Editorial News

সাংবিধানিক কাঠামোয় আঘাত হানলে বিপন্ন হবে গণতন্ত্রই

দিলীপ ঘোষের দাবি-বক্তব্য ঠিক না বেঠিক, সেই আলোচনার চেয়েও আসলে বড় এই প্রবণতা। এই দেশের প্রতিটি প্রান্ত সাংবিধানিক গ্রন্থির এক সূত্রে বাঁধা। সেই কাঠামোয় আঘাত আসার নিরবচ্ছিন্ন প্রবণতা যদি দেখা যায়, তবে সতর্ক হওয়ার সময় আসে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৫১
Share:

দিলীপবাবু বলেছেন, তাঁরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বলেছেন, এর পর যেন কেন্দ্র এই রাজ্যের সরকারের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক না রাখে, কোনও সাহায্যও না করে। ——ফাইল চিত্র।

সমাজ ও রাষ্ট্রবিধি সংক্রান্ত বিষয়ে রাজনীতিকদের ণত্ব-ষত্ব জ্ঞান প্রবল, এমন বক্তব্য যে বস্তুত সোনার পাথরবাটির সমতুল, সেটা বোঝার জন্য দার্শনিক হওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু সেই জ্ঞানের অভাবও যখন বেলাগাম ও দুর্নিবার ভঙ্গিতে বেআব্রু হয়, তখন কিঞ্চিৎ বিচলন হয় বইকি! যেমনটা হল বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কিছু কথায়।

Advertisement

এ নিয়ে কোনও সংশয় নেই, স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন পালনের মতো কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শুক্রবার কলকাতা যে রাজনৈতিক হামলা-সংঘর্ষ দেখল, তা এক কথায় ন্যক্কারজনক। যুব বিজেপি কর্মীদের মিছিলের উপর তৃণমূলের আক্রমণ, হাইকোর্টের স্পেশাল অফিসারের গাড়ি ভাঙচুর— একের পর এক যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তার প্রতিবাদ জানানো, মেয়ো রোডে দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে বিজেপি-র অবস্থান— এই সবই গণতন্ত্রের কাঠামোয় সঙ্গত পথ এবং দিলীপবাবুরা সেটাই করেছিলেন।

কিন্তু গোলযোগটা এর পরেই। যে দল কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসীন, সংসদীয় গণতন্ত্রের পথে দীর্ঘদিনের যাত্রী, তার একটি রাজ্য শাখার সভাপতি যদি রাজনৈতিক কাঠামোর সঙ্গে সাংবিধানিক কাঠামোর সম্পর্কটা গুলিয়ে ফেলেন, তখন উদ্বেগ হয়। দিলীপবাবু বলেছেন, তাঁরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বলেছেন, এর পর যেন কেন্দ্র এই রাজ্যের সরকারের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক না রাখে, কোনও সাহায্যও না করে। তাঁর এই নাবালকসুলভ বক্তব্যটি শুধু অনৌচিত্যদোষে দুষ্টই নয়, অনৈতিকও। দু’টি দলের রাজনৈতিক টানাপড়েন বা চাপানউতোর নির্বিশেষেই যে এই দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোটি বলবৎ, দিলীপ ঘোষেরা এই সত্য জানেন না, এটা ভাবলে ভুল হবে। জানেন এবং জেনেও এ হেন একটি বক্তব্য প্রকাশ্যে আনার পিছনে একটা বিধ্বংসী ধৃষ্টতা আছে, যার নানান নির্দশন এখন সমাজ ও রাজনীতিতে মাঝেমধ্যেই সামনে আছে। অতএব, যে রীতি-নীতির চর্চা এ যাবৎ ছিল যথোচিত, সেখানে আলোড়ন আসছে, সেই ঔচিত্যবোধে আঘাত আসছে, চূর্ণ হয়ে যাচ্ছে দীর্ঘলালিত ভাবনা ও বিশ্বাসের বোধ। অতএব, রাজ্য সরকারের আমন্ত্রণে কোনও অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় কোনও মন্ত্রী আসবেন কি না, এই ঘোষণা আসছে অ-সরকারি মুখে। দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী আসছেন না!

Advertisement

আরও পড়ুন
রাজ্যকে সাহায্য নয় আর, দিল্লিকে আর্জি দিলীপের

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

দিলীপ ঘোষের দাবি-বক্তব্য ঠিক না বেঠিক, সেই আলোচনার চেয়েও আসলে বড় এই প্রবণতা। এই দেশের প্রতিটি প্রান্ত সাংবিধানিক গ্রন্থির এক সূত্রে বাঁধা। সেই কাঠামোয় আঘাত আসার নিরবচ্ছিন্ন প্রবণতা যদি দেখা যায়, তবে সতর্ক হওয়ার সময় আসে।

অতন্দ্র প্রহরার সময় এখন। সেই প্রহরী কিন্ত লাল কার্ড দেখাবে দিলীপবাবুকে যেমন, তেমনই দেখাবে বিজেপি-র মিছিলে হামলাকারী তৃণমূল কর্মীদেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন