গণতন্ত্রের দোহাই, ইতিহাস কিন্তু নির্বিকল্প ও নিষ্ঠুর

জয়ের একটা নেশা আছে। জয়, বিপুল জয়, বিপুলতর জয়, সবাইকে ছাপিয়ে যাওয়া ইতিহাস গড়া জয়— এ নেশা যে ঠিক কী রকম, অনিল বসু বা নন্দরানি দলেরা তা সম্যক জানতেন। ইতিহাস রচনা করতেন তাঁরা, মুখে ঈষৎ হাসি, বিরোধীদের উদ্দেশে শ্লেষাত্মক বক্র মন্তব্য— দৃশ্যগুলো এই রাজ্যের মানুষের নিশ্চয়ই মনে আছে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২৩
Share:

—ফাইল চিত্র।

জয়ের একটা নেশা আছে। জয়, বিপুল জয়, বিপুলতর জয়, সবাইকে ছাপিয়ে যাওয়া ইতিহাস গড়া জয়— এ নেশা যে ঠিক কী রকম, অনিল বসু বা নন্দরানি দলেরা তা সম্যক জানতেন। ইতিহাস রচনা করতেন তাঁরা, মুখে ঈষৎ হাসি, বিরোধীদের উদ্দেশে শ্লেষাত্মক বক্র মন্তব্য— দৃশ্যগুলো এই রাজ্যের মানুষের নিশ্চয়ই মনে আছে। একই সঙ্গে, ইতিহাসের অন্য পৃষ্ঠায় এসে তাঁদের ধরাশায়ী হওয়ার ছবিও নিশ্চয়ই কারও অগোচর নয়।

Advertisement

এক সময়ের লাল ঝড় এখন সবুজ ঝড়ে রূপান্তরিত হয়েছে। ঝড়ে ধুলোর দাপট একটু বেশিই হয়, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়, ঠিক-ভুলের ভেদরেখাটা চেনা যায় না অনেক সময়েই। এবং ঝড় যখন, যুক্তিগুলোও গুলিয়ে যাবে, তাতে আর আশ্চর্য কী! না হলে, এই ছ’মাস আগে যে মন্তেশ্বর মাত্র ৭০৬ ভোটের সরু সুতোর ব্যবধানে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীকে বিধানসভায় পাঠিয়েছিল, সেখানে এ বার তৃণমূলের বিপুল ম্যাজিক কেন দেখা গেল, এটা বুঝে উঠতে পারছিনা কেন ? ৭০৬ ভোটের ব্যবধান ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৪২৩ হয়ে গেল মাত্র কয়েক মাসেই? অথবা কোচবিহার কেন্দ্রে দু’বছর আগে ৮৭ হাজারের কাছাকাছি ভোটের জয় কোন যাদুমন্ত্রে প্রায় ৪ লক্ষ ২৩ হাজার ভোটে বদলে গেল, সেটাও উপলব্ধি করা যাচ্ছে না কেন? মাত্র ছ’মাস আগে, ওই বিপুল তৃণমূল ঝড়েও হলদিয়া বিধানসভা আসনে সিপিএম ২১ হাজার ভোটে জিতেছিল। তমলুকের এ দিনের হিসাব বলছে, হলদিয়া কেন্দ্রে ১ লক্ষেরও বেশি ভোটে লিড নিয়েছে তৃণমূল! ধূলির ঝড়ে বিরোধীরা ধূলিসাৎ। যুক্তি ও বিচারবোধও।

এবং কিমাশ্চর্যমতঃপরম, ইতিহাসের বিপ্রতীপ বিন্দুগুলো কোনও কোনও জায়গায় এসে মিলে যায়। পুনরাবৃত্ত হয় ইতিহাস। শুধু চরিত্রগুলো পাল্টে যায়। এখন তৃণমূল রচনা করছে ইতিহাস, নেতাদের মুখে বঙ্কিম হাসি, বিরোধীদের উদ্দেশে শ্লেষাত্মক বক্র মন্তব্য- দৃশ্যগুলো এই রাজ্যের মানুষের পরিচিত। শাসক ভুলে যায়, ইতিহাস এক পৃষ্ঠায় থমকে থাকে না। পৃষ্ঠা সে ওল্টাবেই। শিক্ষা নিতে পারলে উদ্বেগের কোনও কারণ থাকে না। না নিলে কী হয়, সেই পাঠটা অন্তত তা হলে অনিল বসুর কাছে নিয়ে রাখুন তৃণমূলের এই বক্রহাসির নেতারা।

Advertisement

গণতন্ত্রের দোহাই, ইতিহাস কিন্তু নির্বিকল্প ও নিষ্ঠুর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement