নেপালি পার্লামেন্টের মাথাতেও জেন জ়ি-র আস্ফালন! ছবি: পিটিআই।
ক্যাটকেটে ফ্লুরোসেন্ট সবুজ রঙের হাতকাটা জ্যাকেটটা কি এখনও কোনও কোনাখামচিতে পড়ে আছে? কী জানি! আলমারি হাতড়ানোর সময় অনেকদিন চোখে পড়েনি। হাজার হোক, জীবন গিয়েছে চলে উনিশটি বছরের পার।
উথালপাথাল কাঠমান্ডুর দৃশ্য দেখে সেই শহরের আনাচেকানাচে যাওয়ার পাসপোর্ট-সদৃশ জ্যাকেটটার কথা আবার মনে পড়ে গেল!
২০০৬ সাল। রাজতন্ত্রকে উৎখাত করে গণতন্ত্রের দাবিতে সরব নেপাল। ‘সরব’ শব্দটা লিখে অবশ্য কিছুই বোঝাতে পারলাম না। উত্তাল, উন্মত্ত, অগ্নিগর্ভ— যা খুশি বলতে পারেন। তার আগে ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সরকার ভেঙে পূর্ণ ক্ষমতা করায়ত্ত করেছেন রাজা জ্ঞানেন্দ্র। নাগরিকদের সামাজিক অধিকার খর্ব হয়েছে। যাকে তখন গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হিসাবেই পরিচিত করানো হয়েছিল। অতঃপর নেপালে রাজতন্ত্র বনাম মাওবাদী গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে। যার ফলে বহু প্রাণহানি তো হয়েছিলই। গোটা নেপাল জুড়ে এক অস্থিরতাও তৈরি হয়েছিল। তার বিরুদ্ধেই আন্দোলনে নেমেছিল সাতদলীয় রাজনৈতিক জোট। যারা চেয়েছিল রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে আবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে। চেয়েছিল দেশে নির্বাচন করে সংসদ তৈরি করতে। যে সংসদ নেপালের জন্য এক নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরি করবে।
সেই আন্দোলনের কারণে টানা উনিশ দিনের বন্ধ (হরতাল) দেখেছিল নেপাল। পরিশেষে রাজা জ্ঞানেন্দ্রকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হতে হয়েছিল। কিন্তু তার আগে গোটা নেপাল, বিশেষত কাঠমান্ডু জুড়ে যা ঘটেছিল, তা তার আগে খুব একটা দেখা যায়নি। গোটা শহরে অনির্দিষ্টকাল কার্ফু। যা পরে রাজধানী শহরের বাইরেও কিছু বাছাই এবং স্পর্শকাতর এলাকায় জারি করা হয়েছিল। প্রতিদিন এখানে-ওখানে আগুন জ্বলছে। গাড়ি জ্বলছে। বাড়ি জ্বলছে। পুলিশের সঙ্গে, সেনার সঙ্গে নেপালি জনতার অবিরত হিংসাত্মক লড়াই চলছে। ঠিক যেমন এই সেদিনও হচ্ছিল।
কলকাতা থেকে কোনও উড়ান কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামছে না। সব উড়ান বাতিল। তবে দিল্লি থেকে উড়ান জারি আছে। অতএব আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিককে সকালের উড়ানে দিল্লি গিয়ে সেখান থেকে দুপুরে কাঠমান্ডুর উড়ান ধরতে হল।
তৎকালীন জেট ওয়ারওয়েজ়ের উইন্ডো সিটে বসে এপাশ-ওপাশ তাকিয়ে দেখলাম। কিছু বিদেশি পর্যটক ছাড়া প্রায় ফাঁকা। নয়াদিল্লি থেকে কাঠমান্ডুর উড়ান-দূরত্ব কতক্ষণের, সেটা এখন আর মনে নেই। কিন্তু বাঙালি কাঠমান্ডু যাবে আর মনে মনে সত্যজিৎ রায় আওড়াবে না, তা তো হতে পারে না। তোপসের অমর বর্ণনা, ‘আমাদের প্লেনের ছায়াটা কিছুক্ষণ থেকেই সঙ্গে সঙ্গে চলছিল। লক্ষ্য করছিলাম সেটার বড় হওয়ার স্পিড ক্রমেই বাড়ছে। এবারে সেটা যেন হঠাৎ তড়িঘড়ি ছুটে এসে বিরাট হয়ে আমাদের প্লেনের সঙ্গে মিশে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারলাম আমরা ত্রিভুবন এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করেছি’ অক্ষরে অক্ষরে মেনে নেপালের মাটি ছুঁল বিমান।
মাটি তো ছুঁল। কিন্তু তার পর? গোটা বিমানবন্দর শুনশান। নামে বিদেশ হলেও নেপালে পাসপোর্ট লাগে না। ফলে ইমিগ্রেশনের ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট নেই। বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে বেরিয়ে দেখলাম, বাইরেটাও একই রকমের জনমানবহীন। যাব কাঠমান্ডু শহরের অনেক ভিতরে ‘টিবেট গেস্ট হাউস’ বলে একটা ঠিকানায়। তৎকালীন স্টার আনন্দের সহকর্মী বিতনু চট্টোপাধ্যায় একদিন আগে পৌঁছেছে এবং সেখানেই ডেরা বেঁধেছে। বিতনুর কাছ থেকেই নম্বর নিয়ে সেখানে ঘর বুক করেছি। যে করে হোক পৌঁছতে হবে।
কিন্তু কী ভাবে?
আমার সঙ্গে একই বিমানে নামা গোটাচারেক বিদেশি পর্যটকও তল্পিতল্পা নিয়ে ভোম্বল হয়ে দাঁড়িয়ে। চারপাশে কোনও গাড়ি-টাড়িও চোখে পড়ছে না। শেষপর্যন্ত কে জানে কোথা থেকে এয়ারলাইন্সের কর্মীরাই ভোজবাজির মতো একটা লজঝড়ে মাইক্রোবাস জোগাড় করে দিলেন। প্রায় চারগুণ ভাড়ায় চালক রাজি হলেন শহরে পৌঁছে দিতে। দেখে মনে হল, নেহাতই টাকার টানাটানি। নইলে কাঠমান্ডু জুড়ে যে নৈরাজ্য এবং অরাজকতার লাভাস্রোত বইছিল, তাতে কোনও সুস্থ মস্তিষ্কের লোক বাস-টাস নিয়ে রাস্তায় বেরোনোর কথা ভাববে না।
বিমানবন্দর থেকে কাঠমান্ডু শহরের একেবারে ভিতরের আস্তানার কাছাকাছি পৌঁছোতে যে রাস্তা পেরিয়ে যেতে হল, রোমহর্ষক। সে সব দৃশ্য তখন সিনেমা-টিনেমায় দেখা যেত। এবং সেই সব ছবি সত্যজিতের উপন্যাসের নাম ধার করে পরিস্থিতির বর্ণনা দেওয়ার উপরচালাকিকে ফুঁ দিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেওয়ার মতো।
রাস্তা জুড়ে দাউদাউ করে একের পর এক টায়ার জ্বলছে। তার সামনে লাফাচ্ছে উন্মত্ত নেপালি যুবকের দল। তাদের খালি গা। পরনে ডেনিমের ট্রাউজ়ার্স। মাথায় ফেট্টি। হাতে লাঠিসোঁটা। গলায় রাজতন্ত্রের অবসান চেয়ে মুহুর্মুহু স্লোগান।
বাসচালক কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী কাটিয়ে কাটিয়ে প্রায় ট্র্যাপিজ খেলোয়াড়ের দক্ষতায় রাস্তা ধরে এগোচ্ছেন। সে সব দেখে-টেখে বিদেশিরা পিঠের পেল্লায় ব্যাকপ্যাকের আড়াল নিয়ে সিটের তলায় সেঁধিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এসপ্ল্যানেড ইস্টে লাঠি-গুলি-গ্যাস পেরিয়ে আসা বাঙালি রিপোর্টারকে কি আর জ্বলন্ত টায়ার দাবায়ে রাখতে পারে? সে তখন এক লম্ফে চালকের পাশের সিটে গিয়ে বসেছে। যাতে সামনে থেকে আরও ভাল করে তাণ্ডবটা দেখা যায়। কাঠমান্ডু ডেটলাইন থেকে প্রথমদিনের ডেসপ্যাচ (যাকে ‘মা পৌঁছেছি’ বলতাম। অর্থাৎ, পরদিনের কাগজ দেখে চিন্তিত, শঙ্কিত এবং উদ্বিগ্ন মা জানতে পারবেন, ছেলে নিরাপদে অকুস্থলে পৌঁছে গিয়েছে এবং কপিও ফাইল করেছে) তৈরি হতে শুরু করেছে!
সেই কপিতে আরও কিছু পরে রোমহর্ষক কিছু লাইন জুড়ল। যখন দেখলাম, মূল রাজপথের দু’পাশে সরু সরু গলি থেকে বেরিয়ে এসে চারফুটিয়া বাচ্চারা মলোটভ ককটেল ছুড়ছে। বোতলের মধ্যে পেট্রল। মুখে পলতে। তাতে আগুন জ্বালিয়ে ছুড়ে দিচ্ছে প্যারাবোলিক কার্ভে। রাস্তার উপর পড়ে বিকট শব্দে ফাটছে সেগুলো। বোতলের ভিতরের পেট্রলবাহিত আগুনের শিখা লকলক করে উঠছে। লক্ষ লক্ষ ফুলঝুরির মতো। তফাত একটাই— এটা দীপাবলির তারাবাজির মতো নিরীহ নয়। জুতমতো লাগলে বরং প্রাণঘাতী।
মলোটভ ককটেলের অকাল দীপাবলি দেখতে দেখতে এবং পোড়া টায়ারের গন্ধ খেতে খেতে অবশেষে পৌঁছেছিলাম ‘টিবেট গেস্ট হাউস’-এ। সঙ্গের বিদেশিগুলো নিরাপদ একটা জায়গা দেখে নেমে আগেই কেটে গিয়েছিল।
আনন্দবাজার পত্রিকার আর্কাইভ খুলে দেখছি, ২০০৬ সালের ২০ এপ্রিল থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত ছিলাম কাঠমান্ডুতে। শেষদিকে একঘেয়ে লাগত। মনে হত, কবে কার্ফু উঠবে! রোজ সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত কার্ফু। পাস ছাড়া বেরোতে পারব না। হোটেলে বসে গুলতানি ছাড়া কাজ নেই। তৃতীয়দিন সকালে কয়েক ঘন্টার জন্য কার্ফু শিথিল হওয়ায় গেলাম পুলিশ লাইনে কার্ফু পাস আনতে। কাতারে কাতারে সাংবাদিক-চিত্র সাংবাদিকের ভিড়। সারা দুনিয়ার কাঁহা কাঁহা মুল্লুক থেকে এসেছেন সব। লাইনে আমার পালা আসতে আসতে কার্ফু চালু হওয়ার ভোঁ বেজে গেল। ব্যস! পুলিশ লাইনেই কার্যত আটক। অনেক তুতিয়েপাতিয়ে ছাড় মিলল বটে। কিন্তু রাস্তায় পায়ে পায়ে সেনাবাহিনীর ঠোক্কর আর জেরা।
তখনই ওই ফ্লুরোসেন্ট সবুজ জ্যাকেটটা কেনা। ৫০০ নেপালি টাকা দিয়ে। মেরেকেটে বড়জোর ২০০ টাকা হতে পারত। কিন্তু সঙ্কটের আগুনেও লোকে রুটি সেঁকে নেয়। এটাই জগতের নিয়ম। আবহমান কাল ধরে চলে আসছে। ফলে আমরা কয়েকজন গিয়ে নগদ নারায়ণ গুনে দিয়ে শহরের উপকণ্ঠে একটা খোঁচমতো আস্তানা থেকে সেই মহার্ঘ জ্যাকেট নিয়ে এলাম। সবুজ রঙের জ্যাকেটের পিঠে গাঢ় নীলে ইংরেজি বড়হাতের অক্ষরে লেখা ‘প্রেস’। কয়েক মাইল দূর থেকেও ঝকঝক করে। নজর এড়ানোর জো নেই। যার একটা স্মার্ট ইংরেজি অনেক পরে খবরের চ্যানেলে আবির্ভূত হবে— ‘আনমিসেব্ল’।
তার পরে আর কাঠমান্ডুতে ঘুরে বেড়াতে সমস্যা হয়নি। গাড়িতে বা পায়ে হেঁটে। সাত দিনের মধ্যে গোলমালটার একটা শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক সমাধান হয়েছিল। আমিও পাতপাড়ি গুটিয়ে ফিরে এসেছিলাম। কিন্তু কেন জানি না, তখন থেকেই মনে হত, যুবসমাজের সঙ্গে পাঙ্গা নিয়ে ক্ষমতাধরদের নতিস্বীকার করার এই দৃষ্টান্তটা স্থাপিত হয়ে গেল। এ জিনিস এই উপমহাদেশে ঘুরে ঘুরে আসবে। সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো।
নেপাল থেকে ফেরার পর গত উনিশ বছরে সেই জ্যাকেট আর কাজে লাগেনি। পশুপতিনাথের দিব্যি। কিন্তু যে ভাবনা নিয়ে নেপাল ছেড়ে এসেছিলাম, তা ভুল প্রমাণিত হয়নি। গত ১৭ বছরে নেপালে ১৪টি সরকার এসেছে! অভাবনীয়। সেই অস্থিরতার ফলিত রূপ গত কয়েকদিনের নেপাল দেখিয়ে দিয়েছে। রসিকজনেরা বলছেন বটে যে, নেপাল বাংলাদেশের হাসিনা-উৎখাত আন্দোলনকে ‘কপি-পেস্ট’ করেছে। কিন্তু তফাত আছে। বাংলাদেশ এখনও চাপাতিতে আটকে রয়েছে। আর নেপাল ঢুকে পড়েছে ইনসাস রাইফেলের জগতে।
মলোটভ ককটেল অতীত। এ বারের আন্দোলনে কাঠমান্ডুর রাস্তায় ইনসাস রাইফেল। ছবি: এএফপি।
উনিশ বছর আগের কাঠমান্ডুতে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রের এই আস্ফালন ছিল না। সেই কাঠমান্ডুর দৌড় ছিল মলোটভ ককটেল পর্যন্ত। উনিশ বছর আগের কাঠমান্ডুতে সস্তার মোবাইল ছিল হাতিয়ার। এখন সেই কাঠমান্ডু দুনিয়ার অন্য সব দেশের মতো ঢুকে পড়েছে স্মার্টফোন এবং সমাজমাধ্যমের জগতে। নেপালের এই আন্দোলন ছাত্রযুব সম্প্রদায়ের পাশাপাশিই সমাজমাধ্যমের তাগদও দেখিয়ে দিয়েছে।
সে অবশ্য সবকিছুরই বিবর্তন হয়। আসল কথা হল, ক্ষমতাসীন অপশাসকের প্রতি আকণ্ঠ ক্রোধ, ঘৃণা এবং ধ্বংসাত্মক আন্দোলন। যে আন্দোলন শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের পরে নেপালেও ক্ষমতার পালাবদল ঘটিয়ে ছাড়ল। অধুনাপ্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায় তাঁর অননুকরণীয় ভঙ্গিতে বলতেন, ‘‘ছাত্রযুবদের সঙ্গে কখনও কোনও পাঁয়তারা কষতে যাওয়া উচিত নয়। ওদের আবেগটাই সব। আগুপিছু ভাবে না। ছাত্রযুবরা বেঁকে বসলে মুশকিল আছে।’’
ক্ষমতাসীনের সীমাহীন দুর্নীতির সেই বিন্দুতে মিলে গিয়েছিল বাংলাদেশ আর নেপাল। বাংলাদেশে কী হয়েছিল আমরা জানি। নেপালে পোখরা বিমানবন্দর তৈরির জন্য চিন থেকে আসা ৭১ মিলিয়ন ডলার অনুদান হাপিস হয়ে গিয়েছে। বিদেশে চাকরির জন্য ভুটানি শরণার্থীর পরিচয়ে ভুয়ো শংসাপত্র দেওয়ার জন্য রাজনীতিক এবং সরকারি আধিকারিকেরা মুঠো মুঠো উৎকোচ নিতে শুরু করেছেন। সরকারি হাসপাতাল এবং বিদ্যালয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চাষের মরসুমে কৃষকেরা সার পান না। তার সঙ্গে বেকারত্ব। ২০২৪ সালে নেপালে নথিভুক্ত বেকারের পরিমাণ ছিল সাড়ে ১২ শতাংশ। নথিভুক্ত। যা নাকি আসল সংখ্যার ভগ্নাংশও নয়।
ঠিকই। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্রযুবদের সঙ্গে ছল্লিবল্লি করলে মুশকিল! তারা অবলীলায় পুলিশি ব্যারিকেড উপড়ে, ভেঙে ভিতরে ঢুকে দেশের সংসদ ভবনের মাথায় চড়তে পারে। নেই-চাকরি, নেই-জীবিকার দেশে মন্ত্রী এবং তাঁদের সন্তানদের দামি গাড়ি আর বিলাসবহুল জীবনযাত্রা দেখতে দেখতে ভিতরে ক্রমাগত ক্রোধের বারুদ জমাতে পারে একদিন বিস্ফোরণের জন্য। তারা অবলীলায় উড়ে এসে রাজপথ ধরে পলায়নপর অর্থমন্ত্রীর মাজায় জোড়া পায়ে ক্যাঁৎ করে লাথি কষাতে পারে। একের পর এক সমাজমাধ্যম বন্ধ করে (নেপালে কোটি কোটি যুবক-যুবতী ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে অনলাইনে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কারণ, দেশে চাকরি নেই) তাদের আটকানো যায় না। বরং দ্বিগুণ, তিনগুণ বিক্রম নিয়ে তারা অভীষ্টের দিকে ধেয়ে যায়। তাদের সমবেত দৌড়ের সামনে পিছু হটতে থাকে জলকামান। তারা কাঁদানে গ্যাসের শেল রাস্তা থেকে রুমালে জড়িয়ে তুলে নিয়ে পাল্টা ছোড়ে পুলিশের দিকে। কার্ফুর তোয়াক্কা না করে হাজারে হাজারে, লাখে লাখে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। পুলিশ এবং ফৌজের বাধার তোয়াক্কা করে না। নির্বিচারে হামলা চালায়, আগুন লাগায় ধনী মন্ত্রী-রাজনীতিকদের বহুমূল্য বসতবাড়িতে।
উনিশ বছর আগে তাদের কোনও নাম ছিল না। উনিশ বছর পরে তাদের নাম হয়েছে ‘জেন জ়ি’। তাদের আন্দোলনের প্রবল ধাক্কায় গদি ছাড়তে হয়েছে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে।
জীবন গিয়াছে চলে উনিশটি বছরের পার। দুনিয়া বাংলাদেশ দেখেছে। দুনিয়া নেপালও দেখল। দুনিয়া কি শিক্ষা নিল? না কি উনিশ বছর আগে চড়াদামে পাওয়া ফ্লুরোসেন্ট সবুজ জ্যাকেটটার মতোই কোনও কোনাখামচিতে ফেলে রাখল অনাদরে-অবহেলায়?