(বাঁ দিকে) সনিয়া গান্ধী এবং পিনারাই বিজয়ন (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
বছর ঘুরলেই বিধানসভা ভোট। তার আগে শবরীমালা মন্দির থেকে সোনার অলঙ্কার এবং বাট চুরির ঘটনা রাজনৈতিক মাত্রা পেয়ে গেল কেরলে। সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা পিনারাই বিজয়ন বুধবার অভিযোগ করেছেন, প্রাক্তন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে শবরীমালা-কাণ্ডে ধৃত দুই অভিযুক্ত উন্নিকৃষ্ণন পট্টি এবং গোবর্ধনের মধ্যে যোগাযোগ ছিল।
শিল্পপতি উন্নিকৃষ্ণন এবং গয়না ব্যবসায়ী গোবর্ধনের সঙ্গে সনিয়ার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল বলে দাবি করে বিজয়ন বলেন, ‘‘সনিয়া গান্ধী কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কে করুণাকরণকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেননি। হিমন্ত বিশ্বশর্মা (প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা তথা বর্তমানে অসমের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী) দিল্লিতে সনিয়ার সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করে বিফল মনোরথে ফিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু উন্নিকৃষ্ণন পোট্টি অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়েছিলেন। কী ভাবে পেয়েছিলেন?’’ সনিয়ার সঙ্গে গোবর্ধনের ছবি রয়েছে বলেও সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বিজয়ন দাবি করেন। প্রসঙ্গত, কেরলের বিজেপি নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই সনিয়ার সঙ্গে গোবর্ধনের একটি ছবি প্রকাশ করেছে (আনন্দবাজার ডট কম ছবির সত্যতা যাচাই করেনি)।
প্রসঙ্গত, সোনা চুরির ওই ঘটনাটি ২০১৯ সালের। শবরীমালার গর্ভগৃহ ‘শ্রীকোভিল’-এর দেওয়াল এবং দ্বারপালকের মূর্তি থেকে সোনা উধাও হয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, ২০১৯ সালে বিগ্রহের ওজন ছিল ৪২ কেজি ৮০০ গ্রাম। কিন্তু পরে দেখা যায়, বিগ্রহের ওজন হয়ে গিয়েছে ৩৮ কেজি ২৫৮ গ্রাম! কী ভাবে বিগ্রহের ওজন হ্রাস পেল, তা জানতে চেয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। সেই ঘটনার তদন্তেই উঠে আসে উন্নিকৃষ্ণনের নাম। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দাবি, বিগ্রহের মেরামতির জন্য ২০১৯ সালের জুলাই মাসে এক বার মন্দিরের দ্বারপালক মূর্তি এবং দরজার সোনার আবরণ খোলা হয়েছিল। সেই সময় সোনার ওজন ছিল ৪২.৮ কেজি। পর দিন ওই সোনা চেন্নাইয়ের একটি সংস্থায় পাঠানোর জন্য উন্নিকৃষ্ণনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সোনা চেন্নাইয়ে পৌঁছেছিল ৩৯ দিন পর।
চেন্নাইয়ে ওজন করতে গিয়ে দেখা যায় সোনার ওজন হয়ে গিয়েছে ৩৮.২৫ কেজি। অর্থাৎ, ৪.৫৪ কেজি সোনা উধাও! তদন্তে জানা যায়, মন্দিরের হিসাবরক্ষকেরা রেকর্ডে সোনার প্রলেপ দেওয়া মূর্তিগুলিকে ‘তামার তৈরি’ বলে লিখেছিলেন। ফেরত নেওয়ার সময় মূর্তিগুলি ঠিক ভাবে ওজনও করে দেখা হয়নি। যার ফলে বছরের পর বছর ধরে অলক্ষিতই রয়ে গিয়েছিল সোনা চুরির বিষয়টি। কেরল পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) দাবি, পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মন্দিরের রেকর্ডে হেরফের ঘটিয়ে সোনার জিনিসপত্রকে তামার তৈরি বলে লেখা হয়েছিল। এর নেপথ্যে ছিলেন মুরারি। ফলে মন্দির থেকে সোনার মূল্যবান জিনিসপত্র উধাও হয়ে গেলেও বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতে বেশ সময় লেগে যায়। ২০১৯ সালের ত্রিবাঙ্কুর দেবস্বম বোর্ডের খাতাটিও বাজেয়াপ্ত করেছিল সিট। তদন্তকারীদের দাবি, যেখানে স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, মন্দির থেকে সোনার পাত এবং অন্যান্য জিনিস উন্নিকৃষ্ণনের শিল্পপতির হাতে তুলে দিয়েছিলেন মুরারি।