Kolkata news

শুধু সুবচনেই দায় শেষ?

জ্বলন্ত বাগড়ি মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের দমকল মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বয়ানে তো অনেকটা সে রকমই মনে হয়।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০৬
Share:

জ্বলছে বাগরি মার্কেট। নিজস্ব চিত্র।

প্রশাসনের কাজ কি শুধু সুবচন দেওয়া? সুবাক্য বিতরণ করলেই সব দায়দায়িত্ব সমাধা হয়ে যায়? জ্বলন্ত বাগড়ি মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের দমকল মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বয়ানে তো অনেকটা সে রকমই মনে হয়।

Advertisement

কলকাতার জনাকীর্ণ এলাকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র কী রকম ভয়াবহ আগুনের গ্রাসে ঢুকে গেল, দুর্ঘটনার প্রাবল্য কতখানি ছিল, আর্থিক মাপকাঠিতে ক্ষতির পরিমাণ কোথায় গিয়ে দাঁড়াল বা দাঁড়াতে পারে, সে সব নিয়ে ইতিমধ্যেই বিস্তর চর্চা হয়েছে। প্রায় কারওরই সে সব জানতে বাকি নেই। কিন্তু প্রায় সকলেই জানতে চান, দায়টা প্রশাসন এড়িয়ে যাবে কী ভাবে?

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরে রাজ্যের দমকল মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়রের ইঙ্গিতটা কী রকম? তাঁর ইঙ্গিত— ওই বাজার তাঁরা আগেও পরিদর্শন করেছিলেন, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছিলেন, কিন্তু সে পরামর্শ অনুসৃত হয়নি, অনুসৃত হলে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটত না।

Advertisement

শোভন চট্টোপাধ্যায়ের এই ইঙ্গিতে দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা খুব স্পষ্ট। কী করা উচিত, জানানো হয়েছিল তো, মানা হয়নি কেন— বয়ানটা অনেকটা এ রকমই। ঠিক এইখানেই পাল্টা প্রশ্নটার সম্মুখীন হতে হচ্ছে দমকল মন্ত্রীকে তথা মহানাগরিককে— শুধু পরামর্শ দিয়েই কি শেষ হয়ে যায় প্রশাসনের কাজ? পরামর্শ মানা হল কি না, নির্দেশের রূপায়ণ হল কি না, সে দিকে লক্ষ্যটা রাখবে কে?

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

সরকারে বা প্রশাসনে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের দায়িত্বটা তো শুধু বাণী বা বচন বিতরণে সীমাবদ্ধ নয়। নীতি নির্ধারণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সে সিদ্ধান্তের রূপায়ণ— সবটাই তো সরকার বা প্রশাসনের দায়িত্ব। শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ইঙ্গিতেই প্রকাশ— পরিদর্শনেই বোঝা গিয়েছিল বাগড়ি মার্কেটের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা মোটেই সন্তোষজনক ছিল না। সন্তোষজনক ছিল না বলেই করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ বা নির্দেশ দিতে হয়েছিল। কিন্তু সেখানেই তো দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়নি শোভনবাবুদের। পরামর্শগুলো মানা হল কি না, নির্দেশগুলো রূপায়িত হল কি না, সে সব দেখাও তো কর্তব্য ছিল। রূপায়িত না হয়ে থাকলে রূপায়ণ সুনিশ্চিত করাও তো দায়িত্বের মধ্যেই ছিল। সেগুলো হল না কেন?

প্রত্যেকটি ধর্ষণের পরে প্রশাসন ধর্ষণের কঠোর নিন্দা করে। প্রত্যেক শ্লীলতাহানির পরে প্রশাসন ঘটনার সমালোচনা করে। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক হিংসার পরে প্রশাসন সে ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দেয়। তাতে কি ধর্ষণ চিরতরে থেমে যায়? দুষ্কৃতী কারও সঙ্গে অশ্লীল আচরণ করতে ভুলে যায়? রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ হয়? কথায় যদি সব হত, তা হলে তো সে সব কবেই বন্ধ হয়ে যেত। এত দিনের পোড় খাওয়া রাজনীতিক শোভন চট্টোপাধ্যায় এই সরল সত্যটা বোঝেন না, এমনটা কেউ বললে বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

আরও পড়ুন: ছ’তলায় মজুত মাল ছাই না হওয়া পর্যন্ত বাগড়ির আগুন বাগে আসবে না, বলছে দমকল

মাঝেরহাটে সেতু ভেঙে পড়ার পরেও দায় স্বীকার করা নিয়ে এইরকম টালবাহানা চলেছিল। কয়েক সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পরে রাজ্য সরকার মেনেছে, বিপর্যয়ের মূল দায়টা পূর্ত দফতরেরই। বাগড়ি মার্কেটের বিপর্যয়েও সেই একই ছবি। আগুনের সঙ্গে যুঝে ওঠার আগেই দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা। কিন্তু ঝেড়ে ফেলতে চাইলেই সব দায় থেকে বোধহয় মুক্ত হওয়া যায় না। অতএব শাসকের উচিত পুরনো অভ্যাস ত্যাগ করে নতুন কোনও পদ্ধতিতে আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন