অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ভারতীয় অর্থনীতির প্রয়োজন অনুসারে বাজেট তৈরি করলেন। বর্তমান সরকার বেশ কয়েকটি কাঠামোগত সংস্কার করেছে। তার ফলে অর্থনীতির বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। সেই বাড়তি আর্থিক সমৃদ্ধি এখন বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে— বিশেষত কৃষকদের মধ্যে— ছড়িয়ে দেওয়ার পালা। এই বাজেটে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত আছে, যার লক্ষ্য কৃষককে তাঁর ফসলের দামবাবদ বেশি টাকা পেতে সাহায্য করা। ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের পরিমাণ বৃদ্ধি তেমনই একটি সিদ্ধান্ত। কৃষক উৎপাদক সংস্থাগুলিকে করছাড়ের সুবিধা দেওয়া হয়েছে, খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ ক্লাস্টারের ক্ষেত্রেও সরকারি সাহায্যের ব্যবস্থা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামাজিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী। দশ কোটি পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যবিমার উদ্যোগ গরিব মানুষের বড় সহায় হবে। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে গবেষণার দিকে জোর দেওয়া হয়েছে, বিশেষত ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রদের জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থা হচ্ছে।
কর্মসংস্থানের কথাটিও এই বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। আরও জরুরি, এ-বার প্রতিটি ক্ষেত্রই নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য কর্মী নিয়োগের স্বাধীনতা পেল। বর্তমান শ্রম আইনে যে অনমনীয়তা আছে, এই ব্যবস্থায় সেই সমস্যা খানিক হলেও কমবে। কর্মসংস্থানও বাড়বে, বিশেষত শ্রমনিবিড় ক্ষেত্রগুলিতে। বস্ত্রশিল্প, চর্মশিল্প এবং জুতোর মতো পণ্যের ক্ষেত্রে রফতানির বাজার বৃদ্ধির ভাল সম্ভাবনা ভারতের সামনে রয়েছে, এবং এই ক্ষেত্রগুলিতে বিপুল কর্মসংস্থান হতে পারে।
বছরে আড়াইশো কোটি টাকার কম ব্যবসা করে, এমন অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পগুলির ওপর আয়করের বোঝা কমিয়ে তাদের ২৫% হারে নিয়ে আসা হয়েছে। দেশের ৯৯% শিল্পই এর ফলে উপকৃত হবে। এতে ব্যবসায়িক উদ্যোগের পরিমাণ বাড়বে, কর্মসংস্থান হবে, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলি প্রসারণে উৎসাহ পাবে। এ-বছরের ইকনমিক সার্ভে জানিয়েছে, ভারত এখন ক্রমেই সংগঠিত হয়ে উঠছে— ছোট ছোট সংস্থাগুলিও জিএসটি নেটওয়ার্কে নথিভুক্ত হচ্ছে। তাদের জন্য ঋণ পাওয়া সহজ হলে, এবং করের বোঝা কমলে এই ছোট ব্যবসাগুলির বৃদ্ধিও দ্রুততর হবে।
এই বাজেটেও অরুণ জেটলি রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগের গুরুত্বের কথাটি মাথায় রেখেছেন। সড়ক ও রেল ক্ষেত্রে আগের চেয়েও বেশি অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। রেলে যাত্রীদের সুবিধা থেকে গাড়ির উন্নতি, সব দিকেই নজর দেওয়া হয়েছে। নগরায়ণের গুরুত্বও অব্যাহত আছে। বাজেটে স্মার্ট সিটি ও শহরাঞ্চলের উন্নতির জন্য অম্রুত প্রকল্পের জন্য টাকা বরাদ্দ হয়েছে। মুম্বইয়ের পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতির কাজ যে দ্রুত চলছে, সে কথাটিও উল্লেখ করা প্রয়োজন।
বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ থেকেও আয়ের রাস্তা খোলা হচ্ছে। টোল, অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার মেকানিজমের মতো পথে হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী। লোয়ার রেটেড বন্ডে লগ্নির অনুমতি দিয়ে পরিকাঠামো খাতে খরচ করার টাকা তোলার ব্যবস্থা হচ্ছে। এ-বছর বিলগ্নিকরণের মাধ্যমে সরকার ভাল টাকা তুলতে পেরেছে। আশা করি, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। বহু বছর পরে সরকার বিলগ্নিকরণের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করতে পারল।
রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন শতাংশে, ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে ০.৩ শতাংশ-বিন্দু কম। একটি কঠিন আর্থিক বছরে এটা নেহাত সামান্য কৃতিত্ব নয়। ঘাটতির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকার অবিচলিত থাকবে, ফলে ভবিষ্যতে আর্থিক সুস্থায়িত্ব অর্জন করা সম্ভব হবে, এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থাও বাড়বে। আন্তর্জাতিক রেটিং এজেন্সি এবং বিনিয়োগকারীরাও এটি লক্ষ করবেন। সরকারের যথেচ্ছ খরচ এঁরা ভাল চোখে দেখেন না।
সমাজের সব অংশের প্রয়োজনের দিকেই অর্থমন্ত্রী নজর দিয়েছেন। গ্রামীণ অর্থনীতির পাশাপাশি দরিদ্র এবং বিপন্ন মানুষরাও গুরুত্ব পেয়েছেন। এই বাজেটের কেন্দ্রে রয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ক্ষেত্রগুলি, ভারতীয় অর্থনীতিতে যাদের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এই বাজেট সমৃদ্ধি এবং উন্নয়নের।
মহানির্দেশক, কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি