Prisoner

অ-মানবিক

বহু আবেদন সত্ত্বেও তাঁহাকে বেশ কিছু দিন অতিবাহিত করিতে হইয়াছিল সামান্য একটি জল খাইবার গেলাস এবং স্ট্র ছাড়াই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:০০
Share:

—প্রতীকী ছবি।

গণতান্ত্রিক ভারতে কতটা পথ হাঁটিলে তবে চশমা পাওয়া যায়? প্রশ্নটি তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, ভীমা কোরেগাঁও মামলায় অভিযুক্ত মহারাষ্ট্রের তলোজা জেলে বন্দি গৌতম নওলখা সামান্য একটি চশমা চাহিয়াও পান নাই। চশমা বিনা তিনি প্রায় দৃষ্টিহীন। তাঁহার নিজস্ব চশমাটি নভেম্বরের শেষে অতি সুরক্ষিত জেলের ভিতর হইতে ‘চুরি’ হইয়াছে। কিন্তু পরিজনেরা নূতন চশমা লইয়া গেলেও জেল কর্তৃপক্ষ সেটি গ্রহণ করেন নাই, ফেরত পাঠাইয়াছেন। প্রায় একই ঘটনা ইতিপূর্বে পরিলক্ষিত হইয়াছিল ভীমা কোরেগাঁও মামলায় অপর অভিযুক্ত ঝাড়খণ্ডের পাদ্রি স্ট্যান স্বামীর ক্ষেত্রেও। বহু আবেদন সত্ত্বেও তাঁহাকে বেশ কিছু দিন অতিবাহিত করিতে হইয়াছিল সামান্য একটি জল খাইবার গেলাস এবং স্ট্র ছাড়াই। তিনি পার্কিনসন্সের রোগী। তাঁহার কাছে গেলাস এবং স্ট্র-এর গুরুত্ব অপরিসীম। অথচ, গেলাস, স্ট্র এবং শীতের কিছু গরম কাপড় পাইতে তাঁহাকে দীর্ঘ আইনি পথ অতিক্রম করিতে হইয়াছে। একই চিত্র জেলবন্দি অধ্যাপক সোমা সেনের ক্ষেত্রেও। অতিমারি-কালে কো-মর্বিডিটি থাকিবার কারণে তাঁহার ক্ষেত্রে যে অন্তর্বর্তী-কালীন জামিনের আবেদন করা হইয়াছিল, তাহা খারিজ হয়। উপরন্তু, আর্থ্রাইটিসের কারণে তিনি যে খাটিয়ার আবেদন করিয়াছিলেন, সেটিও গ্রাহ্য হয় নাই।

Advertisement

এই আচরণকে অমানবিক বলিলেও কম বলা হয়। ইহা গণতন্ত্রের লজ্জা, বিচারব্যবস্থার লজ্জা, সর্বোপরি, দেশের লজ্জা। মহারাষ্ট্র সরকার তবে কী করিতেছে? বন্দিদের দৈনন্দিন প্রয়োজনগুলির প্রতি নজর রাখা কি তাহার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? এই বন্দিদের অনেকেই জামিন পাইবার যোগ্য, কারণ অপরাধ এখনও প্রমাণিত হয় নাই। সেই জামিন তো দূরস্থান, নানা ভাবে জেলের ভিতর তাঁহাদের হেনস্থার অভিযোগ উঠিতেছে। মনে রাখা প্রয়োজন, সমস্ত জেলবন্দির ন্যূনতম কিছু অধিকার আছে। দুর্ভাগ্য ইহাই, চশমা, শীতবস্ত্রের মতো নিতান্ত নিরীহ কিছু সামগ্রী তাঁহাদের হাতে তুলিয়া দিতেও জেল কর্তৃপক্ষকে সেই অধিকারের কথা বারংবার স্মরণ করাইয়া দিতে হইতেছে। ঔপনিবেশিক আমলে এমন আচরণ প্রত্যক্ষ করা যাইত। তবে, সেইখানেও অনেক ক্ষেত্রে বন্দিদের ন্যূনতম কিছু সুবিধা প্রদান করা হইত। কাগজ-কলম, ঔষধের ব্যবস্থা করা হইত। আশ্চর্য, একটি রাজ্যের নির্বাচিত সরকারের ব্যবহার ক্ষেত্রবিশেষে সেই আমলকেও লজ্জা দিবে। যে সংবেদনশীলতা যে কোনও সভ্য দেশের সরকারের কাছেই কাম্য ছিল, সেই বোধ জাগাইতে আদালতকে আসরে নামিতে হইতেছে। বলিতে হইতেছে— মানবিকতা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাহাকে উপেক্ষা করা উচিত নহে।

বস্তুত, বন্দিদের অধিকারগুলি অগ্রাহ্য করিবার একটি ধারা এই দেশে দীর্ঘ কাল ধরিয়া প্রচলিত। সম্প্রতি তাহা আরও বৃদ্ধি পাইয়াছে। প্রায়শই সরকার-বিরোধিতা আর অমানবিকতা একত্রে উচ্চারিত হইতেছে। ধরিয়া লওয়া হইতেছে, যিনি সরকারের সমালোচনা করিতে পারেন, তিনি ন্যূনতম মানবিক ব্যবহারটুকুও পাইবার যোগ্য নহেন। তাঁহার পরিজনদের সঙ্গে দেখা করিবার অধিকার নাই, নিয়মিত ফোনে কথা বলিবারও অধিকার নাই। এই প্রবণতা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক। আধুনিক ভারতে এই বিপজ্জনক প্রবণতারই সাড়ম্বর উদ্‌যাপন চলিতেছে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন