কে কাহার অলঙ্কার

‘এমেরিটাস’ অধ্যাপক পদটি (মহিলাদের ক্ষেত্রে, এমেরিটা) সাধারণ পদ নহে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবেচনায় যে প্রবীণ অধ্যাপকের যোগ্যতা প্রশ্নাতীত, তাঁহাকেই আজীবন কালের জন্য এই সাম্মানিক পদে নিযুক্ত করা হয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share:

রোমিলা থাপার। ফাইল চিত্র।

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটা অধ্যাপকের পদ রোমিলা থাপারের অলঙ্কার, না কি, রোমিলা থাপারের ন্যায় বিপুল আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এক ইতিহাসবিদকে প্রতিষ্ঠানের সহিত যুক্ত রাখিতে পারা বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষে গৌরবের, তাহা লইয়া গত পৌনে তিন দশকে কোনও সংশয় ছিল না। অনুমান করা চলে, পূর্ববর্তী জমানার শাসকরা শিক্ষার মর্ম বুঝিতেন। এখন জেএনইউ-এর কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক থাপারের নিকট তাঁহার ‘কারিকুলাম ভিটে’ বা সিভি চাহিয়াছেন— তিনি এমেরিটা অধ্যাপকের পদে থাকিবার যোগ্য কি না, তাহা বিচার করিতে। ঘটনাক্রমটি জনসমক্ষে প্রকাশিত হওয়ায় বিদ্বৎমহলে কাহার যোগ্যতা লইয়া প্রশ্ন উঠিতেছে, মামিডালা জগদীশ কুমাররা সম্ভবত টের পাইতেছেন। অথবা, সেটুকু বুঝিবার ক্ষমতাও হয়তো তাঁহাদের নাই— তাঁহারা কেবলই ভক্তিরসে জারিত। তাঁহাদের জানাইয়া রাখা যাউক, নিজেদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তাঁহারা আরও এক বার প্রতিষ্ঠানটির মুখ পুড়াইলেন। নিজেদেরও।

Advertisement

‘এমেরিটাস’ অধ্যাপক পদটি (মহিলাদের ক্ষেত্রে, এমেরিটা) সাধারণ পদ নহে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবেচনায় যে প্রবীণ অধ্যাপকের যোগ্যতা প্রশ্নাতীত, তাঁহাকেই আজীবন কালের জন্য এই সাম্মানিক পদে নিযুক্ত করা হয়। মনে করা হয়, প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁহার সংযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুকুটে বাড়তি পালক যোগ করিবে। এক বার এই পদ প্রদান করিবার পর পুনরায় তাঁহার যোগ্যতা বিচার করা চলে না। কারণ, অতীত কাজের মূল্যায়ন করিবার পরই পদটি তাঁহাকে প্রদান করা হইয়াছে। পদপ্রাপ্তির পর তাঁহার যোগ্যতার পুনর্বিবেচনার আর কোনও অবকাশ থাকে না। তিনি রোমিলা থাপার হইলেও না, পদার্থবিজ্ঞানী আর রাজারামন বা সমাজবিজ্ঞানী টি কে উমেন হইলেও না। থাপারের সঙ্গেই তাঁহারাও একই চিঠি পাইয়াছেন। তাঁহারা প্রত্যেকেই নিজ কর্মজগতে নক্ষত্রস্বরূপ। রাতারাতি কমিটি গড়িয়া তাঁহাদের যোগ্যতার পুনর্বিবেচনার ভাবনার মধ্যে এক উগ্র ঔদ্ধত্য এবং অসভ্যতা প্রকট। এমন অসভ্যতার জুড়ি মেলা দুষ্কর। তাহা সত্ত্বেও যে জেএনইউ কর্তৃপক্ষ এই নজিরবিহীন ঘটনা ঘটাইলেন, অনুমান করা চলে, তাহার প্রকৃত কারণ রোমিলা থাপারের সরকার-বিরোধী ভাবমূর্তি। বামপন্থী ইতিহাসবিদ হিসাবে পরিচিত থাপার বহু বার বিজেপি সরকারের পদক্ষেপগুলির কঠোর সমালোচনা করিয়াছেন। এই অপমানের কারণ সম্ভবত তাহাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব যুক্তি বলিতেছে, পঁচাত্তরোর্ধ্ব এমেরিটাস অধ্যাপকদের নিকট শুধুমাত্র জানিতে চাওয়া হইয়াছে, তাঁহারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযোগ অক্ষুণ্ণ রাখিতে সম্মত কি না। বয়স, সক্ষমতা প্রভৃতির বিচারে বিশ্ববিদ্যালয় সেই সম্মতি চাহিতে পারে। কিন্তু তাঁহাদের মনে করাইয়া দেওয়া প্রয়োজন যে, সম্মতি চাহিবার ভিন্নতর, মার্জিততর পন্থা আছে। সেখানে প্রবীণ অধ্যাপকদের চিঠি পাঠাইয়া সিভি তলবের প্রয়োজন পড়ে না। প্রয়োজন পড়ে না নিজ-কার্যের সাফাই গাহিতে এমআইটি এবং প্রিন্সটনের তুলনা টানিবারও। এমেরিটাস পদটির ক্ষেত্রে এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতির সঙ্গে জেএনইউ-এর নীতির দৃশ্যতই তফাত আছে। সুতরাং, ‘উহারা করিতেছে, আমরা করিব না কেন’র অক্ষম যুক্তিও এই বিরাট কলঙ্ক ঢাকিতে পারিল না।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন