প্রশ্নাতীত

আইন ও নীতি স্ব-স্ব পথে চলিবে, তাহাই আশা। ইহা ব্যতীত এই ঘটনা হইতে হাতে থাকিয়া যায় প্রশ্নের পেনসিলটি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০২
Share:

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

প্রশ্নবাণের জ্বালা অতি তীব্র, টের পাইয়াছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। আইপিএল-এ তিনি এই বার দিল্লি ক্যাপিটালস দলের পরামর্শদাতা, আবার পূর্ব হইতেই পশ্চিমবঙ্গের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা সিএবি-রও প্রধান। এই রাজ্যের তিন ক্রিকেটপ্রেমী বিসিসিআই-কে পত্র দিয়া জানিতে চাহিয়াছিলেন, এই দ্বৈত ভূমিকায় স্বার্থের সংঘাত ঘটিবে কি না। তাঁহাদের প্রশ্ন, আইপিএলের দিল্লি-কলিকাতা ম্যাচ আগাইয়া আসিয়াছে, ইডেন গার্ডেনের সেই খেলায় দিল্লি দলের ডাগআউটে বসিয়া আছেন সিএবি-প্রধান, ইহা কি আইনবিরুদ্ধ এবং নীতি-অসঙ্গত নহে? বিসিসিআই-এর তদন্তকারী প্রতিনিধি সৌরভের নিকট উপযুক্ত ব্যাখ্যা জানিতে চাহিয়াছিলেন। তিনি জানাইয়াছেন, সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক নিযুক্ত কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স-কে জানাইয়া এবং তাহাদের অনুমতি লইয়াই তিনি দিল্লি দলের উপদেষ্টা রূপে যোগ দিয়াছেন। তাহার পূর্বে বিসিসিআই এবং আইপিএল-এর সমস্ত টেকনিকাল কমিটি হইতেও সরিয়া দাঁড়াইয়াছেন। উপরন্তু, তাঁর উপদেষ্টার পদটি সাম্মানিক। ইহাতে কোনও স্বার্থের সংঘাত কিংবা পরিতুষ্টি নাই, থাকিলে কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্সই তাঁহাকে অনুমতি দিত না।

Advertisement

আইন ও নীতি স্ব-স্ব পথে চলিবে, তাহাই আশা। ইহা ব্যতীত এই ঘটনা হইতে হাতে থাকিয়া যায় প্রশ্নের পেনসিলটি। প্রশ্ন উঠিবার এই প্রবণতাটি নূতনই বলা চলে। বেটিং সংক্রান্ত অভিযোগের প্রশ্নে ভারতীয় ক্রিকেট জর্জর হইবার পরেই সুপ্রিম কোর্ট লোঢা কমিটিকে নিযুক্ত করিয়াছে, বিসিসিআই-এর উন্নতিকল্পে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবার দায়িত্বভার দিয়াছে। বেনিয়ম কতটা সংশোধিত হইল, দুর্নীতি-ঘুঘুর বাসাটি ভাঙিল কি না, তাহা লইয়া চর্চা চলিতে পারে। স্থায়ী সমাধান হয়তো এখনও আসে নাই, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ যাহা: পূর্বের পরিস্থিতি এখন আর নাই। ক্রমাগত প্রশ্ন উঠিতেছে। সেই প্রশ্নেরা আঙুল তুলিয়া নির্দেশ করিতেছে, অমুক স্বার্থগন্ধী ব্যাপার দুইটিকে আলাদা করিয়া দাও, স্বচ্ছ ও সুস্পষ্ট নিয়মাবলি চালু হউক, কার্যক্ষেত্রে ‘ভিতরের লোক’-এর স্বার্থ যাহাতে রক্ষিত ও পুষ্ট না হয়, তাহা নিশ্চিত করো।

সংস্থা বা রাষ্ট্রের কাঠামো গণতান্ত্রিক হইলেই যে তাবৎ কার্যপ্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক হইবে, তাহা নহে। তাহাকে গণতান্ত্রিক করিয়া তুলিতে প্রশ্নের ভূমিকা অপরিহার্য। সরোবরে ঢিল না ছুড়িলে শৈবালদল সরিয়া যায় না, নিষ্প্রশ্ন অস্তিত্ব বদ্ধতাকেই শক্তিশালী করে। ক্রীড়াজগৎ হইতে বাণিজ্য বা রাজনীতি, সর্বক্ষেত্রেই দৃষ্টান্ত ভূরি ভূরি। একটি কাঠামো চালু হইল কিন্তু আশানুরূপ কার্যকর হয়তো হইল না, তথাপি অনেক সময়েই কার্যক্ষেত্রে তাহার একটি ছাপ আঁটিয়া বসে, সমস্ত প্রক্রিয়াটিকেই তাহা প্রভাবিত করিতে শুরু করে। লোকসভা নির্বাচন শুরু হইয়া গিয়াছে, টি এন শেষনের কথা কাহারও মনে পড়িতে পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হইয়া তিনি নির্বাচনবিধির ব্যাপক সংস্কার ও পরিবর্তন করিয়াছিলেন। তাহাতে শোরগোল পড়িয়াছিল, কারণ প্রধানমন্ত্রী বা প্রশাসকের সম্মুখে নির্বাচন কমিশনার তটস্থ ও সঙ্কুচিত, ইহাই সাধারণত পরিচিত দৃশ্য। পশ্চিমবঙ্গও সম্প্রতি দেখিয়াছে মীরা পান্ডের ন্যায় নির্বাচন কমিশনারকে। প্রভূত অনিয়মের দিকে আঙুল তুলিয়া তিনি প্রশ্ন তুলিয়াছিলেন। গণতন্ত্রের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় প্রশ্নের ভূমিকা নিশ্চিত ভাবেই প্রশ্নাতীত।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন