The Bengal Files and Saswata Chatterjee

এক মিনিট, বব বিশ্বাস!

‘গুগ্‌লে ইংরেজি হরফে ‘শাশ্বত’ টাইপ করলে প্রথমেই আসে ‘শাশ্বত চ্যাটার্জি, ইন্ডিয়ান অ্যাক্টর’। মনে রাখুন, ‘ইন্ডিয়ান অ্যাক্টর’। ‘ভারতীয়’ অভিনেতা। ‘প্রাদেশিক’ নয়। সম্ভবত সেই কারণেই এখন তাঁর কথাবার্তায় একটা আরাম এবং আয়েশের ভাব এসেছে।

Advertisement

অনিন্দ্য জানা

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৫ ০৭:৫৮
Share:

শাশ্বত: ‘কহানি’র বৈগ্রহিক চরিত্র ‘বব বিশ্বাস’। ছবি: সিনেমার পোস্টার।

ফালতু পয়জার না-করে সোজা কথাটা সোজা ভাবে লিখে ফেলা যাক। আমি শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়ের গুণগ্রাহী। এই প্রতিভাশালী অভিনেতার সঙ্গে একটা হালকা আলাপ আছে। অথবা হালকার চেয়েও কম ওজনের। বস্তুত, তাকে আলাপ বলা যায় কি না, তা-ও একটি কূট প্রশ্ন। দেখা হলে ‘কেমন আছেন’ বা ‘এসো জন বোসো জন’ গোছের।

Advertisement

এপাশ-ওপাশ দেখা-টেখা হয়েছে কখনও সখনও। সে-ও যাকে বলে, ‘চান্স মিটিং’। দেখা হলেও কুল্যে সাড়ে তিন মিনিটও কথা হয়নি। যেমন কিছু দিন আগেও ঘটল। পরিচিত বন্ধুবৃত্তের জটলায় তিনি বসেছিলেন। আমি সেই পান-ভোজন-গুলতানিতে ব্যস্ত টেবিলের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় দু’জনেরই পরিচিত এক উৎসাহী আলাপ করানোর চেষ্টা করলেন। শাশ্বত একটা একপেশে ‘হেঁ-হেঁ’ করলেন (নিশ্চয়ই দিনে সাড়ে তিন হাজার লোককে করে থাকেন)। আমিও ‘হেঁ-হেঁ’ করলাম। সবমিলিয়ে সাড়ে তিন সেকেন্ড বড়জোর। ওই পর্যন্তই।

শাশ্বতর অভিনীত ছবি দেখেছি। বেশি না দেখলেও কিছু কিছু দেখেছি। ‘কহানি’র বৈগ্রহিক চরিত্র ‘বব বিশ্বাস’ তো দেখেইছি। সে চরিত্র এতটাই সাড়া ফেলেছিল যে, শাশ্বতর নিজের জবানিতেই, সিনেমাটার চেয়ে ওই চরিত্রটা বেশি জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছিল। তাঁর নিজেরও একটা ‘আইডেন্টিটি ক্রাইসিস’ তৈরি হয়েছিল। শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে লোকে ‘বব বিশ্বাস’ বলে ডাকতে শুরু করেছিল। অস্তিত্বসঙ্কট তো বটেই। একজন অর্বাচীন হিসাবে মনে হয়, এমন শংসাপত্র কোনও অভিনেতার ক্ষেত্রে খুব সুবিধার নয়। সেই অভিনেতা সেই নির্দিষ্ট চরিত্রটির মধ্যে বন্দি হয়ে পড়েন। সেই বেড়াজাল ভেঙে তাঁর আর অন্য চরিত্র হয়ে ওঠা হয় না। শাশ্বত অবশ্য সেই পর্যায় নিজ অভিনয় দক্ষতায় কাটিয়ে ফেলেছিলেন (সেইজন্যই কি ‘বব বিশ্বাস’ নামে যখন ছবি হল, তখন তার নামভূমিকায় অভিনয় করলেন অভিষেক বচ্চন?)। তিনি যেমন ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এ হাতকাটা মস্তানের চরিত্র বা ব্যোমকেশে অজিত অথবা গোয়েন্দা শবর দাশগুপ্ত কিম্বা ‘এবার প্রলয়’-এর দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালনকারী পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় লাগসই, তেমনই মানানসই ঋত্বিক ঘটকের জীবন অবলম্বনে তৈরি ‘মেঘে ঢাকা তারা’-য় নীলকণ্ঠ বাগচীর চরিত্রে অথবা সাম্প্রতিক ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকায় (সেখানে অবশ্য একটা সুবিধা আছে। শাশ্বত এবং ভানুকে, কী আশ্চর্য, অনেকটা এক রকমই দেখতে)।

Advertisement

‘বেঙ্গল ফাইলস্’-এর পোস্টারে শাশ্বত। ছবি: সংগৃহীত।

তবে ‘খাকি: দ্য বেঙ্গল চ্যাপ্টার’ নামক ওয়েবসিরিজ়ে আশির দশকের কলকাতার পটভূমিকায় ‘বাঘা’ নামে এক মস্তানের চরিত্রে শাশ্বতর অভিনয় দেখে মনে হয়েছিল, তিনি তাঁর দক্ষতার প্রতি সুবিচার করেননি। অবশ্য সেই সিরিজ়টাই যাকে বলে, অতি অভিনয় এবং মেলোড্রামার কড়া জোলাপ। একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য লেগেছিল সৎ এবং মাথাগরম আইপিএস অফিসারের চরিত্রে জিৎ-কে। বাকিটা একেবারে বনোয়াটি। অথচ, ‘খাকি: দ্য বিহার চ্যাপ্টার’ দেখে সেটা মনে হয়নি। সম্ভবত সেটি সেই সিরিজ়ের ‘প্রোটাগনিস্ট’ আইপিএস অফিসারের লিখিত স্মৃতিকথাপ্রসূত বই অবলম্বনে তৈরি বলে। সেখানে ‘বেঙ্গল চ্যাপ্টার’ সিরিজ়ের চিত্রনাট্যে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি এবং তার সঙ্গে জড়ামড়ি করে-থাকা দুর্বৃত্তায়নের গল্প বলতে গিয়ে সেই গল্পের গরুকে গাছ থেকে আরও উপরে, প্রায় চাঁদে পাঠানো হয়েছিল। একটা উদাহরণ দিই? জ্যোতি বসুর ছায়ায় নির্মিত মুখ্যমন্ত্রীর চরিত্রকে পার্টির সবচেয়ে বড় নেতা ঘরের দরজা বন্ধ করে সপাটে একটি চড় মারেন। চড় খেয়ে মুখ্যমন্ত্রী ভোম্বল হয়ে গালে হাত বোলাতে থাকেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির অন্দরমহল দেখাতে গিয়ে এ জিনিস দেখানোর মূঢ় সাহস প্রশংসার্হ বইকি!

যাক সে কথা। এমনিতে খ্যাতনামীদের কাছাকাছি যেতে খানিকটা অস্বস্তিই বোধ করি। পেশার প্রয়োজন পড়লে অন্য কথা। সে তো পেটের দায়! কিন্তু ব্যক্তিগত স্তরে যে কোনও জগতের খ্যাতনামীদের থেকে একটু দূরে থাকাই ভাল বলে মনে হয়। তার কিছু নিজস্ব-গ্রন্থিত কারণও আছে। প্রথমত, এঁরা নিজেদের সৌরজগতে প্রত্যেকেই জ্যোতিষ্কবিশেষ। পারফর্মার হিসাবে উচ্চকোটির। সে তুলনায় আমি একেবারেই বামন। সর্ব অর্থে। ফলে কাছাকাছি যেতে একটু ভয়ই লাগে। কারণ বিলক্ষণ জানি, সূর্যের বেশি কাছে গেলে ঝলসে অকালমৃত্যু নিশ্চিত। দুই, সব দেবতারই খড়ের পা থাকে। বেশি কাছে গেলে সেটা চোখে পড়ে। তখন ভক্তি চটে যায়। তিন, এ ধরনের দু’টি পেশার দুই পেশাদারের মধ্যে সম্পর্ক ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই বিনিময়মূলক। তাঁরা চেষ্টা করবেন আমাদের কাজে লাগাতে। আমরা চেষ্টা করব তাঁদের দুয়ে নিতে। উপরে যত খুশবুদার বন্ধুত্ব বা গলাগলির মোড়কই দেওয়া যাক না কেন, এটিই সার সত্য। ব্যতিক্রম যে একেবারে হয় না, তা নয়। কিন্তু সে উদাহরণ এতটাই দুর্লভ যে, দূরবিন লাগিয়ে খুঁজতে হবে। চার, এমনিতেই সাংবাদিকদের দেখলে সকলে, সে খ্যাতনামী হোন বা তথাকথিত সাধারণ মানুষ, একটা ছদ্ম ভয়ের ভাব করেন। পরিপার্শ্বে একটা আলগা অবিশ্বাসের গন্ধ ভুরভুর করে। অনেক সময়েই শুনেছি, ‘আপনার সামনে বলব না বাবা। যদি কাগজে লিখে দেন!’ এক বার একজনকে (খ্যাতনামী নন) বলেও বসেছিলাম, ‘নিজেকে এত গুরুত্বপূর্ণ ভাবছেন কেন, যে আপনার কথা লিখে কাগজের জায়গা নষ্ট করব?’ পাঁচ, অল্প (অনেক সময়েই যথার্থ। তবে আমরাও যে গঙ্গাজলে বিধৌত তুলসীপত্র, তেমনও নয়। দোষঘাট আমাদের তরফেও থাকে) সমালোচনাতেই খ্যাতনামীদের বড় বেশি রক্তপাত হয়। সেই রক্তপাতজনিত ক্ষতের খানিকটা নিরাময় হয় সাধারণত সর্বসমক্ষে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে কখনও উপেক্ষা আবার কখনও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। পেশাগত সহকর্মীদের কারও সঙ্গে এমন ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখে কখনও সখনও বলতে ইচ্ছা করেছে, ঘটনা ঘটালে দোষ নেই। আর সেটা নিয়ে লিখলে দোষ?

কিন্তু কে না জানে, আমরা আসলে হলাম ‘লেসার মর্টাল’। তুশ্চু! আমাদের অবস্থান সব সময়েই টেবিলের উল্টোদিকে। যেখানে বসলে মনে হয়, এই তো, লোকটার বেশ কাছাকাছিই তো আছি। আসলে যোজন দূরত্ব। এবং সে দূরত্ব অনপনেয়।

ফলে আশ্চর্য নয় যে, অন্য অনেকের মতোই শাশ্বতর সঙ্গেও আমার তেমন চেনা-জানা নেই। তবে তিনি যে প্রতিভাশালী অভিনেতা, তা নিয়ে কখনও কোনও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু মানুষ হিসাবে কেমন, তা নিয়ে কোনও ধারণা নেই (সে আর কাকে নিয়েই বা তেমন আছে)। দূর থেকে শাশ্বতর কথাবার্তা শুনে মনে হত, তাঁর মধ্যে একটা খরখরে রসবোধ আছে। সোনামুখে এবং খানিকটা নৈর্ব্যক্তিক ভাবে কুটকুট করে কটাক্ষ করতে ওস্তাদ। তাঁর সঙ্গে পরিচিতেরা অনেকে যেটাকে ‘সিনিসিজ়ম’ বলে থাকেন। একটা সময়ে নাকি টালিগঞ্জের বিভিন্ন সহকর্মী এবং সতীর্থ সম্পর্কে তিক্ত এবং কষায় মন্তব্য করে ফেলতেন অবলীলায়। এখন সেটা খানিকটা কমেছে। তাঁকে খানিক চেনেন বলে যাঁরা দাবি করেন, তাঁদের বক্তব্য, সেটা হয়েছে মুম্বইয়ে নিয়মিত কাজ করার ফলে। হিন্দি ওটিটি-তে তিনি সত্যিই বড় নাম। নামী কোম্পানির এসইউভি ড্রাইভ করেন। ইংরেজিতে ‘ড্রাইভ’ শব্দটাই লিখলাম। ‘ড্রাইভ’ শব্দটার মধ্যে একটা ব্যাপার আছে। যা তাঁর সঙ্গে যায়। নিছক ‘গাড়ি চালানো’ নয়। ‘গুগ্‌লে ইংরেজি হরফে ‘শাশ্বত’ টাইপ করলে প্রথমেই আসে ‘শাশ্বত চ্যাটার্জি, ইন্ডিয়ান অ্যাক্টর’। মনে রাখুন, ‘ইন্ডিয়ান অ্যাক্টর’। ‘ভারতীয়’ অভিনেতা। ‘প্রাদেশিক’ নয়। সম্ভবত সেই কারণেই এখন তাঁর কথাবার্তায় একটা আরাম এবং আয়েশের ভাব এসেছে।

শাশ্বতর রসবোধ নিয়েও বিবিধ মতামত আছে। কেউ বলেন, মগজে খানিকটা বুদ্ধির ছোঁয়া এবং ভিতরে রসবোধ না থাকলে তাঁর মতো শুকনো রসিকতা করা যায় না। আবার অনেকে বলেন, শাশ্বতর ‘সেন্স অফ হিউমার’টা আসলে আশির দশকের বাণিজ্যিক ছবির মতো। সময় এগিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তিনি থেমে আছেন সেই পুরনো দিনের পুরনো রসবোধে।

সিরিয়ালে সাংঘাতিক বড় নাম ছিলেন। কিন্তু ‘মেঘে ঢাকা তারা’ করার আগে তাঁকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল, বড় পর্দায় নিয়মিত হতে হলে সিরিয়াল ছাড়তে হবে। কথিত যে, শাশ্বত নাকি এক রাতে সেই সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় সিরিয়াল ছেড়ে ঋত্বিক ঘটকের জীবনের ছায়াবলম্বী ছবি করতে চলে এসেছিলেন। অর্থাৎ, তিনি খেটে খেতে চান এবং নিজের কাজটাকে সিরিয়াসলি নেন।

যদিও তাঁর সম্পর্কে লঘুস্বরে অনেকে বলেন, শাশ্বতর কোনও বিষয়েই কোনও মতামত নেই। তিনি শুধু ‘পার ডে’ বোঝেন। অর্থাৎ, দিনপ্রতি কত পারিশ্রমিক পাবেন, সেটাই একমাত্র চিন্তা। কিন্তু সেটাও কি ঠিক? মনে তো হয় না। বরং মনে হয়, তাঁর মতামত যথেষ্ট জোরালো। নিজস্ব মতামত না থাকলে তাঁর কন্যা অভিনয়কে ‘কেরিয়ার’ হিসাবে নেবেন বলে ঠিক করার পর পিতা শাশ্বত কেন সটান বলেন, তিনি মেয়েকে কোনও সাহায্য-টাহায্য করতে পারবেন না। যা করার হিয়া চট্টোপাধ্যায়ের নিজেকেই করতে হবে। কারণ, শাশ্বতর বাবা অভিনেতা শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ও অভিনয়ের বিষয়ে পুত্রকে কখনও কোনও ধরনের পেশাগত সাহায্য করেননি।

ইদানীং কাজের জন্যই নাকি বাধ্য হয়েছেন। তবে একটা বড় সময় পর্যন্ত মোবাইল ফোনও ব্যবহার করতেন না। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে সকালে বা সন্ধ্যার পরে গল্ফ গ্রিনের ফ্ল্যাটের ক্রিং-ক্রিং ল্যান্ডলাইনই ভরসা ছিল। অর্থাৎ, ধরে নেওয়া যেতে পারে, গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসাতে একটা সময় পর্যন্ত আপত্তিই ছিল তাঁর।

ওই পর্যন্ত ঠিকই আছে। গোলমেলে লাগছে সম্প্রতি ‘বেঙ্গল ফাইলস্’ ছবিটিতে অভিনয় সম্পর্কে শাশ্বতর বক্তব্য নিয়ে। বিবেক অগ্নিহোত্রীর ছবিতে ইতিহাসকে যে বিকৃত করা হয়েছে, তার প্রমাণ ভূরি ভূরি। এই ছবি (বিবেকের এমন আরও কয়েকটি ছবিও) তৈরির নিহিত উদ্দেশ্য যে রাজনৈতিক, তা বেবিফুড-পুষ্ট শিশুও বুঝবে। রাজনীতি রাজনীতির জায়গায়। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে এই ছবি বঙ্গসমাজের একটা বড় অংশেও নেতিবাচকতা তৈরি করেছে। সেই ছবিতে অভিনয় করার সুবাদে শাশ্বত তাঁদেরও রোষে পড়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে একজন চরিত্রাভিনেতা কী বলতে পারেন? তিনি বলতে পারেন, তিনি পেশাদার অভিনেতা। চিত্রনাট্য অনুযায়ী পারফর্ম করাটা তাঁর কাজ। তিনি সেই কাজটাই করেছেন। তাঁর চরিত্রটা এক ‘দুর্ধর্ষ ভিলেন’-এর। এবং সেই চরিত্রটি তাঁর পছন্দই হয়েছিল। সে ছবিতে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে কি না, তা বলতে পারবেন ইতিহাসবেত্তারা। সে কাজ অভিনেতার নয়। যাঁরা বিক্ষুব্ধ, তাঁরা ছবির নির্মাতাদের বিরুদ্ধে আইনের দ্বারস্থ হতে পারেন।

শ্বাশ্বত প্রথমে ঠিক এটাই বলেছিলেন। ঠিকই করেছিলেন। গোল বাধল ক’দিন পরে তাঁর দ্বিতীয় বক্তব্যটি নিয়ে। যখন তিনি বললেন, ছবিটা যখন তাঁকে শুট করতে বলা হয়েছিল, তখন তার নাম ছিল ‘দিল্লি ফাইলস্’। পরে নাকি নাম বদলে করা হয়েছে ‘বেঙ্গল ফাইলস্’। শোনো কথা!

শাশ্বত ব্যাখ্যাও করেছেন। বলেছেন, এখন আর আগের মতো করে কাজ হয় না। সিস্টেম বদলে গিয়েছে। এখন অভিনেতাদের আলাদা করে তাঁর অভিনয়ের অংশের ট্র্যাক দিয়ে দেওয়া হয়। তিনি শুটিং করে চলে আসেন। ফলে তিনিও তাঁর অংশের শুটিং করে চলে এসেছিলেন। তার পরে শিব গড়তে গিয়ে বাঁদর গড়া হয়েছে কি না, তা তিনি আর দেখেননি। বস্তুত, শাশ্বতর দাবি, তিনি এখনও ছবিটি দেখেই উঠতে পারেননি।

শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, কী অসাধারণ ব্যাখ্যা! হতেই পারে সিস্টেম বদলে গিয়েছে। শুনেছি, দ্বৈতসঙ্গীতের ক্ষেত্রেও নাকি এমনই হয়। গায়ক এবং গায়িকাকে তাঁদের আলাদা আলাদা ট্র্যাক দিয়ে দেওয়া হয়। তাঁরা সেই অনুযায়ী আলাদা আলাদা করে নিজেদের অংশ রেকর্ড করেন। তার পরে স্টুডিয়োয় মাপমতো দুটো জুড়ে জুড়ে আস্ত গানটা তৈরি হয়।

সভ্যতার উন্মেষের সঙ্গে সঙ্গে এমন আবিষ্কার হতেই থাকবে। যাতে কাজের সময় কমে। কাজের মান আরও ভাল হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু তার বাইরেও একটা বস্তু থাকে— দায়িত্ব। সেটাও পেশাদারের নোটবুকে থাকে। থাকা উচিত। আমি একটা কাজ করলাম। অথচ সেটা সম্পর্কে কোনও খোঁজখবর রাখলাম না। কোনও কৌতূহল দেখালাম না। কিন্তু তার সঙ্গে, তার ভালমন্দের সঙ্গে আমার নামটা জুড়ে রইল! এটা সম্ভব?

হয়তো সম্ভব। কে জানে! কিন্তু মুখে ফিডিং বোতল গুঁজে বা সামনে ভাজা মাছ রেখে যে সমস্ত ‘মিম’ ঘুরছে চারদিকে এবং মধ্য পঞ্চাশের এক প্রতিভাবান অভিনেতার বুদ্ধি-বিচার-বিবেচনাকে দুগ্ধপোষ্য শিশুর স্তরে নামিয়ে আনছে, দেখে খারাপই লাগছে।

সত্যমিথ্যা জানা নেই। কিন্তু লোকমুখে (তাঁরা খোঁজখবর রাখেন। সাধারণত হাওয়ায় কিছু ভাসিয়ে দেন না) শুনছি, ছবির নাম ছিল ‘দিল্লি ফাইল্‌স: দ্য বেঙ্গল চ্যাপ্টার’। অর্থাৎ, দিল্লি ছিল। বেঙ্গলও ছিল। ফলে ভুল বোঝাবুঝির কোনও অবকাশ ছিল না।

তা হলে? তা হলে যেটা শুনলাম, সেটাও কেমন কেমন যেন। তবে কিনা, শাশ্বতর কাছে নাকি এমন আশ্চর্য ব্যাখ্যাই প্রত্যাশিত। নামবদল এবং সে সম্পর্কে নিজের নিপাট অজ্ঞতার এমন কারণ নাকি শাশ্বতই দিতে পারেন। ফলে কেউই অবাক নন।

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, এক মিনিট! আপনি কিন্তু আবার অস্তিত্বসঙ্কটে। ‘বিশ্বাস’ চলে যাচ্ছে। পড়ে থাকছে গোত্রহীন ‘বব’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement