সম্পাদকীয় ২

লজ্জাজনক

কূটনীতি বিষয়টি নরেন্দ্র মোদী সরকারের অনধিগতই থাকিয়া গেল, সাড়ে চার বৎসর পরও। কর্তারপুর সাহিব করিডর লইয়া সরকারের কাণ্ডকারখানা দেখিয়া এই সিদ্ধান্ত ছাড়া গতি নাই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:২২
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই

কূটনীতি বিষয়টি নরেন্দ্র মোদী সরকারের অনধিগতই থাকিয়া গেল, সাড়ে চার বৎসর পরও। কর্তারপুর সাহিব করিডর লইয়া সরকারের কাণ্ডকারখানা দেখিয়া এই সিদ্ধান্ত ছাড়া গতি নাই। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে প্রথম যখন এই করিডরটির কথা উঠিয়াছিল, তখন প্রধানমন্ত্রীর অফিস হইতে কেবল ইহাকে স্বাগত জানানো হয় নাই, উল্লাসের চোটে ইহাকে বার্লিন প্রাচীরের পতনের সহিত তুলনা করা হইয়াছিল। সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার হিসাব থাকে কিন্তু ভারতের বর্তমান সরকারের মেজাজমর্জির জোয়ার ও ভাটার কথা বিশেষজ্ঞরাও বলিতে পারিবেন না। সুতরাং কিছু দিন পরই যখন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ পাকিস্তানের আমন্ত্রণ সপাটে প্রত্যাখ্যান করিলেন, কেহ বিস্মিত হইয়া থাকিলে সে তাঁহার নিজের অনভিজ্ঞতা মাত্র। সুষমার মতে, পাকিস্তান করিডর খুলিতে চাহে খুলুক কিন্তু ভারতের দিক হইতে এ হেন কূটনীতি আগাইয়া লইয়া যাইবার প্রশ্নই নাই। প্রধানমন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রীর এই দ্বিমুখী প্রতিক্রিয়া হইতে আর একটি সিদ্ধান্তও সহজ।

Advertisement

বর্তমান ভারত সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সামঞ্জস্য নাই, বিভিন্ন নেতানেত্রীর মধ্যে মতৈক্য তো দূরস্থান। অন্তত বিদেশনীতির ক্ষেত্রে যে সরকারকে একটি কণ্ঠে কথা বলিতে হয়, নেতারা যে নিজ নিজ মতানুযায়ী চলিবার স্বাধীনতা ভোগ করিতে পারেন না— পাঁচ বৎসরের শাসন শেষ হইতে চলিলেও এই গোড়ার কথাটি নরেন্দ্র মোদী সরকার শেখে নাই। এই ব্যর্থতা আরও প্রকট হইয়া ওঠে পাকিস্তানের সহিত তুলনা করিলে। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে পাকিস্তানকে অনেক সময়ই প্রহেলিকা বলা হয়। সে দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতাকেন্দ্র ও সামরিক ক্ষমতাকেন্দ্রের মধ্যে একটি অলঙ্ঘনীয় দূরত্বের কারণেই এই প্রহেলিকার জন্ম, এমনও বলা হয়। কিন্তু লক্ষ্যণীয়, কর্তারপুর করিডর উপলক্ষে পাকিস্তানি অবস্থানের মধ্যে কালভেদে কিংবা পাত্রভেদে কোনও তারতম্য অনুভূত হয় নাই। সদ্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও বর্তমান সামরিক প্রধান বাজওয়া প্রায় একই উৎসাহের সহিত এই প্রয়াসকে স্বাগত জানাইলেন। ইমরান খানের সহিত রাওয়ালপিন্ডির সামরিক হেডকোয়ার্টার্সের নৈকট্যকে যাঁহারা ইহার কারণ হিসাবে দেখাইতে চাহেন, তাঁহাদের মনে করাইয়া দেওয়া কর্তব্য, ভারতের ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রীর অবস্থানে নৈকট্য থাকিবারই কথা ছিল, তাঁহারা দুই জনেই যখন এক দল এক সরকারের নেতা।

বাস্তবিক, পাকিস্তানের ক্ষেত্রেই গত সাড়ে চার বৎসরে মোদী সরকারকে সর্বাধিক পরিমাণ ডিগবাজি খাইতে দেখা গিয়াছে। কখনও প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ় শরিফের বাড়িতে সৌহার্দ্য-বিনিময়, কখনও উপদেষ্টা স্তরের কূটনৈতিক বৈঠকেও প্রবল আপত্তি। খেয়াল করা যাইতে পারে, যখনই এই সরকার কোনও কারণে বিপন্ন বোধ করিয়াছে, তখনই পাকিস্তানের সহিত শত্রুতার ভাবটি কয়েক দাগ বাড়াইয়া দিয়াছে। অর্থাৎ বিদেশনীতিকে ব্যবহার করা হইয়াছে দেশের অভ্যন্তরীণ দলীয় সমর্থকদের প্রীত রাখিতে। ইহা অপেক্ষা অন্যায় আর কিছু হইতে পারে না। এই দিক দিয়া ভারতের আন্তর্জাতিক মর্যাদা একক হাতে ধ্বস্ত করিয়া দিয়াছে মোদী সরকার। কর্তারপুর এ দেশের সেই মর্যাদাহানির তালিকায় শেষতম নাম।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন