‘ওরা এক বার যদি বলত!’

মঙ্গলবার রাতে গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হন সুপ্রিয়া দাস (১৯) ও সুরজিত দাস (২১)। বুধবার সকালে ওই যুগলের ঝুলন্ত দেহ দেখে হতবাক হয়ে যান গ্রামবাসীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৪৭
Share:

ঘটনার চব্বিশ ঘন্টা পরেও ভাগ্নির মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না মামা সন্দীপ দাস। কলেজ পড়ুয়া ছেলের মৃত্যু ভুলতে পারছেন বাবা বুদ্ধদেব দাসও। ওই দুই পরিবার শুধু নয়, ওই যুগলের মর্মান্তিক ওই পরিণতিতে শোকস্তব্ধ গোটা গ্রাম।

Advertisement

গত মঙ্গলবার রাতে গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হন সুপ্রিয়া দাস (১৯) ও সুরজিত দাস (২১)। বুধবার সকালে ওই যুগলের ঝুলন্ত দেহ দেখে হতবাক হয়ে যান গ্রামবাসীরা। কান্দির মতই ওই দুজনের সম্পর্কের কথা জানতে পারেননি দুই পরিবার। শেষ পর্যন্ত পরিবারের সদস্যরা তাঁদের সম্পর্ক মেনে নেবে না আশঙ্কা করে এক সঙ্গ দুজনে আত্মঘাতী হন বলেই প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান। সাগরদিঘি থানার ওসি জামালুদ্দিন মন্ডল বলছেন, “বাড়িতে তাদের সম্পর্ক মানবে না আশঙ্কা করেই তারা ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেই পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। তদন্ত চলছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুরজিতের বাড়ি দোহাল গ্রামেই। সুপ্রিয়ার বাড়ি বীরভূমের নলহাটি থানার তিতিডাঙা গ্রামে হলেও দোহালেই মামার বাড়িতে তিন বছর বয়েস থেকে থাকতে শুরু করেন। দুজনেই পড়াশোনা করতেন সাগরদিঘি কলেজে। সুপ্রিয়া প্রথম বর্ষের এবং সুরজিৎ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। কলেজে পড়াশোনার সূত্রেই দুজনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যদিও দুই পরিবারের লোকজনেরই দাবি, তাদের সম্পর্কের কথা ঘুণাক্ষরেও জানতেন না তারা। এমনকি ওই সম্পর্কের বিষয়টি আঁচ করতেও পারেননি দুই পরিবার।

Advertisement

সুপ্রিয়ার মামা সন্দীপ দাস জানান, ছোট থেকেই তাঁদের কছে মানুষ সুপ্রিয়া। স্কুল, কলেজে পড়াশোনা—সবটাই দোহাল গ্রামে। মাস খানেক থেকে বিয়ের দেখাশোনা চলছিল। আপত্তি করেনি কখনও। পছন্দ হওয়ায় কুরুমগ্রামে আগামী ২ ডিসেম্বর বিয়ের দিন ঠিক হয়। বুধবার নলহাটি থেকে ওর বাবা-মাকে নিয়ে পাত্রকে আশীর্বাদ করতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু তার আগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যান সুপ্রিয়া। কিছুক্ষণের মধ্যেই জানা যায় খোঁজ নেই পড়শি যুবক সুরজিতেরও। এর পর দুই পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। কিন্তু কোথাও খোঁজ মেলেনি। সুরজিতের দাদা বিশ্বজিৎ জানান, দু’জনকেই গ্রামে না পেয়ে তাঁরা নিশ্চিত হন যে দুজনে একসঙ্গেই পালিয়েছে। দু’জনের মধ্যে সম্পর্কের কথা বুঝতে পারেন তাঁরা। দুজনেই প্রাপ্তবয়স্ক। তাই বাড়ি ফিরে এলে সম্পর্ক মেনে নেওয়ার কথাও ভাবনা-চিন্তা করেন দুই পরিবারের লোকজন। এমনকি নির্ধ্বারিত আগামী ২ ডিসেম্বরেই বিয়ে দেওয়া হবে বলেও সিদ্দান্ত হয়েছিল।

কিন্তু তার আগেই প্রেমিক সুরজিত দাসের সঙ্গে একই দড়িতে পূর্বপাড়ার মাঠে বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে সুপ্রিয়ার ঝুলন্ত মৃতদেহ মেলে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ এক আমগাছের ডালে। বুধবার সকাল বিশ্বজিৎ বাবার খাবার নিয়ে যাওয়ার সময়ে জানতে পারেন ভাইয়ের মৃত্যুর খবর। সুপ্রিয়ার মামা সন্দীপ বলছেন, “দুজনেই ছিল চাপা স্বভাবের। কখনও বাড়িতে মুখ ফুটে বলেনি সম্পর্কের কথা জানায়নি। জানলে এমনটা হত না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন