মনে হচ্ছিল, দুটো বিপরীতমুখী ট্রেন পাশাপাশি লাইনে একে অপরের পাশ দিয়ে চলে গেল। টসের পর সূর্যকুমার যাদব এবং সলমন আলি আঘা। ছবি: এএফপি।
উচিত হয়েছে? না হয়নি? তর্কে-বিতর্কে তুফান উঠেছে ড্রয়িংরুম থেকে ড্রয়িংরুমে। সমাজমাধ্যমের দেওয়াল থেকে দেওয়ালে। কী আর বলি, সারা দেশ হাতা গুটিয়ে বিতর্কে নেমে পড়েছে! প্রাক্তন ক্রিকেটার, রাজনীতিক, সবজান্তা সনাতনী দাদা, পাড়ার ফেকলু, চ্যানেলের বিনাপয়সায় পাওয়া সহজলভ্য দিগ্গজ, কোনওদিন ব্যাটে হাত না-দেওয়া প্রাজ্ঞ, পাকেচক্রে নারদ-নারদ লেগে গেলে টিভি-র সামনে বসা জিভে টকাস-টকাস শব্দ করে তেঁতুলের আচার খাওয়ার মতো যুদ্ধস্বাদলোভী বীর— সকলে তর্কে জুটে পড়েছে।
কী তর্ক? না, ভারতের কি এশিয়া কাপে পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা উচিত ছিল? বিশেষত, পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পরে?
চারপাশে গেল-গেল রব! ভারতীয় ক্রিকেটারদের কি কোনও বিবেক নেই র্যা? শুধু টাকা-টাকা আর টাকা? ল্যাল-ল্যাল করে দুবাইয়ে খেলতে চলে গেল? ছিছিক্কার পড়েছে চারদিকে। অর্থগৃধ্নু ক্রিকেটারদের কাণ্ডকারখানায় ভারতবাসী হিসাবে লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। মুনাফাখোর বিসিসিআইয়ের নিন্দায় কান পাতা দায়! এত বেশি ভনভন করছে সেই মক্ষিকারব যে, রবিবার রাতে পাকিস্তানকে লেজেগোবরে করে হারানোটাও প্রায় পিছনেই চলে গিয়েছে। অথচ, ম্যাচের ফলাফলই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, বস্তুত, একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু সে সবকে শোল্ডার ড্যাশে সাইডলাইনের বাইরে ছিটকে দিয়ে যাবতীয় সাইড শো চলে এসেছে সেন্টার সার্কলের কাছে। রবিবারের ভারত-পাক ম্যাচটা সেই পাঁচরকম ফ্যাদরা প্যাচালের কারণেই মনে থাকবে বোধহয়।
সাইড শো: অ-করমর্দন ১
টসের পরে পাকিস্তানের অধিনায়ক সলমন আলি আঘার সঙ্গে হাত মেলাননি ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। ছোট হাফ টার্নে ঘুরে সটান হাঁটা লাগিয়েছিলেন সাজঘরের দিকে। হাত মেলাননি সলমনও। দেখে মনে হচ্ছিল, দুটো বিপরীতমুখী ট্রেন পাশাপাশি লাইনে একে অপরের পাশ দিয়ে চলে গেল। ভারতীয় অধিনায়ককে দেখে মনে হয়েছিল, সেখানেই তিনি ম্যাচের ‘টোন’ তৈরি করে দিলেন। যে, তোদের আমরা চার আনা-আট আনার টিম বলে মনে করি। এবং নিতান্ত নিমরাজি হয়ে খেলতে এসেছি। কারণ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যালেন্ডার মেনে চলতে হয়। যখন-তখন ‘না’ বলে দেওয়া যায় না। আর এ হল ক্রিকেটবিশ্বে সবচেয়ে উত্তেজক এবং দামি ম্যাচ। স্পনসর আছে, দর্শক আছে, বিশেষজ্ঞ আছে, ভারত জুড়ে বিস্তর কাড়ানাকাড়া আছে। সাধে কি আর রবিবার রাতে ম্যাচ? সমস্ত লভ্যাংশ কাচিয়েকুচিয়ে তুলে নিতে হবে ওই তিন ঘণ্টার রিয়্যালিটি শো থেকে। তবেই না!
সত্যাসত্য জানি না। পরে শুনছি, ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টই নাকি পাক অধিনায়ককে ভারতের অধিনায়কের সঙ্গে হাত মেলাতে নিষেধ করেছিলেন। কেন করলেন কে জানে! তিনি কি ভেবেছিলেন সলমন আলি আঘা হঠাৎ সলমন ‘দবং’ খান হয়ে প্রতিপক্ষের অধিনায়কের হাত-টাত মুচড়ে (আক্ষরিক অর্থেই ‘মর্দন’) দিতে পারেন? না কি চড়-টড় মেরে বসতে পারেন? কিন্তু এ বিষয়ে পাইক্রফ্টের নিজস্ব বক্তব্য সোমবার রাতে এই লেখা জমা দেওয়া পর্যন্ত শুনিনি। তবে এটুকু জেনেছি যে, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড সরকারি ভাবে আইসিসি-র কাছে দাবি করেছে, পাইক্রফ্টকে অবিলম্বে এশিয়া কাপের ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে।
সাইড শো: অ-করমর্দন ২
বিপুলাকার একটা ছক্কায় ম্যাচ জিতে যখন সূর্যকুমার সতীর্থ শিবম দুবেকে নিয়ে ফিরছেন সাজঘরে, প্রথামতো পাকিস্তানের পুরো দল তাঁদের সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য দাঁড়িয়ে বাউন্ডারির ধারে। তাদের সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে চুয়িংগাম চিবোতে চিবোতে (সর্বসমক্ষে চুয়িংগাম চিবোনোটা বরাবরই ঔদ্ধত্যের বিজ্ঞাপন। মনে হয়, গোটা পরিপার্শ্বকে তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে। তবে সেটাই ক্রিকেট মাঠে ভিভিয়ান রিচার্ডস করলে ‘সোয়্যাগ’ হয়) দ্রুত ঢুকে যান সাজঘরে। পাকিস্তান টিম তো বটেই, ম্যাচ অফিশিয়ালদের সঙ্গেও তাঁরা হাত মেলাননি। ভারতীয় সাজঘরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় ভিতর থেকে। শোনা যাচ্ছে, পাকিস্তানের এক ক্রিকেটার গিয়েওছিলেন ভারতীয় ড্রেসিংরুমে। কিন্তু বন্ধ দরজা খোলেনি।
সেটাও কি পাইক্রফ্টই বারণ করে দিয়েছিলেন? জানি না। না কি টসের সময় ম্যাচ রেফারি হাত না মেলাতে বলে দিয়েছিলেন বলে সূর্যকুমার ম্যাচের পরেও আর আগ বাড়িয়ে সেই পথে গেলেন না?
সাইড শো: অ-নুপস্থিতি
বাউন্ডারির ধারে লাইন করে দাঁড়িয়েও ম্যাচ-উত্তর করমর্দন সংঘটিত না-হওয়ার প্রতিবাদে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে পাকিস্তান অধিনায়ক এলেন না। এটা সাম্প্রতিককালে ক্রিকেটে দেখা যায়নি। অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে একটা খটকা লেগেছিল বটে। সাধারণত ম্যাচের সেরা, পরাজিত অধিনায়ক এবং বিজয়ী অধিনায়ক— এই ক্রমপর্যায়ে পুরস্কার বিতরণীতে ডাক পড়ে। রবিবার রাতে দেখলাম ম্যাচের সেরা কুলদীপ যাদবের পরেই সটান সূর্য উঠল! পাকিস্তান টিমকে ক্যামেরার ফ্রেমে খুঁজে পাওয়া গেল না। মনে হয়েছিল, ম্যাচ হারার দুঃখে এতটাই মুহ্যমান যে, সাজঘরে কিটব্যাগ জড়িয়ে হাপুসনয়নে কাঁদতে বসেছে। তার পরে তো শুনি, ও হরি! এ তো অন্য গুবলু।
সাইড শো: অ-সামঞ্জরেকর
সঞ্জয় মঞ্জরেকর সত্যিই যাকে বলে, ‘অসাম’! পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কী মিষ্টি করে সূর্যের জন্য ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ’ গেয়ে দিলেন। কয়েকদিন আগে ক্রিকেট শোয়ের সঞ্চালক (এবং ঘটনাচক্রে, জসপ্রীত বুমরাহের স্ত্রী) সঞ্জনা গণেশনকেও গান গেয়ে শুনিয়েছেন। এশিয়া কাপে গায়ক মঞ্জরেকরের যা পারফরম্যান্স, একেবারে গ্রামোফোন রেকর্ডের মতো। পিন চাপালেই গান শুরু! একদা বাংলাভাষাতেও গান গেয়েছিলেন। সম্ভবত অনুপম রায়ের পরিচালনায়। বাংলায় তাঁর গুণমুগ্ধেরা ভেবেছিলেন, মুম্বই থেকে কিশোরকুমারই এলেন বুঝি। তেমন কিছু হয়নি। ওই প্রথম। ওটাই শেষ। সে ক্যাসেটেরও খোঁজ-টোজও আর পাওয়া যায় না।
এমনিতেই মঞ্জরেকরের কুঁতিয়ে কুঁতিয়ে ধারাবিবরণী শুনলে মনে হয়, কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। যে সমস্ত মন্তব্য করেন, তাতে পরশ্রীকাতরতা মকমক করে (রবীন্দ্র জাডেজা সম্পর্কে ‘বিট্স অ্যান্ড পিসেস ক্রিকেটার’ বিশেষণ স্মর্তব্য। তার পরেও অবশ্য হাসিমুখেই ম্যাচের সেরা জাডেজার সামনে মাইক্রোফোন ধরেছেন। হুঁ-হুঁ বাবা, পাক্কা পেশাদার)। মঞ্জরেকর এবং জন্মদিন সম্পর্কে একটা কাহিনি (রসিকজনের বানানো গুলও হতে পারে। সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম) প্রচলিত। কোনও একজনের জন্মদিনে আমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছেন। যাঁর জন্মদিন তাঁকে সামনে দেখেই হাত মিলিয়ে বললেন, ‘‘হ্যাপি বার্থডে! কিন্তু মনে রেখো, তুমি মৃত্যুর দিকে আরও একটা দিন এগিয়ে গেলে!’’
সেই তিনিই যে দুবাইয়ের স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে অত সপ্রতিভ ভাবে গলা ছেড়ে ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ’ গেয়ে উঠবেন, কে জানত! ঘটনার নাটকীয়তায় সূর্যকুমার কি একটু লজ্জা পেলেন? তবে মঞ্জরেকর সত্যিই ‘অসাম’। অ-সামঞ্জরেকর।
সাইড শো: অ-মাইক হেসন
কোনও অমায়িকতার ধার-টার না ধেরে নিউজ়ি ল্যান্ডের নাগরিক তথা অধুনা পাকিস্তান দলের হেড কোচ মাইক হেসন ম্যাচের পরে সাংবাদিক বৈঠকে সরাসরি বলেই দিয়েছেন, ম্যাচের শেষে ভারতীয় দল পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত না মেলানোর প্রতিবাদে পাকিস্তানের অধিনায়ক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যাননি। হেসন আরও জানিয়েছেন, ভারতীয় ক্রিকেটারেরা খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব দেখাননি।
সাইড শো: অ-খেলোয়াড়সুলভ!
এমনটা কোনও ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক করেছেন বলে মনে করতে পারছি না। কোনও ভারতীয় খেলোয়াড়ই কি করেছেন? মনে তো পড়ে না। প্রথাগত কথাবার্তা শেষ হয়ে যাওয়ার পরে মাইক্রোফোনটা না-ফিরিয়ে দিয়ে সূর্যকুমার জানালেন, তাঁর আরও কিছু কথা বলার আছে। সে কথা পহেলগাঁও নিয়ে। সে কথা তাঁরা পহেলগাঁওয়ের শহিদদের পরিবারের পাশে আছেন, তা জানিয়ে। ভারতীয় সেনাকে সাধুবাদ জানিয়ে। সে কথা পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে দিয়ে দেশবাসীকে ‘রিটার্ন গিফ্ট’ দেওয়ার ঘোষণা। সূর্যকুমার পরে বলেছেন, কিছু কিছু বিষয় খেলোয়াড়োচিত মনোভাবের চেয়েও বড় হয়ে ওঠে। বলেছেন, ‘‘আমাদের সরকার এবং বিসিসিআই একমত হয়েই এখানে খেলতে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা ওদের (পাকিস্তান) মুখের মতো জবাব দিতে পেরেছি। জীবনে কিছু কিছু বিষয় স্পোর্টসম্যান স্পিরিটের চেয়েও বেশি জরুরি। আমরা পহেলগাঁওয়ে নিহতদের পরিবারের পাশে আছি। আমরা এই জয় ভারতীয় ফৌজের সেই সেনানীদের উৎসর্গ করছি, যাঁরা অপারেশন সিঁদুরে লড়াই করেছিলেন।’’
কড়া বিবৃতি। সন্দেহ নেই। কিন্তু খুব সপ্রতিভ কি? নাকি উইংসের ধার থেকে ‘প্রম্পট’ করা? দেশজ জনতার ‘ভক্ত’ অংশ এবং সরকারের চাপে এটা করলেন না তো সূর্যকুমার? ম্যাচের পরের বিবৃতি কি সেই চাপে পড়ে? ভারতীয় ক্রিকেটারেরা তো এমন উচ্চকিত বিবৃতি পেশ করেন না কখনও। কে জানে! কিন্তু এই সমবেত কিচিরমিচিরে চাপা পড়ে গেল ক্রিকেটটাই। ক্রিকেটমাঠে ভারত পাকিস্তানকে কতটা দুরমুশ করে জিতল, এই সত্যটা ঠিকঠাক উদ্যাপিতই হল না।
এই সাইড শো-গুলো পাশে সরিয়ে রাখলে ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, পহেলগাঁওয়ের ঘটনার প্রতিবাদে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে না খেললে ঠিক করত না। আরও মনে করি, এই দেশভক্তির চাপটা সবসময় ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের উপরেই আসে (ক্রিকেট বাদ দিলে বলিউড)। ক’দিন পরেই বিশ্ব অ্যাথলেটিক মিটে ভারতের এক নম্বর জ্যাভলিন থ্রোয়ার নীরজ চোপড়া নামবেন। যাঁর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের আরশাদ নাদিম। তার পরে আগামী ৫ অক্টোবর মহিলাদের ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে কলম্বোয় ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। নীরজ বিশ্ব মিটে নাদিমের বিরুদ্ধে নামলে কি দেশবাসীর রোষের মুখে পড়বেন? না কি ৫ অক্টোবরের ম্যাচের আগে এই জিগির তোলা হবে যে, হরমনপ্রীত সিংহ-স্মৃতি মন্ধানারা কেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে খেলতে নামছেন? হবে না। বস্তুত, এমন দুটো ঘটনা যে ঘটতে চলেছে, সেটা এই বিরিঞ্চিবাবাদের ক’জন জানেন, তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
কিন্তু ২১ সেপ্টেম্বর, আগামী রবিবার এশিয়া কাপের সুপার ফোরে আবার ভারত-পাক মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তার পরের রবিবার ২৮ সেপ্টেম্বর এশিয়া কাপের ফাইনালেও ভারত-পাক ম্যাচের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তখন আবার বলা হবে, ছ্যা-ছ্যা! ভারতীয় ক্রিকেটারদের কোনও দেশভক্তিই নেই। আবার পাকিস্তানের সঙ্গে খেলতে নেমে পড়ল? এর মধ্যে কোনও একটা ম্যাচে সূর্যকুমারেরা হেরে গেলে যে কী হবে, ভাবতেও শিউরে উঠছি! কিন্তু খেললে গাল-টাল দেওয়া হবে।
কারণ, ক্রিকেটারদের (পুরুষ) গাল দিলে সেই প্রতিফলিত আলোয় নিজেও আলোকিত হওয়া যায়। এমনিতেই আমদের দেশের ক্রিকেটারেরা এক একজন ঈশ্বর। তার উপর গাড়ি-বাড়ি-ঘড়ির বৈভব, বাহুলগ্না সুন্দরী, আশরীর ট্যাটুর কোলাজ, ঝাকানাকা জীবনযাপন। এ সব হিংসে তৈরি করবে না তো কোনটা করবে শুনি?
কিন্তু রবিবারের ম্যাচ না খেলে ভারত (বিসিসিআই) করতই বা কী? ক্রিকেটারেরাই বা কী করতেন? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটসূচি মেনে দলগত ভাবে ভারতকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় খেলতে হবে। না খেললে আর্থিক গুনাগার। এই ম্যাচ না খেললে যার সর্বোচ্চ পরিমাণ হতে পারত ১,৭০০ কোটি টাকা। বিশেষ কোনও ক্রিকেটার পাকিস্তানের সঙ্গে না খেলার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিতেই পারতেন। কিন্তু পাকিস্তান ম্যাচে ভাল কিছু করে দেখানোর মঞ্চটা কেন ফালতু ছাড়তে যাবেন? বায়োডেটায় পাকিস্তান ম্যাচে একটা ৫০ বা তিনটে উইকেট তো তাঁকে আরও অনেক দূর এগিয়ে দেবে। বিশেষত, এই লুলুম (সুনীল গাওস্কর বলেছেন ‘পোপটওয়াড়ি টিম’। ঠিকই, নইলে কি আর তাদের সেরা বোলার ইনিংসের প্রথম দুটো ডেলিভারিতে চার আর ছক্কা খায়) পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। যারা কুলদীপ যাদবের আঙুল পড়তে না-পেরে নির্বোধের মতো সুইপ মারতে যায় এবং পটাপট উঁচু ক্যাচ তুলে ফেরে। সেই টিম, যাদের ম্যাচের আগেই কাঁধ ঝুলে গিয়েছে।
রাজনীতিকেরা তাঁদের গ্যালারিকে তুষ্ট করতে চাইবেন। দেশজোড়া জনতা ক্রিকেটমাঠের সঙ্গে ভারত-পাক রাজনীতিকে জড়িয়ে ফেলবে। তাতে তাদের কোনও দোষও নেই। খেলার মাঠ এবং রাজনীতি বরাবর হাত ধরাধরি করে চলেছে এ দেশে। এশিয়া কাপের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিসিসিআই তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু পাশাপাশিই মনে হচ্ছিল, কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রক দল কি নিজেদের ঠেলতে ঠেলতে একটা বাক্সের মধ্যে ভরে ফেলল, যেখান থেকে বেরোলে তাদের ভক্তরাই তাদের আঁচড়ে-কামড়ে শেষ করে দেবে? নইলে কেনই বা খেলার সিদ্ধান্ত? কেনই বা খেলার আগে-পরে বিবৃতির ‘প্রায়শ্চিত্ত’?
কী জানেন? ময়দান ছেড়ে সরে আসাটা বীরের কাজ নয়। সুযোগ পেলেই ঘেঁটি ধরে শোধ নেওয়া উচিত। সূর্যকুমারের টিম রবিবার দুবাইয়ে তা-ই করেছে। সে ঠিকই আছে। কেন ম্যাচ খেলবে না? খেলা তো উচিতই। কিন্তু ম্যাচের শেষে কেন প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মেলাবে না? এটা যুদ্ধক্ষেত্র নয়। খেলার মাঠ। বস্তুত, ষোলোকলা পূর্ণ হত, যদি ম্যাচের শেষে হাতটা মিলিয়ে বোঝানো যেত, পাকিস্তান নেহাতই দুধ-ভাত। অপারেশন সিঁদুরে যেমন, ক্রিকেটের মাঠেও তেমন।
তবে কিনা, সেটা তো ক্রিকেট হত। রাজনীতির সাইড শো নয়।