Bengali Pride

‘আমি তারই হাত ধরে সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে আসি’

প্রাদেশিক হব না, প্রাদেশিকতার মতো সঙ্কীর্ণতার কাছে নিজেকে সঁপে দেব না— এই আত্মশ্লাঘার বশে পড়ে বাঙালি নিজের অস্তিত্বই যখন প্রায় ভুলতে বসেছে, যখন তার ভাষা বিপন্ন, যখন সর্বভারতীয় স্তরে তার তেমন কোনও সাফল্য নেই, তখন কি তাকে রাজ্যে রাজ্যে আরও কোণঠাসা করে দেওয়া হচ্ছে?

Advertisement

অনিন্দ্য জানা

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৫ ০৭:৫৯
Share:

বাংলাদেশে বাংলা ভাষা নিয়ে যে পরিমাণ আবেগ দেখেছি, তার ছিটেফোঁটাও এপারে নেই। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম। গ্রাফিক সহায়তায়: এআই।

মুম্বই থেকে অনুজপ্রতিম সাংবাদিকের ফোনে খানিক বিস্ময়, ঈষৎ আহত ভাব। কিন্তু বেশিটাই উষ্মা এবং ক্রোধ। তার পাঠানো ডেসপ্যাচে ঘটনার বিবরণ নিম্নরূপ।

Advertisement

— অ্যাপ ক্যাবে অফিস যেতে যেতে কলকাতার এক বন্ধুর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলছি। ফোনটা রাখার পর শুনি ক্যাব ড্রাইভারটা আমায় বলছে, ‘‘আপ বাংলাদেশি হো?’’ ভাবতে পারো? আমি বললাম, কেন? ব্যাটা বলে, বাংলায় কথা বলছিলাম। তাই আমি নাকি বাংলাদেশি! রুখে উঠে পাল্টা বললাম, তুই তো হিন্দিতে কথা বলছিস! তুই কি তা হলে পাকিস্তানি? তা হলে এ বার তোকে প্যাক করে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিক ভারত সরকার!

শুনতে শুনতে ভাবছিলাম, এ তো ছুটকো ক্যাবচালক। তাই তুই-তোকারি করে পাল্টা কড়কানি দেওয়ায় চুপ করে গিয়েছে। কিন্তু দেশের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা বা কর্ত্রীরা যদি বিভিন্ন রাজ্যে বাংলায় কথা বললেই ‘বাংলাদেশি’ বলে দাগিয়ে দেন, তা হলে এই তেরিয়া মেজাজ দেখিয়ে পার পাওয়া যাবে তো? না কি বাড়ি ফিরে পুরনো দলিল-দস্তাবেজ ঘাঁটতে বসতে হবে এটা প্রমাণ করতে যে, বাংলায় কথা বলছি বলেই আমি বাংলাদেশি নই। নিখাদ পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা বাঙালি।

Advertisement

বিবিধ কারণে বাঙালি সরু হতে হতে, সঙ্কুচিত হতে হতে, প্রান্তিক হতে হতে এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে যে, ইদানীং তার নিজেকে নিয়েই নিজের এক ধরনের কুণ্ঠা, সংশয় এবং হীনম্মন্যতা তৈরি হয়েছে। মেট্রো রেলে, শপিং মলে, মাল্টিপ্লেক্সে এমনকি, কখনও কখনও নিজের পরিপার্শ্বেও। এমনিতেই বাঙালি যে কত কিছুতে ভোগে, তার কোনও ইয়ত্তা নেই। যত্নে পোষা পেটের রোগের সঙ্গেই বাঙালির হৃদয়ে প্রবল অসূয়া লালন করে। মনে লালন করে হীনম্মন্যতা। আর মস্তিষ্কে অপরিপক্বতা। সম্ভবত সেই কারণেই বাঙালিকে নির্বিচারে পদাঘাত করা যায়। কেন্নোর মতো। শুঁয়োপোকার মতো। নিজেদের নিয়ে বাঙালির কোনও সত্যিকারের উদ্‌যাপন নেই। হকের দাপট নেই। বাঙালি বিহারের বাসিন্দাকে ‘খোট্টা’ বলেছে। শিখ সর্দারদের ‘বাঁধাকপি’ বলেছে। রাজস্থানের লোকেদের ‘মেড়ো’ বলে তাচ্ছিল্য করেছে। বুঝতে পারেনি, সেই ফুকো গরিমার রন্ধ্রপথে ভবিষ্যহীনতার কালনাগিনী ঢুকে পড়েছে।

কেন এমন, তা নিয়ে বিশদ আলোচনা হতে পারে। এক ভুয়োদর্শী অগ্রজ বলছিলেন, এর কারণ হতে পারে যে, বাংলা এবং বাঙালি বার বার খণ্ডিত হয়েছে। বার বার তার অস্তিত্ব বিপন্ন হয়েছে। প্রথমে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, তার পরে পূর্ব বাংলা-পশ্চিম বাংলা, তারও পরে এখন উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ। শেষেরটি মনে মনে হলেও। তা হতে পারে। হতেই পারে।

নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি দিল্লিতে কাজ করার সময় প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়া আয়োজিত ক্রিকেট টুর্নামেন্ট খেলছি। এক মরাঠি তালেবর সাংবাদিক ব্যাট করতে নেমে প্রাথমিক গার্ড-টার্ড নিয়ে প্রথম স্লিপে আমি দাঁড়িয়ে আছি দেখে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘কেয়া রে বঙ্গালি? ক্যাচ পকড় সকেগা?’’ জবাব দিয়েছিলাম, ‘‘কেয়া রে মরাঠি? ব্যাট পকড়না আতা হ্যায় তুঝে?’’ সেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ এবং প্রভাবশালীকে (পরে তিনি পদ্মশ্রীও পাবেন) আমার মতো পুঁচকে প্রাদেশিক সাংবাদিক ঢিলের বদলে পাটকেল দিচ্ছে দেখে টিমমেটরা বিস্ফারিত!

ঘটনাচক্রে, (নাকি দুর্ঘটনাচক্রে?) তার পরেও সেই সাংবাদিকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। মুম্বইয়ের জাভেরি বাজারে বিস্ফোরণ কভার করতে গিয়েছি। পুলিশি ব্যারিকেড টপকে ঘটনাস্থলের আরও কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছি। চোখের সামনে ধ্বংসস্তূপ। সেখানেই দেখা মূর্তিমানের সঙ্গে। বিন্দুমাত্র বিলম্ব না-করে তিনি বলেছিলেন ‘‘কেয়া রে বঙ্গালি? তু ইধার ভি আ গ্যয়া?’’ বল পিচে পড়তেও দিইনি। নয়াদিল্লির রেলের স্টেডিয়ামের স্লিপ ফিল্ডারের মেজাজে ফিরে গিয়ে পাল্টা বলেছিলাম, ‘‘কিঁউ রে মরাঠি? তেরা মুম্বই কেয়া দুসরা দেশ হ্যায়?’’ সেই সাংবাদিকই আবার কালীঘাটের টালির চালের বাড়িতে ‘বঙ্গালি’ নেত্রীর সাক্ষাৎকার নিতে এসে গলে পাঁক হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু তাতে এই সত্যটা চাপা পড়ে না যে, বাঙালিকে পাপোশের মতো ব্যবহার করে পা মোছা যায়। অন্তত সেই চেষ্টাটা করা হয় অহরহ।

ব্যক্তিগত জীবনে প্রচুর অবাঙালি বন্ধুবান্ধব আছে। তার ফলে জীবনে কিছু তির মেরেছি বলেও মনে করি না। কসমোপলিটান জীবনে এ তো নিয়ত সত্য। বরং ব্যক্তিগত ভাবে রবি ঠাকুরের ‘দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে’-তে বিশ্বাস এখনও অক্ষুণ্ণ রাখি এবং মনে করি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেই বিশ্বাস এবং আস্থা তেমনই থাকবে। বঙ্গভাষী তো বটেই, বঙ্গবাসীকেও ‘বাঙালি’ বলে মনে করতে কোনওদিন দ্বিধা বোধ করিনি। কিন্তু অন্য রাজ্যে গিয়ে বাংলা ভাষা বললে কোনও বাঙালি ‘বাংলাদেশি’ বলে চিহ্নিত হবেন বলে ভাবিনি। এবং তা-ও সারা দেশে একই সময়ে! বস্তুত, এই সমাপতন এতটাই আশ্চর্যের যে, আদালতেরও ভ্রু কুঞ্চিত হয়েছে।

উচ্চ মাধ্যমিকের পরে স্নাতক স্তরে বাংলা নিয়ে পড়তে চাই শুনে অনেক দিগ্‌গজ বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যৎ উন্নতির সম্ভাবনাহীন বিষয়’। জবাবে বলেছিলাম, কিছু হওয়ার হলে, ওইটিতেই হবে। বিশ্বাস ছিল, অন্তত একটা ভাষা ভাল করে শিখলে-জানলে অন্য ভাষার অন্দরে প্রবেশ করতে অসুবিধা হবে না। খুব একটা হয়ওনি। ভিন্‌রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে কথা বলতে কখনও তো অসুবিধা হয়নি। চিরকাল মনে মনে প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের লাইন আওড়েছি (যা এই লেখার শিরোনামও বটে)— ‘আমি বাংলায় ভালবাসি, আমি বাংলাকে ভালবাসি, আমি তারই হাত ধরে সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে আসি’। বাংলা ভাষা আমার কাছে ভিন্‌ ভাষার সংসারে পৌঁছনোর সাঁকো হয়ে থেকে গিয়েছে। রয়ে যাবে চিরকাল।

প্রাদেশিক হব না, প্রাদেশিকতার মতো সঙ্কীর্ণতার কাছে নিজেকে সঁপে দেব না— এই আত্মশ্লাঘার বশে পড়ে বাঙালি নিজের অস্তিত্বই যখন প্রায় ভুলতে বসেছে, যখন তার ভাষা বিপন্ন, যখন সর্বভারতীয় স্তরে তার তেমন কোনও সাফল্য নেই (‘রসগুল্লাবাবু’ বলে তামাশা করাটা খানিক কমেছিল যখন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ভারতের অধিনায়ক ছিলেন। বাঙালির দাদাগিরির স্বত্ব তখন সযত্নে রক্ষিত ছিল। অথবা তার পরে যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাড়ে তিন দশকের বামশাসনের অবসান ঘটিয়েছিলেন এবং তার পরে বিজেপির অশ্বমেধের ঘোড়া রুখে দিয়েছিলেন ‘বাংলার দিদি’ হয়ে), তখন কি তাকে রাজ্যে রাজ্যে আরও কোণঠাসা করে দেওয়া হচ্ছে? সারা দেশে একই সঙ্গে কার্যত ‘বাঙালি খেদাও’ অভিযান শুরু হয়ে গেল? ওপার বাংলা থেকে অনুপ্রবেশ যে একটা সমস্যা এবং তার যে নিদারুণ অর্থনৈতিক অভিঘাত রয়েছে, তা অনস্বীকার্য। কিন্তু বাংলায় কথা বললেই ‘অনুপ্রবেশকারী’? এতটাই যে, মুম্বইয়ের এক অর্বাচীন ক্যাবচালক বাংলা ভাষায় কথা বলতে শুনে অম্লানবদনে পিছনের সিটে আসীন সওয়ারিকে প্রশ্ন করে বসেন, ‘‘বাংলাদেশি নাকি?’’

তাতে অবশ্য আমাদেরও দায় কম নয়। কারণ, বাঙালি এখন না-বাঙালি হওয়ার উদ্দণ্ড প্রয়াসে দিন-রাত এক করে ফেলছে।

সম্প্রতি মুম্বইয়ের এক সাংবাদিক বৈঠকে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের উপর-চালাক প্রশ্ন (হোয়াই ডু ইউ নিড টু স্পিক ইন বেঙ্গলি?) নিয়ে জলঘোলা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার যূপকাষ্ঠে তাঁকে প্রায় আহূতিই দেওয়া হয়ে গিয়েছিল। লিখিত ভাবে (যদিও ফ্যাতফ্যাতে লিফলেটের মতো হলদে রঙের উপর প্রায় দুষ্পাঠ্য বাংলা ফন্ট পেশাদারিত্বের খুব ভাল বিজ্ঞাপন নয়) ক্ষমা-টমা চেয়ে সাময়িক রেহাই পেয়েছেন। ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, ‘ইন্ডাস্ট্রি’ বাংলা ভাষাকে আদৌ অবমাননা করতে চাননি। গোলমালটা ছিল তাঁর অভিব্যক্তিতে। ওই একটা কাঁধ-ঝাঁকানো তাচ্ছিল্যের ভাব (মুম্বইয়ের মঞ্চে অনেক প্রাদেশিক সুপারস্টার ওই স্মার্টগিরিটা সম্ভবত নিজের অজান্তেই দেখানোর চেষ্টা করে থাকেন) আর তার সঙ্গে গোঁফের ফাঁকে একটা হেলাফেলার মুচকি হাসি ব্যাপারটাকে তাঁর বিরুদ্ধে ঠেলে দিল। ওই কথাটাই অন্য ভাবে বলা যেত। যিনি বাংলায় প্রশ্ন করেছিলেন, সেই সাংবাদিককে বলা যেত, মঞ্চে আসীন বা সাংবাদিক বৈঠকে আমন্ত্রিতদের অনেকেই বাংলায় তেমন সড়গড় নন। তাই তিনি ইংরেজি বা হিন্দিতে উত্তর দিতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন। চাই কি, প্রশ্নটাও বাংলা থেকে ইংরেজি বা হিন্দিতে অনুবাদ করে দিতে পারতেন তিনিই। তা হলে আর এই প্যাচালে পড়তে হত না তাঁকে। সম্ভবত সেটা তাঁর মাথায় আসেনি তখন। সম্ভবত খানিকটা রসিকতাই করতে গিয়েছিলেন। সম্ভবত প্রশ্নকর্ত্রী সাংবাদিক তাঁর ‘দীর্ঘদিনের পরিচিত’ এবং ‘অত্যন্ত স্নেহের পাত্রী’ হওয়ায় লঘু এবং চপল স্বরে ওই প্রতিপ্রশ্নটি করেছিলেন। কে জানে!

যাক সে কথা! ঘটনাটা মিটে গিয়েছে।

আবার মিটে যায়ওনি। কাকতালীয়, কিন্তু বাংলা ছবির সুপারস্টারের ভাষাতেই বিভিন্ন রাজ্য এখন প্রশ্ন করছে— হোয়াই ডু ইউ নিড টু স্পিক ইন বেঙ্গলি? আপনার বাংলায় কথা বলার দরকারটা কী? যে প্রশ্নের সঙ্গে এক অদৃশ্য ব্র্যাকেটে লেপ্টে আছে ‘বাংলাদেশি না হলে’?

স্বীকার করতে কোনও দ্বিধা, লজ্জা বা সঙ্কোচ নেই যে, বাংলাদেশে বাংলা ভাষা নিয়ে যে পরিমাণ আবেগ দেখেছি, তার ছিটেফোঁটাও এপারে নেই। একুশে ফেব্রুয়ারি বা পহেলা (পয়লা) বৈশাখ ঢাকার রাজপথে যে সর্বজনীন নৈবেদ্য বাংলা ভাষার জন্য সাজিয়ে দেওয়া হয়, চোখে এবং চেখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। তবে কিনা, ভাষার জন্য একটা দেশের জন্মও তো খেলা কথা নয়। আশ্চর্য কী যে, সেই আবেগ সে দেশের মানুষের মধ্যে থাকবে।

গত বছরের জুলাই মাস থেকে অবশ্য সেই দেশে সেই ভাষার ঐতিহ্য জলাঞ্জলি গিয়েছে। কিন্তু এপারের বাঙালির বাংলা ভাষা সম্পর্কে যত কম বলা যায় ততই ভাল। জাতি হিসাবে আমাদের যে নিদারুণ অধঃপতন হয়েছে, তার লেখাজোখা নেই। ভাবতে বসলে মাথা ভোঁ-ভোঁ করে। যে পরিমাণ বাঙালির পুরনো ব্যবসা লাটে উঠছে এবং ঝটপট বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, তার হিসাব কষতে বসলে শিহরিত হতে হয়। খুব ভুল হবে না বোধহয়, যদি বলি, বাঙালি এখন প্রাণপণে বাংলা ভুলে যাওয়ার চেষ্টায় ব্রতী হয়েছে। কারণ, তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাঙালি হলে সাফল্য নেই। না-বাঙালি হলে তা-ও একটু সুযোগ আছে। এই না-বাঙালির কথায়-লেখায় আধো-আধো ইংরেজি শব্দের ছড়াছড়ি। আধো-আধো, কারণ, ইংরেজিটাও তার ঠিকঠাক জানা নেই। যে ‘বাঙালি অস্মিতা, বাঙালি অস্মিতা’ (অভিধান বলছে, ‘অস্মিতা’ শব্দের অর্থ অহঙ্কার বা অহমিকা। এটি একটি সংস্কৃত শব্দ, যা ‘আমি’ বা ‘নিজেকে’ বোঝায়। শব্দটি আত্মচেতনা, আত্মোপলব্ধি বা আত্মসচেতনতা অর্থেও ব্যবহৃত হতে পারে। তবে এর নেতিবাচক অর্থও রয়েছে। যা অতিরিক্ত আত্মসচেতনতা বা অহংবোধকে নির্দেশ করে) করে গলা ফাটাই, সেই বাঙালি অস্মিতা, শ্লাঘা বা অহমিকার কণামাত্রও কি অবশিষ্ট আছে?

আশ্চর্য নয় যে, এই ‘বাঙালি হেনস্থা’র বিরুদ্ধে দ্রুত ময়দানে নেমেছে তৃণমূল (দলের এক অভিজ্ঞ নেতার কথায়, ‘ফুলটস ডেলিভারি’ পেয়েছেন তাঁরা। এই বল গ্যালারি টপকে না ফেললে অপরাধ হবে)। নিজেদের মতো করে নেমেছে সিপিএমও। সংগঠন ছোট হলেও নেমেছে দীপঙ্কর ভট্টাচার্যদের সিপিআই (এমএল) লিবারেশন।

এঁরা না-থাকলে ‘আপনি কি বাংলাদেশি?’ প্রশ্নটি দ্রুতবেগে ‘আপনি নিশ্চয়ই বাংলাদেশি’ মার্কা আরোপিত নিশ্চয়তার দিকে এগোবে। দিব্যদৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছি, ঘটনার অভিঘাতে (এবং প্রশ্নকর্তার অসম সাহসে) মুম্বইপ্রবাসী অনুজপ্রতিম সাংবাদিকের হাত থেকে ফোনটা ঠকাস করে পড়ে যাচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি অবশ্য তখনও তার পেটের রোগ, অম্বলপ্রসূত চোঁয়া ঢেকুর, জেলুসিল, প্যান ফর্টি, অসূয়া, হীনম্মন্যতা এবং অপরিপক্বতা নিয়েই ব্যস্ত রয়েছে। এবং থাকবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement