COVID-19 Vaccine

যাহার যাহা কাজ

কঠিনতর বাস্তব— টিকা লইয়া রাজনীতি এবং ব্যবসা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:৫১
Share:

—ফাইল চিত্র।

কেবল লোকপ্রবাদের ‘চাষা’-ই নহে, সকলেই আশায় বাঁচেন। কোভিডকালের আশা— টিকা। রেকর্ড সময়ে কোভিডের টিকা তৈরি হইয়াছে, সরকারি স্তরে কথা চলিতেছে টিকাকরণ লইয়া। এক দিকে কোভিডের টিকার কার্যকারিতার সাফল্য-সংবাদ, অন্য দিকে এখনও চারিপাশে রোগের সংক্রমণ, এই আশা ও আশঙ্কার দোলাচলে সাধারণ মানুষ আশাই আঁকড়াইয়া ধরিবেন, স্বাভাবিক। উদ্বেগের কথা, রাজনীতিকদের আচরণে আশার বেলুনটি ক্রমে ফুলিতেছে। নেতা-মন্ত্রীদের সকল নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে টিকার আশ্বাস বা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর ‘বিশ্বমানব’-এর জন্য টিকা সরবরাহের কথার পরিণামে নাগরিকের এই প্রত্যাশা অমূলক নহে— টিকা সরকারের করায়ত্ত, নবজীবনপ্রাপ্তি সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু টিকা তৈরি, সরবরাহ ও প্রদানেরও একটি বিজ্ঞান আছে। তাহাতে বিস্তর সময় লাগিতে পারে। মানুষ টিকা পাইতে মরিয়া হইয়া উঠিলেও, ইহাই বাস্তব।

Advertisement

এবং কঠিনতর বাস্তব— টিকা লইয়া রাজনীতি এবং ব্যবসা। বিহারে সাম্প্রতিক নির্বাচনে দল ভোটে জিতিলে রাজ্যবাসীকে বিনামূল্যে করোনা-টিকার ঢালাও প্রতিশ্রুতি ছিল। অতিমারিহর এক বিজ্ঞানবস্তু কী করিয়া রাজনীতিক সিদ্ধির খেলায় অপহৃত হইয়া যাইতে পারে, ইহা তাহার উদগ্র উদাহরণ। ভারতের ন্যায় বিপুল জনসংখ্যার দেশে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সকলকে নিখরচায় টিকা দেওয়ার আশ্বাসবাক্যও ‘কথার কথা’ বলিয়া মনে হয়, যখন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব বিবৃতি দেন— সরকার সকলের টিকাকরণের কথা বলে নাই, উহা বুঝিবার ভুল। কয়েকটি রাজ্য বিনামূল্যে সার্বিক টিকাকরণের কথা বলিয়াছে, তাহা লইয়াও সংশয়। পশ্চিমবঙ্গে ভোট আসিতেছে, সেই আবহে রাজনৈতিক দলগুলি টিকাকে নির্বাচনী ইস্তাহারে জুড়িয়া নিলে বিচিত্র বোধ হইবে না। কোভিড-টিকার রাজনৈতিক হাতিয়ার হইয়া উঠিবার এই প্রবণতা শুধু সংশয় নহে, সংঘাতেরও কারণ হইতে পারে। তদুপরি যুক্ত হইয়াছে টিকা-পর্যটনের বেসাতি। কয়েকটি পর্যটন সংস্থা বিজ্ঞাপন দিয়াছে ব্রিটেন-ভ্রমণের, যাহার অন্যতম অঙ্গ কোভিডের টিকা। দেশে টিকা লইয়া দুর্নীতির আশঙ্কাও অমূলক নহে। সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া-র প্রধান বিবিধ বেসরকারি সংস্থাকেও টিকা বিক্রয়ের কথা জানাইয়াছেন। বেসরকারি ব্যবসায়িক সংস্থা বা গোষ্ঠীর হাতে টিকার মূল্য কত হইবে, কেহ জানে না। আশঙ্কা, ধনী বিদেশি নাগরিক ভারতে আসিয়া তাজ মহল ঘুরিয়া টিকা লইয়া যাইবেন, সাধারণ নাগরিক থাকিবেন অন্ধকারে।

তাহা হইলে ইতিকর্তব্য কী? দেশব্যাপী টিকাকরণের প্রক্রিয়াটিকে— তাহা যখনই হউক— সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ করা। টিকা কবে, কী ভাবে, কাহাকে দেওয়া হইবে, বিনামূল্যে দেওয়া হইবে কি না, আদৌ সকলকে দেওয়া হইবে কি না বা তাহার প্রয়োজন আছে কি না, সরকারের উচিত এই সকল কিছুই পরিষ্কার করিয়া, সমস্ত গণমাধ্যমের সাহায্য লইয়া নাগরিককে জানানো। তাহা না হইলে নাগরিকমনে বৃথা আশা ও বিভ্রান্তি বাড়িবে। আবার নাগরিকেরও টিকার আশ্বাস বা সাফল্যগাথা শুনিয়া আবেগে তাবৎ কাণ্ডজ্ঞান ভাসাইয়া দিলে চলিবে না। জীবনদায়ী টিকা লইয়া ক্ষুদ্র রাজনীতি বা স্বার্থান্ধ ব্যবসা না হয় তাহা নিশ্চিত করা সরকারের কাজ, নাগরিকেরও দায়িত্ব টিকাকরণের বিজ্ঞান সম্পর্কে সচেতন থাকা।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন