Coronavirus

অন্ধকারের উল্টো পিঠে আলোর রোশনাই

এই মুহূর্তে এই পৃথিবীর যখন গভীরতর অসুখ তখন কেমন আছে আজকের অমলর, সুধারা? আমরা সভ্য মানুষের দল বহুদিন আগেই কেড়ে নিয়েছি যাদের সবুজ ঘাসের মাঠ, কেড়ে নিয়েছি সাঁতরে এপার-ওপার হওয়ার টলটলে পদ্মপুকুর। লিখলেন পাপিয়া বর্মনমনে পড়ছে সেই মেয়েটার কথা? সেই যে গো গ্রেটা থুনবার্গ না কি যেন নাম,  সেই সুইডিশ কিশোরী।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২০ ০৩:০৩
Share:

রামপুরহাট পাঁচমাথা মোড়ে। নিজস্ব চিত্র

ডাকঘরের অমল রাজার চিঠির আশায় বন্ধ ঘরে বসে অপেক্ষা করছিল। অপেক্ষায় ছিল একদিন সে...দেশে দেশে ঘরে ঘরে তাঁর চিঠি বিলি করে বেরাবে। একদিন এসেছিল সেই চিঠি, অনন্তে বিলীন হয়ে অমল মিশে গেছিল রোদের সঙ্গে রোদ হয়ে। আর ঠিক এই মুহূর্তে এই পৃথিবীর যখন গভীরতর অসুখ তখন কেমন আছে আজকের অমলর, সুধারা? আমরা সভ্য মানুষের দল বহুদিন আগেই কেড়ে নিয়েছি যাদের সবুজ ঘাসের মাঠ, কেড়ে নিয়েছি সাঁতরে এপার-ওপার হওয়ার টলটলে পদ্মপুকুর। যাদের হাতের ঘুড়ি লাটাই এর জায়গা নিয়েছে ল্যাপটপ আর ভিডিও গেমের মারণাস্ত্র। যাদের বন্ধুর সঙ্গে টিফিন ভাগ করতে না শিখিয়ে, শিখিয়েছি দু-একটা নম্বরের জন্য রেসের ঘোড়া হতে। ঠিক কেমন আছে আজকের ছোটরা। এই ঘরবন্দি জীবনে কী করছে তারা? আজ যদি তাদের চোখ দিয়ে দেখি কেমন যেন মনে হয় দরকার ছিল, প্রয়োজন ছিল, এমন একটা মস্ত ঝাঁকুনির।

Advertisement

মনে পড়ছে সেই মেয়েটার কথা? সেই যে গো গ্রেটা থুনবার্গ না কি যেন নাম, সেই সুইডিশ কিশোরী। সারা বিশ্বের কাছে হাতজোড় করে এই জলবায়ু দূষণ রোধ করার জন্য আন্দোলন করেছিল। না আমরা বড়রা শুনিনি তার কথা তাদের কথা। কিন্তু এই বসুন্ধরা বোধহয় শুনেছিলেন সেই ছোটদের আর্তনাদ। তাই করোনা ভাইরাসের মারণ ছায়ায় মানুষ আজ গৃহবন্দি। আতঙ্কে কাঁপছে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম জীবটি। আর ধীরে ধীরে আকাশ থেকে সরে যাচ্ছে কার্বন-মনোক্সাইডের বিষবাষ্প। আকাশ এখন গাঢ় নীল। ভোর হলেই কিচমিচ করতে করতে উড়ে যাচ্ছে পাখির দল। কাঠবিড়ালিটা এসে বসছে জানলার কার্নিশে। এই পৃথিবীটা যে তাদেরও এতদিনে বুঝছি আমরা। আর কি দেখছে কি বুঝছে আমাদের ছোটরা! আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম? তাদের বুঝি মন ভালো নেই? কে বলেছে? বরং তারা জীবনের এক মহা মূল্যবান সময় কাটাচ্ছে। ভোর পাঁচটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত ইঁদুর দৌড়ে ছুটে চলা ছেলেটার অথবা মেয়েটার এখন টিউশনের মস্ত বোঝাটা নেমে গেছে ঘাড় থেকে। বরং সকাল-সন্ধ্যে মা অথবা বাবা আরও ভাগ্যবান হলে ঠাম্মা অথবা দাদুর কাছে পড়তে বসছে সে।

সে দেখছে বাড়ির কাজ সবাই মিলেমিশে করতে হয়। এমনকি ছোটখাট দায়িত্ব নিতে হচ্ছে তাকেও। পরিবারের মূল্যবান সদস্য হয়ে ওঠার আনন্দ যে বড় মহার্ঘ্য। এতদিন যে কাজ মা অথবা বাবার বলে আলাদা ছিল, আজ যে তা মিলেমিশে একাকার। একজন সত্যিকারের মানুষ হিসাবে গড়ে উঠতে তা যে বড় মূল্যবান। পিৎজা বার্গার চাউমিন খাওয়া মুখে আজ চিঁড়ে মুড়ি রুটি-লুচির অমৃত আস্বাদন। শুধু কি তাই অবলীলায় পাতের খাবার ফেলে দেওয়া বাবা-মা আজ সযত্নে যথাসাধ্য মেপে রান্না করছেন। এই পৃথিবীতে জন্মে পর্যন্ত যে শিশুটা খাদ্যের মূল্য বোঝেনি আজ সে পাঠও পেয়ে যাচ্ছে, বাড়ির ছোট সদস্যটি।

Advertisement

তার মা যে এমন আশ্চর্য সুন্দর গল্প বলতে পারেন তা সে জানতেই পারত না যদি ব্যস্ত মায়ের চাকরি ক্ষেত্র বন্ধ না হত। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির কর্তা গম্ভীর বাবা যে ছাদে এমন ব্যাডমিন্টন খেলতে পারেন তা-ও জানতে পারত না শিশুটি। যে প্রতিবেশীর সঙ্গে জীবনে একটি কথাও বলা হয়নি তিনিই বাজার থেকে আনা সজনে ডাঁটা ভাগ করে দিচ্ছেন, এছবিও বিরল। বিনিময়ে মা তার লজেন্সের কৌটো খালি করে দিতে বলছেন ও পাশের ছোট্ট মেয়েটাকে। এমন দৃশ্য দেখতে পেয়ে বেজায় খুশি বাড়ির খুদে। কিশোর-কিশোরীরা দেখতে পাচ্ছে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের যাঁরা জীবন বাজি রেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ে যাচ্ছেন এই ভয়ানক সংকট পরিস্থিতিতে। এই বিশ্বকে আবার শিশুর বাসযোগ্য করে তোলার জন্য লড়াই চালাচ্ছেন তাঁরা।

সব অন্ধকারের উল্টোপিঠেই বোধহয় আলোর রোশনাই। সব রাত্রি শেষ হয় ভোরের সূর্য ওঠে। তাই আমরা অপেক্ষা করব সেই রোগমুক্ত নতুন পৃথিবীর। আর সেই ফাঁকে আমাদের অমলেরা, অমলকান্তিরা, সুধারা এক নতুন মানুষ হয়ে নতুন পৃথিবীর হাত ধরবে। সভ্য মানুষের অবিমৃশ্যকারীতায় আর যেন হারিয়ে না যায় ফড়িংয়ের ওড়াউড়ি, হারিয়ে না যায় গাছেদের শীতল নিবিড় ছায়া। যেন মানুষই মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকারে হাত ধরে মানুষের। সেই অপরূপ পৃথিবী আমরা দিয়ে যাব ছোটদের।

লেখক শিক্ষক ও সাহিত্যকর্মী, মতামত নিজস্ব

এই বিভাগে লেখা পাঠান নীচের ইমেল-এ mail.birbhum@abp.in
অনুগ্রহ করে সঙ্গে ফোন নম্বর জানাবেন। অন্য কোনও পত্রিকা, পোর্টালে পাঠানো লেখা অনুগ্রহ করে পাঠাবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন