্ষা কিছু অধিক প্রয়োজন। কর্পোরেট করে ছাড় অথবা নির্মাণশিল্পে বেল আউট প্যাকেজ অপেক্ষা এই টাকা যদি গ্রামীণ কর্মসংস্থান যোজনার ন্যায় খাতে খরচ করা হইত, তাহাতে লাভ অনেক বেশি। কারণ, সেই খাতে মাল্টিপ্লায়ার এফেক্ট অধিকতর, অর্থাৎ প্রতি এক টাকা সরকারি ব্যয়ে জাতীয় আয় বাড়িবে অপেক্ষাকৃত বেশি হারে। কোনও প্রকৃত অর্থনীতিবিদের দ্বারস্থ হইলে তিনিই কথাটি বুঝাইয়া বলিতে পারিতেন। কিন্তু, নির্মলারা স্বখাতসলিলে ডুবিতে, এবং দেশকে ডুবাইতে, বদ্ধপরিকর। অবশ্য, কাহারও সংশয় থাকিতে পারে, পর পর এ-হেন সিদ্ধান্তের পিছনে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কাণ্ডজ্ঞানের অভাবই নাই, হয়তো আরও কিছু আছে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন