International News

এই কুক্ষিগত সমৃদ্ধি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে

বেশ অনেকগুলো বছর পর ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের মঞ্চে ভাষণ দিলেন ভারতের কোনও প্রধানমন্ত্রী। আর ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম বার ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের নেতৃত্ব তথা বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিগুলির নেতৃত্ব এত উৎসাহ নিয়ে, এত আগ্রহ নিয়ে এবং এত গুরুত্ব দিয়ে শুনলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কথা।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৩৬
Share:

নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

পাহাড়ের যে ঢালে জল ভরা মেঘ বাধা পেয়ে বিপুল বর্ষণ ঘটায়, তার ঠিক বিপরীত ঢালটাকেই বর্ষণ-বঞ্চিত হয়ে থাকতে হয়। প্রদীপ যতই উজ্জ্বল আলোর উৎস হোক, তার আধার পিলসুজকে চির আঁধারের রাজত্বেই থাকতে হয়। বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত-বর্ধমান অর্থনীতিগুলির অন্যতম হিসেবে স্বীকৃত দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী যখন বিশ্ব অর্থনৈতিক মঞ্চে সমাদরের মধ্যমণি হন, তখনই খবর আসে, ধনবৈষম্য আরও অসহনীয় হয়ে উঠেছে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রটিতে।

Advertisement

বেশ অনেকগুলো বছর পর ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের মঞ্চে ভাষণ দিলেন ভারতের কোনও প্রধানমন্ত্রী। আর ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম বার ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের নেতৃত্ব তথা বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিগুলির নেতৃত্ব এত উৎসাহ নিয়ে, এত আগ্রহ নিয়ে এবং এত গুরুত্ব দিয়ে শুনলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কথা।

সাধু, সাধু। জগৎ সভায় ভারতের এই উচ্চ আসন নিঃসন্দেহে গরিমার বিষয়। অতএব আনন্দেরও বিষয়। কিন্তু আনন্দিত হওয়া গেল আর কোথায়? অক্সফ্যামের সমীক্ষা জানাল, সম্পদের বণ্টনে অসাম্য প্রবল ভারতে এবং তা ঊর্ধ্বমুখীও। ভারতীয় অর্থনীতি ক্রমশ সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর। কিন্তু সে সমৃদ্ধির প্রসাদ জনসংখ্যার সব স্তরে পৌঁছয় না। সমৃদ্ধির প্রায় পুরোটাই ভাগাভাগি হয়ে যায় সর্বাধিক বিত্তশালীদের মধ্যে।

Advertisement

আরও পড়ুন: দাভোস-মঞ্চে ট্রাম্পকে খোঁচা মোদীর

কথা ছিল সবার পাশে থাকার। কথা ছিল সকলকে সমৃদ্ধির শরিক করার। প্রতিশ্রুতি তো তেমনই দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদীরা। কিন্তু বাস্তবের আয়নায় যে ছবিটা ধরা পড়ছে, সে তো সম্পূর্ণ অন্য এক আখ্যান শোনাচ্ছে। জনসংখ্যার ১ শতাংশের হাতে সম্পদের ৭৩ শতাংশ সমন্বিত হওয়ার ছবি দেখাচ্ছে সে আয়না।

সমৃদ্ধির পথে সবচেয়ে দ্রুত এগোতে থাকা অর্থনীতিগুলির অন্যতম যে ভারত, গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক নেতৃত্বের কাছে আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু আজ যে ভারত, ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর প্রতিশ্রুতি দেওয়া রাজনৈতিক দলের শাসনে রয়েছে যে ভারত, সেই ভারতের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিই এত কুক্ষিগত! সেই ভারতে ধনবৈষম্য এমন ভয়াবহ দৃষ্টিকটূ! এ বৈপরীত্য আমরা রাখব কোথায়?

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

প্রদীপের নীচেই অন্ধকার হয়, আমরা জানি। পাহাড়ের প্রতিবাত ঢালটার ঠিক পিঠোপিঠি অবস্থান করে পাহাড়টার যে অন্য প্রান্ত, সেই প্রান্তই বৃষ্টি থেকে অনেকখানি বঞ্চিত রয়ে যায়, সেও আমরা জানি। কিন্তু এ সবই তো রূপক, এরা তো অনিবার্যতার সূচক নয়। নিদারুণ বৈপরীত্যগুলো তুলে ধরে এ সব রূপক তো আসলে নেতির বিরুদ্ধেই সরব হয়, আঁধার কাটানোর পক্ষেই সওয়াল করে। আমরা সে কথা বুঝিও। তা সত্ত্বেও আঁধার কেন কাটাতে পারি না, কেন প্রদীপের নীচে আরও গাঢ় হয় অন্ধকার বরং? এ প্রশ্নের জবাব কিন্তু এখনই খোঁজা দরকার। না হলে বাড়তে থাকা ধনবৈষম্য, সম্পদের অসম বণ্টন, কুক্ষিগত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অচিরেই টলিয়ে দেবে কোটি কোটি আস্থার ভিত। রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের আস্থার ভিত টলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়াও যে বিপজ্জনক, ভারতের শাসকরা তা নিশ্চয়ই বোঝেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন