Delhi Diary

দিল্লি ডায়েরি: তুমি গেছ, গরিমা গেছে, কফিশপ এসেছে?

নতুন ভবনে সাংসদদের লাউঞ্জ অনেকটা কফিশপের মতো। সেন্ট্রাল হলও নেই। কফিশপে কেজো কথা হয়। মনের কথা বলা যায় না।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী, অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:৩৫
Share:

দিল্লি ডায়েরি। —ফাইল চিত্র।

নতুন সংসদ ভবনকে কেউ বলছেন পাঁচতারা হোটেল। কেউ বলছেন নতুন বিমানবন্দর। কেউ বলছেন শপিং মল বা মাল্টিপ্লেক্স। বিরোধী শিবির একমত, ঝাঁ-চকচকে ভবনটিতে পুরনো ভবনের গরিমার অভাব। রাহুল গান্ধী অবশ্য মহিলা সংরক্ষণ বিলের আলোচনার সময় নতুন ভবনের প্রশংসা করেছেন। কিন্তু সাংসদরা বলছেন, পুরনো ভবনে খোলা করিডরে হাঁটতে হাঁটতে অন্য দলের সাংসদদের সঙ্গে দেখা হত। সেন্ট্রাল হলের আড্ডায় রাজনৈতিক ভেদাভেদ মুছে যেত। নতুন ভবনে সাংসদদের লাউঞ্জ অনেকটা কফিশপের মতো। সেন্ট্রাল হলও নেই। কফিশপে কেজো কথা হয়। মনের কথা বলা যায় না। যে সাংসদদের জন্য সংসদ, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই সংসদ ভবন বানিয়ে দিলে এমনটাই হয়। কংগ্রেস সাংসদ শক্তিসিন গোহিল ফুট কাটলেন, এটা মাল্টিপ্লেক্স হয়েছে, শুধু পপকর্নটাই নেই।

Advertisement

দূরত্ব বাড়ল

পুরনো সংসদ ভবনে লোকসভায় সাংবাদিকদের প্রেস গ্যালারি ছিল স্পিকারের আসনের ঠিক উপরে। আর রাজ্যসভায় শাসক শিবিরের বেঞ্চের ঠিক পিছনে, উপর দিকে। ফলে সাংসদদের সঙ্গে মন্ত্রী, সাংবাদিকদের চোখাচোখি হলে হাসি বিনিময় হত। মন্ত্রী, সাংসদেরা বক্তৃতা শুরুর আগে প্রেস গ্যালারিতে ভিড় মেপে নিতেন। আঞ্চলিক নেতারা দেখে নিতেন রাজ্যের সাংবাদিকরা আছেন কি না। নতুন সংসদ ভবনে বিশালকায় লোকসভা ও রাজ্যসভায় সাংসদদের সঙ্গে প্রেস গ্যালারির দূরত্ব বেড়েছে। মনে হচ্ছে, দূরবিন থাকলে মন্দ হত না। নতুন রাজ্যসভায় প্রথম দিন কংগ্রেসের নেতাদেরও বোধ হয় সেটাই মনে হল। পি চিদম্বরম থেকে দীপেন্দ্র হুডা, অনেকেই চোখের সামনে দু’হাতের আঙুল পাকিয়ে দূরবিনের মতো করে প্রেস গ্যালারির দিকে তাকালেন।

Advertisement

আকর্ষণ: রাজধানীর নতুন সংসদ ভবন নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই। —ফাইল চিত্র।

খড়্গের নিশানায়

নতুন সংসদ ভবনের প্রথম দিনের অধিবেশনেই রাজ্যসভায় ধুন্ধুমার। আশা ছিল, প্রথম দিনের অধিবেশনে মিঠে আবহাওয়া থাকবে। কড়া কথা হবে না। কিন্তু রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সামনে পেয়ে প্রথম দিন থেকেই কটাক্ষ শুরু করলেন। বিজেপি তাঁকে থামাতে পারে না। সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী অনুরোধ করলেন, প্রথম দিন যেন আক্রমণ বন্ধ থাকে। রাজ্যসভার দলনেতা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল বললেন, “আমার কথা তো শোনেন না। প্রহ্লাদ আপনার রাজ্য কর্নাটকের। তাঁর কথা অন্তত শুনুন।” খড়্গে চটে গিয়ে বললেন, “উনি দিল্লিতে কী করেন, আর কর্নাটকের গলিতে কী করেন, তা আমার জানা আছে!” শুনে খোদ নরেন্দ্র মোদী দুলে দুলে হাসতে শুরু করলেন।

ইনদওরের গৌরব

পর পর ছ’বার ইনদওর দেশের পরিচ্ছন্নতম শহরের তালিকায়। ইনদওরে স্মার্ট সিটি কনক্লেভের বক্তৃতায় রহস্য ভাঙলেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। বললেন, শহরবাসীর সচেতনতাই চাবিকাঠি। দিল্লির এক সাংবাদিক ইনদওর ঘুরে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, তিনি ট্যাক্সির জানলা দিয়ে রাস্তায় খাবারের প্যাকেট ছুড়ে ফেলেছিলেন অন্যমনস্ক ভাবে। গাড়ি থামিয়ে ট্যাক্সিচালক সেটি কুড়িয়ে নেন। বলেন, বিষয়টি ইনদওরের ‘ইজ্জত’-এর সঙ্গে যুক্ত। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, স্বচ্ছ ভারত অভিযান ইনদওরে এ ভাবেই জনতার অভিযান হয়ে উঠেছে, তাই শহরটি এত ঝকঝকে।

সংস্কৃতি: মাটির পুতুলে নবান্ন উৎসব। —ফাইল ছবি।

নবান্নের দিল্লিযাত্রা

নতুন সংসদ ভবনে নবান্ন! তবে হাওড়ার নবান্ন, মানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের রাজ্য সচিবালয় নয়। নতুন সংসদ ভবনে স্থাপত্য, সংস্কৃতি, সংবিধান নিয়ে তৈরি গ্যালারিতে বিভিন্ন রাজ্যের লোকনৃত্য মাটির পুতুল দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে রয়েছে নবান্ন উৎসবের নাচ। বেছে বেছে নবান্ন— এমন কাকতালীয় কাণ্ডে সংসদের বাঙালি কর্মীরা বিস্মিত। তৃণমূল বলছে, এ হল আগামীর বার্তা।

আলোচনা স্থগিত

আপাতত মুলতুবি ‘এক দেশ এক ভোট’ নিয়ে আলোচনা। কেন্দ্র এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে, শীর্ষে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। ২৩ সেপ্টেম্বর প্রথম বৈঠকে বসে কমিটি। কথা ছিল দু’সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় বৈঠক বসবে। কিন্তু খবর, কোবিন্দ ব্যক্তিগত কাজে আমেরিকা যাচ্ছেন, ফিরবেন অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। ফলে, আপাতত প্রচারের আলো থেকে দূরেই থাকবে ‘এক দেশ এক ভোট’।


(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন