Politics

‘পপুলিজম’ ও হিন্দুত্বের মোকাবিলা করে নতুন মডেল তুলে ধরতে হবে রাহুলকে

গুজরাত মডেলকে আদর্শ করে রাহুল যদি গোটা দেশে মোদী বিরোধী রাজনীতির প্রধান প্রতীক হয়ে ওঠেন তবে তা হবে অসাধারণ নয়া রাজনীতির ঝড়। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষালগুজরাত মডেলকে আদর্শ করে রাহুল যদি গোটা দেশে মোদী বিরোধী রাজনীতির প্রধান প্রতীক হয়ে ওঠেন তবে তা হবে অসাধারণ নয়া রাজনীতির ঝড়। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষাল

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share:

গুজরাত ভোটের ফল প্রকাশের পর দিন সংসদ ভবনে রাহুল। ফাইল চিত্র।

মানব মনস্তত্ত্ব দর্শন বলে আমরা সব সময় পৃথিবীর সমস্ত ঘটনা, সমস্ত বিষয়কে ‘ক্লাসিফাই’ করি। যাকে বাংলায় বলতে পারি শ্রেণিবিভাগ। নানা ধরনের ক্যাটেগরি, শ্রেষ্ঠ স্কুল-কলেজ থেকে সেরা বাঙালির শিরোপা। প্রতিনিয়ত আমরা তুলনা করতে ভালবাসি। আজ ঠান্ডাটা গতকালের থেকে বেশি। আমি বললাম, কলকাতার চেয়ে দিল্লির ঠান্ডা অনেক গুণ বেশি। আবার এই তুলনামূলকতার মধ্যে একটা সমস্যাও আছে। আমরা সবসময়েই তুলনায় উগ্র হয়ে যাই। যে কোনও ব্যক্তি, যে কোনও নেতা, যে কোনও দল যে আসলে ভাল-খারাপ মেশানো, সেই ধূসরতা আমরা স্বীকার করতে চাই না। তাই অন্ধ সাপোর্টার, বা অনুগামী বা ভক্ত হই। তা না হলে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান থেকে হিন্দু-মুসলমান এ হেন সংঘাত হয় না। আকবর ভাল, ঔরঙ্গজেব খারাপ।

Advertisement

আমার অভিমত হল, যে কোনও রাজনৈতিক নেতা, তিনি সফল হলেও তাঁর মধ্যে কিছু ভাল থাকে, কিছু খারাপ থাকে। সর্বদাই এক জন নেতা ভাল এবং খারাপের সংমিশ্রণ। নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে ২০১৪ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তাঁর সেই সাফল্যের প্রশংসা করি। এ কথা সত্য, অন্য লোক পারেনি, তিনি পেরেছেন। মানুষ তাঁকে বিশ্বাস করেছে, কিন্তু গোধরার দাঙ্গার পরেও তিনি ‘ভাইব্রান্ট গুজরাত’-কে জনপ্রিয় করে শুধু দেশে নয়, গোটা পৃথিবীর সামনে নিজের সাফল্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। আবার তিন বছর পর দেখছি আর্থিক থেকে বিদেশনীতি, পদে পদে ব্যর্থ হচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। উগ্র হিন্দুত্বকে মূলধন করে তিনি গোটা দেশে এক ধরনের ধর্মীয় মেরুকরণ করতে চাইছেন। বিজেপিকে উন্নয়নের অভিমুখে নিয়ে গিয়ে তিনি আধুনিক ভারত নির্মাণ করবেন এমনটাই ভেবেছি‌লেন আধুনিক প্রজন্মের ভোটাররা। সেই স্বপ্ন, সেই আশাভঙ্গ হচ্ছে যখন, তখন সে কথাও তো আমাদের লিখতে হবে। এ বার যেমন গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে রাহুল গাঁধীর যে রাজনৈতিক উত্থান আমরা দেখলাম তা-ও দেশের মানুষকে বিপুল ভাবে আন্দোলিত করেছে। রাহুল গাঁধী বার বার বুঝিয়েছেন যে তিনি নিজেও হিন্দু। তিনি তাঁর বাবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করেছিলেন হিন্দু মতে। তিনি পৈতেধারী হিন্দু। তিনি মন্দিরে যান, শিবভক্ত। রাহুল ভোটে জেতেননি, কিন্তু তিনি হেরেও যাননি।

বিজেপির এক নেতা আমাকে বলেছিলেন, রাহুল হল হরভজন সিংহ। সেঞ্চুরি করে ফেলেছে। সবাই বলছে, ‘পাপ্পু পাশ হো গ্যায়া’। বিরাট সাফল্য। কারণ, কেউ তাঁর কাছ থেকে বেশি প্রত্যাশাই করে না। কিন্তু মোদীজি তো হলেন বিরাট কোহালি, সবসময়েই জয়ের প্রত্যাশা। পান থেকে চুন খসলেই এখন আমরা মোদীর সমালোচনা করি।

Advertisement

জয়-মালা: নরেন্দ্র মোদীকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।নয়াদিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে। ফাইল ছবি।

আমি বললাম, এইখানেই রাজনৈতিক নেতাদের সমস্যা। রাহুল যখন বলছেন, হিংসা ও অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে প্রেম-ভালবাসা, শান্তি ও অহিংসার আবহ তৈরি করতে হবে, তখন দেখতে পাচ্ছি মানুষ তাঁর আন্তরিকতাকে পছন্দ করছে। গ্রহণ করছে রাহুল গাঁধীকে। তাই মোদী হয়তো গুজরাত ভোটে জিতেছেন কিন্তু রাহুল গুজরাতের মানুষের হৃদয় অধিকার করেছেন। এখন গুজরাত মডেলকে আদর্শ করে রাহুল যদি গোটা দেশে মোদী বিরোধী রাজনীতির প্রধান প্রতীক হয়ে ওঠেন তবে সে হবে এক অসাধারণ নয়া রাজনীতির ঝড়। আর যদি রাহুল রণে ভঙ্গ দেন, আবার ভোটের সময় ঘন ঘন দুবাই থেকে ইউরোপ বেড়াতে চলে যান তবে কিন্তু সমালোচনায় মুখর হব আমিই। কারণ, মোদী কিন্তু ২০১৪ সালে আকস্মিক প্রধানমন্ত্রী হননি, তিনি তার আগে মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় থেকে অন্তত দশ বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য। রাজনীতিতেও কঠোর পরিশ্রম প্রয়োজন। প্রতিপক্ষে মোদীর মতো এক জন জবরদস্ত কঠিন কঠোর নেতা, সেটাও ভুললে চলবে না রাহুলের। গুজরাতের শিক্ষা নিয়ে মোদী উগ্র হিন্দুত্বের পথে যে আরও বেশি করে যাবেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই। অর্থনৈতিক বিষয়েও, অর্থাৎ আসন্ন বাজেটও হবে চূড়ান্ত জনমুখীনতার নিদর্শন। যাকে আমরা বলি ‘পপুলিজম’।

আরও পড়ুন: গুজরাতে ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি, দাবি রাহুলের

এই ‘পপুলিজম’ ও হিন্দুত্বের মোকাবিলা করে এক নতুন মডেল তুলে ধরতে হবে রাহুলকে। দোষে-গুণে মানুষ, এক জন নেতাও তাই। তাই একতরফা মূল্যায়ন না করে বলব, এখন রাহুল গাঁধীর সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। মোদীর তিন বছরের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে রাহুলই যে প্রধান চরিত্র, তা-ও আজ সুপ্রতিষ্ঠিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন