Editorial news

এই হামলা অসহিষ্ণুতা নয়? এখন চুপ কেন

পুলিশের উপস্থিতি সত্ত্বেও রাজ্যের একটি বিরোধী দলের শীর্ষনেতার কনভয়ে কী ভাবে অবাধে আক্রান্ত হল? এই প্রশ্নগুলোর জবাব কেউ দেবেন না।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:২৪
Share:

হামলাকারীদের কারও কারও হাতে ছিল তৃণমূলের পতাকা। কারও হাতে ছিল কালো পতাকা এবং বাঁশ-লাঠি। —নিজস্ব চিত্র।

জননিরাপত্তা নিয়ে কতখানি ‘উদ্বিগ্ন’ এ রাজ্যের প্রশাসন, কলকাতা হাইকোর্টে তার আঁচ পাওয়া গেল কিছুটা। বিজেপি যে ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’র ডাক দিয়েছে বাংলা জুড়ে, তাকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, তাই ওই যাত্রার অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়— উচ্চ আদালতকে এমনই জানাল রাজ্যের পুলিশ। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রশাসন বা পুলিশেরই দায়িত্ব। সুতরাং পুলিশ-প্রশাসনের এই ‘দায়িত্বশীল’ ভূমিকা দেখে হৃদয়ে সুখানুভূতিই হয়। কিন্তু আদালত কক্ষের ভিতরে যে পুলিশ-প্রশাসনের মুখচ্ছবি এমন ‘সংশয়হীন’ ভাবে দায়িত্বশীল, সেই পুলিশ-প্রশাসন সিতাইয়ের প্রকাশ্য রাজপথে কী করছিল? কোন ভূমিকাটা পুলিশ সিতাই মোড়ে পালন করছিল? পুলিশের উপস্থিতি সত্ত্বেও রাজ্যের একটি বিরোধী দলের শীর্ষনেতার কনভয় কী ভাবে অবাধে আক্রান্ত হল? এই প্রশ্নগুলোর জবাব কেউ দেবেন না।

Advertisement

ভারত একটা বহুদলীয় গণতন্ত্রের দেশ। গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি মানতে প্রস্তুত যে কোনও রাজনৈতিক দলেরই রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে এ দেশে, অধিকার রয়েছে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনেরও। বিরোধী দলকে কিছুতেই রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না— এমন সংকল্প যদি কোনও দল করে থাকে, তা হলে সেই দলই গণতন্ত্রচ্যুত হচ্ছে। এই সত্যটুকু বোঝার জন্য দার্শনিক বা বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের কনভয় যে ভাবে আক্রান্ত হল কোচবিহার জেলায়, তা গণতন্ত্রের লজ্জা। একবার নয়, বারবার আক্রান্ত হচ্ছেন দিলীপ ঘোষ। কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলে নয়, রাজ্যের নানা প্রান্তেই এই আক্রমণ ঘটানো হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্রে রাজনীতি করার অধিকার একা শাসকদলের নয়, বিরোধীদের অধিকারও সমান। রাজনৈতিক কর্মসূচি নেওয়া, সভা-সমাবেশ-মিছিল করা, দলের হয়ে প্রচার করা ইত্যাদি যে কোনও রাজনৈতিক নেতার বা রাজনৈতিক কর্মীর গণতান্ত্রিক অধিকার। সেই অধিকার সুনিশ্চিত রাখা রাষ্ট্রের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। তাই দিলীপ ঘোষের উপরে এই হামলা গণতান্ত্রিক রীতিনীতির সম্পূর্ণ বাইরে। দিলীপ ঘোষের উপরে এই হামলা সাংঘাতিক রকমের প্রশাসনিক ব্যর্থতারও পরিচায়ক।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আশঙ্কায় বিজেপির রথযাত্রার আবেদন খারিজ হাইকোর্টে, ফের শুনানি কাল

বিজেপির ডাকা ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’র জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি প্রশাসন দেয়নি। মামলা চলে গিয়েছে হাইকোর্টে। এই প্রথমবার কোনও কর্মসূচি পালনের অনুমতি চেয়ে বিজেপি প্রত্যাঘাত হল, এমন নয়। আগেও অনেকবার প্রত্যাখ্যানের মুখে পড়তে হয়েছে দিলীপ ঘোষদের। বিরোধী দলকে কর্মসূচি নিতে দেখলেই প্রশাসনিক বাধা তৈরি করার এই প্রবণতা অত্যন্ত অগণতান্ত্রিক। আর বিরোধী দলের উপরে এই রকম সশস্ত্র হামলা চূড়ান্ত রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতার নিদর্শন। রাজ্যের অন্যতম প্রধান বিরোধী দলটির শীর্ষ নেতা জেলা সফরে গিয়ে এই ভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন— এ ছবি গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত লজ্জাজনক।

তৃণমূলের বিরুদ্ধেই হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল যথারীতি সপাটে অস্বীকার করেছে। বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরেই দিলীপের কনভয়ে হামলা— দাবি তৃণমূল নেতা তথা বিধায়ক উদয়ন গুহর। তাই যদি হয়, তাহলে হামলাকারীদের হাতে তৃণমূলের পতাকা দেখা গেল কেন?

গোটা দেশে বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদীর সরকার গণতন্ত্র ধ্বংস করছে, অসহিষ্ণু আচরণ করছে বলে তারস্বরে অভিযোগ করছে তৃণমূল। কোচবিহারে দিলীপ ঘোষের কনভয়টাকে ভেঙেচুরে দিল যে অসহিষ্ণু রাজনীতি, তার কী হবে? এই অসহিষ্ণুতাকে বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল বলে চালিয়ে দেওয়া হবে? অসহিষ্ণুতা নিয়ে তৃণমূলের নীতি কি তাহলে দু’মুখো? গোটা দেশ অসহিষ্ণুতায় আক্রান্ত বলে অভিযোগ তুলে তীব্র ভাবে সরব হওয়া আর রাজ্যে অসহিষ্ণুতা দেখেও চোখ বুজে থাকা বা প্রশ্রয় দেওয়া— তৃণূলের নীতিটা এইরকম হয়ে দাঁড়াচ্ছে না তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন