প্রচারে নেই, প্রবীণ নেতা এখন ইতিহাস
বিস্মৃত: লালকৃষ্ণ আডবাণী
গুজরাতে ভোটপ্রচারের জন্য বিজেপি তারকা প্রচারকদের যে তালিকা তৈরি করেছে, তাতে নাম নেই লালকৃষ্ণ আডবাণীর। অবশ্য উত্তরপ্রদেশের গত নির্বাচনী প্রচারেও তাঁর নাম ছিল না। তবু গাঁধীনগর থেকে তিনি লোকসভায় নির্বাচিত, তাই অনেকে ভেবেছিলেন, হয়তো ওঁর সম্মানে নামটা থাকবে। নাম না রেখে বিজেপি নেতৃত্ব বুঝিয়ে দিল, আডবাণী আজ ইতিহাস। অগ্রিম অনুমান, আডবাণীকে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটেও টিকিট দেওয়া হবে না। হাল ছেড়েই কি আডবাণী বিক্ষুব্ধ, বহিষ্কৃত নেতা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সুরেশ মেটার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সম্প্রতি আমদাবাদ চলে গেলেন? ৮ নভেম্বর নব্বইয়ে পা দেবেন, বাড়ির অনুষ্ঠানে নিশ্চয়ই আসবেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ। তার আগেই এই ঘটনা।
অভাব হবে না
অতীতে রাজা-বাদশারা ছদ্মবেশে রাস্তায় ঘুরতেন। খোঁজ নিতেন, রাজ্যের প্রজারা কেমন আছে। এ যুগেও তেমন ঘটনা ঘটে। মাস তিনেক আগে নিম্ন আদালতে কেমন কাজ চলছে, জানার জন্য দিল্লি হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি গীতা মিত্তল সরকারি গাড়ি ছেড়ে অটোয় পাটিয়ালা হাউস কোর্টে হাজির হয়েছিলেন। কোর্টের বিচারকরা চমকে উঠেছিলেন প্রধান বিচারপতি অটোয় এসে হাজির হওয়ায়। আইন মন্ত্রকে গুঞ্জন, বিচারপতি মিত্তলকেই এ বার কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি করে পাঠানো হতে পারে। কলকাতা হাই কোর্টে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দিয়েই কাজ চালানো হচ্ছে। হাই কোর্টের আইনজীবীরা বলছেন, বিচারপতি কলকাতায় গেলে নিম্ন আদালতে হানা দেওয়ার জন্য অটোরও অভাব হবে না!
দৌড়ে কে
অ্যাটর্নি জেনারেল পদে কে কে বেণুগোপাল থিতু হতে না হতেই সলিসিটর জেনারেল রঞ্জিত কুমার পদত্যাগ করেছেন। মোদী, জেটলি, রবিশংকর প্রসাদ খোঁজ করছেন, কাকে কেন্দ্রের হয়ে আইনি যুদ্ধে নামানো হয়। কালো টাকা থেকে গোরক্ষক বাহিনীর মামলায় সরকারের হয়ে আইনি লড়াই করেছিলেন রঞ্জিত কুমার। তাঁর জায়গায় মহেশ জেঠমলানীকে আনা হতে পারে বলে জোর গুঞ্জন ছিল। মহেশ রাম জেঠমলানীর পুত্র। প্রাক্তন বিজেপি নেতা ইদানীং বিজেপি নেতাদের উপরেই ক্ষুব্ধ। প্রশ্ন উঠেছে, মোদী সরকারের উপর পিতার ক্ষোভ কমাতেই কি ছেলেকে সলিসিটর জেনারেল করা? মহেশ জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে সরকারের কোনও কথা হয়নি। যা পরিস্থিতি, অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটারই পদোন্নতি হতে পারে। গুজরাতের এই আইনজীবী অমিত শাহর পুত্র জয়ের হয়ে মামলা লড়েছিেলন। আর এক অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল মণীন্দ্র সিংহও দৌড়ে।
সুপ্রিম প্রচার
প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের আমলে ঝুলে থাকা মামলার সংখ্যা কত কমেছে, তা নিয়ে প্রচার করছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের তরফে এই প্রচার অভূতপূর্ব হলেও এর মধ্যে কোনও ভুল দেখছেন না কেউ। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঙ্গনাথ মিশ্রের ভাইপো দীপক মিশ্র ২৮ অগস্ট সুপ্রিম কোর্টের শীর্ষপদের দায়িত্ব নিয়েছেন। হিসেব অনুযায়ী, তখন ঝুলে থাকা মামলার সংখ্যা ছিল ৫৭,৭৭৪। দু’মাসে কমেছে ২,১৭৪। এই দু’মাসে নতুন মামলা হয়েছে ৭,০২১টি। কিন্তু ৯,১৯৫টি মামলার ফয়সালাও হয়েছে। ঝুলে থাকা মামলার সংখ্যা ৬০ হাজারের কমে ধরে রাখাকে সাফল্য বলেই দাবি বিচারপতিদের।
নির্মলার পদক্ষেপ
দৃষ্টান্ত: নির্মলা সীতারামন
দেশের প্রথম মহিলা প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়েছেন নির্মলা সীতারামন। সাউথ ব্লকে এসে আর একটি ইতিহাসও তৈরি করেছেন তিনি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রথম মহিলা মুখপাত্র হিসেবে নিয়ে এসেছেন মাট্টু জে পি সিংহকে। ইন্ডিয়ান ইনফর্মেশন সার্ভিস-এর এই অফিসার এত দিন বাণিজ্য মন্ত্রকের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করতেন। নির্মলা এত দিন বাণিজ্য মন্ত্রকেই ছিলেন। তখন থেকেই তাঁর আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন মাট্টু। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইন্দিরা গাঁধী এক সময়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক নিজের হাতে রেখেছিলেন। সে দিক থেকে নির্মলাই প্রথম পূর্ণ সময়ের মহিলা প্রতিরক্ষামন্ত্রী। আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় অবশ্য অনেক দেশেই মহিলা প্রতিরক্ষামন্ত্রী রয়েছেন। তাঁদেরই এক জন, ফ্রান্সের ফ্লোরেন্স পারলি সম্প্রতি ভারতের রাজধানী ঘুরে গেলেন। সাউথ ব্লকের লনে লাল কার্পেটে হাঁটলেন দুই মহিলা প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
কেবলই ছবি
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি অফিস সাউথ ব্লকে। স্যর লুটিয়েন-এর ঐতিহাসিক নির্মাণ এই সাউথ ব্লকের প্রধানমন্ত্রীর দফতরে বসেছেন জওহরলাল নেহরু নিজেও। দোতলায় অতিথিকক্ষের দেওয়ালে ১৯২৫ সালে একটি তৈলচিত্র আঁকানো হয় হিন্দু চতুরাশ্রম— ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস— নিয়ে। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র— চারটি চরিত্রের ছবিও আছে। ছবির শিল্পী মুম্বইয়ের জি এইচ নাগরকর। আজ বিজেপি যখন হিন্দুত্ব নিয়ে মুখর, তখন ১৯২৫ সালে আঁকা এই ছবি ঝুলছে সরকারি অফিসে। ছবির শিরোনাম ‘হিন্দু আর্য জীবনের বিবর্তন’।
জয়ন্ত ঘোষাল, প্রেমাংশু চৌধুরী