বাহিরের বাতাস

গৌতম গম্ভীর বিরাট কোহালির সমালোচনা করিয়াছেন। বলিয়াছেন, এক বারও কোহালির দল আইপিএল-এ চ্যাম্পিয়ন না হওয়া সত্ত্বেও, কোহালিকেই অধিনায়ক রাখা হইয়াছে, ইহা তাঁহার সৌভাগ্য।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৯ ০০:১৩
Share:

গৌতম গম্ভীর বিরাট কোহালির সমালোচনা করিয়াছেন। বলিয়াছেন, এক বারও কোহালির দল আইপিএল-এ চ্যাম্পিয়ন না হওয়া সত্ত্বেও, কোহালিকেই অধিনায়ক রাখা হইয়াছে, ইহা তাঁহার সৌভাগ্য। উত্তরে কোহালি যাহা বলিয়াছেন, তাহার সারমর্ম, বহু লোকে অনেক কিছু বলিয়া থাকে। সব সমালোচনায় কান দিলে তো ঘরে বসিয়া থাকিতে হয়। বহু বার এই প্রকারের মন্তব্য বহু ভারতীয় ক্রিকেটারের মুখেই ধ্বনিত হইয়াছে। যখন ভারতীয় দল বিদেশে যাইয়া নাজেহাল হয়, বা কাহারও অত্যন্ত খারাপ ফর্ম যায়, গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষ নিন্দায় মুখর হইয়া উঠেন, সেই সময়ে ক্রিকেটারেরা কী করেন? ভাল সময় আসিবার পর যে সাক্ষাৎকার লওয়া হয়, তাহাতে ক্রিকেটাররা বলেন, ওই দুঃসময়ে তাঁহারা সংবাদপত্র পাঠ বন্ধ করিয়া দিয়াছিলেন, টিভি দেখিতেন না। বহু সফল ভারতীয় অধিনায়কও উপদেশ রূপে ইহাই বলিয়াছেন, নিজে যা ভাল মনে করিবে, তাহাই করিবে, অন্যে কী বলিল, কান দিবার কোনও প্রয়োজন নাই। অর্থাৎ, বাহিরের বাতাস কেবল দূষণই বহিয়া আনে, উহার পথ বন্ধ করিয়া রাখাই ভাল। তাহা হইলে কি যে কোনও শিল্পী, ক্রীড়াবিদ, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এই কথা বলিতে পারেন, তাবৎ সমালোচনা উপেক্ষা করাই তাঁহার কৌশল, অন্যের কোনও কথায় মনোযোগ না দেওয়াই তাঁহার কার্যপ্রণালীর অঙ্গ? ইহার মধ্যে কি এক আশ্চর্য ও চূড়ান্ত ঔদ্ধত্য নাই? এই ধারণা নাই, যে, কেবল তাঁহার (বা তাঁহার সহকর্মীদের) পক্ষেই বুঝা সম্ভব কার্যক্ষেত্রে কী করিতে হইবে, অবশিষ্ট বিশ্বের কাহারও এই বিষয়ে একটিও কথা বলিবার অধিকারই নাই? ইহা কি সম্ভব যে একটি খেলা বিষয়ে কেবল অংশী খেলোয়াড়রাই সব বুঝিতে পারেন এবং অন্য সকলেই বুঝিবার ভান করেন মাত্র? কিছু চলচ্চিত্র পরিচালক বা লেখকও এমন কথা বলিয়াছেন, তাঁহারা রিভিউ পড়েন না। সারা পৃথিবী গ্রন্থটি সম্পর্কে কী বলিল, গ্রাহ্যই করেন না। কিন্তু যদি এক বিখ্যাত সাহিত্যিক গ্রন্থটি সম্পর্কে কিছু বলেন? বা গৌতম গম্ভীরের ন্যায় অভিজ্ঞ ও দক্ষ ক্রিকেটার যদি কিছু বলেন? যদি লব্ধপ্রতিষ্ঠ ধারাভাষ্যকার কিছু বলেন? তাহারও কোনও মূল্য নাই?

Advertisement

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সমালোচনার প্রতি তুমুল অসহিষ্ণুতা যখন রাজনীতিবিদদের মধ্যে দেখা যায়, নেতা বা নেত্রী মানুষের কথা শুনিবার অপেক্ষা যখন নিজ জেদ ও বুদ্ধিকেই বরাবর অগ্রাধিকার দেন, তখন তাঁহাদের প্রবল নিন্দা করা হয়। অবশ্য রাজনৈতিক নেতাদের সহিত জনগণের অভিযোগের সম্পর্ক নিবিড়তর। একটি কাব্য খারাপ হইলে সমাজের তত ক্ষতি হয় না, পানীয় জলের জোগান খারাপ হইলে যত হয়। কিন্তু যে কার্যটি সাধারণত কোটি কোটি মানুষের সম্মুখে প্রবল আড়ম্বরে সম্পাদিত হয়, এবং হয় বলিয়াই সেইখানে সাফল্যের ফলে কোটি কোটি টাকা ও প্রকাণ্ড খ্যাতি আসিয়া ক্রোড়ে পতিত হয়, সেই কার্যে অন্য সকলকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখাইবার যৌক্তিকতা লইয়া প্রশ্ন উঠিবে। এই কথা অবশ্যই ঠিক যে সমাজমাধ্যমের রমরমার দিনে প্রতিটি অযোগ্য ব্যক্তিই বিশেষজ্ঞের আলখাল্লা অঙ্গে চড়াইয়া খেলাধুলার বিচার করিতে ব্যস্ত, পারিলে দুধের শিশুও গিয়া ধোনিকে চারিটি উপদেশ দিয়া আসে। তাই আজ খ্যাতনামা ব্যক্তির আবশ্যিক কার্য হইল অগণিত অজ্ঞ মানুষের অবান্তর নিন্দা হইতে নিজেকে অস্পৃষ্ট ও অপ্রভাবিত রাখা। কিন্তু সেই সমীকরণে যদি স্নানজলের সহিত শিশুটিকেও ছুড়িয়া ফেলা হয়, অনর্থ হইতে পারে। সকল সমালোচনাই বিশ্রী কোলাহল নহে, কিছু অপ্রিয় সত্য মানিলে বৃহত্তর লাভ হইবার সম্ভাবনা। একটি চলচ্চিত্র করিয়া এক জন ভাবিলেন, ইহাই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, অতএব তাঁহার আর কিছুই শিখিবার নাই, ইহাতে তাঁহারই শিল্পের অগ্রগতি রুদ্ধ হইয়া যাইতে পারে। গঠনমূলক সমালোচনা চিনিতে পারা, তাহাকে স্বাগত জানাইয়া গ্রহণ করা এবং তদ্দ্বারা নিজ প্রতিজ্ঞা ও পরিকল্পনা শোধিত করিবার মধ্যে দুর্বলতা নাই, বরং অধিক সবলতা রহিয়াছে। বিরাট কোহালিকে এই মুহূর্তে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান বলা হইতেছে, অধিনায়ক হিসাবেও তাঁহার প্রশস্তি গীত হইতেছে। এই সময়ে যদি তাঁহার প্রাক্তন সতীর্থ ও বহুজনবন্দিত ক্রিকেটার তাঁহার সম্পর্কে কোনও কথা বলেন, তাহাকে উড়াইয়া দিবার অহঙ্কারসর্বস্বতা ছাড়িয়া, তিনি বরং উক্তিটির নিহিত সতর্কীকরণ প্রণিধান করিতে পারেন। কারণ দ্বার বন্ধ করিয়া নিন্দাটারে রুখিলে, জরুরি সত্যও এক সময় আর প্রবেশ করিবার পথ পাইবে না।

Advertisement

যৎকিঞ্চিৎ

পুজোয় বহু দিন ধরে শুধু দেবতার মূর্তি গড়া হচ্ছিল, এ বার গোপাল পুজোয় মোদী, ইমরান ও অভিনন্দনের মূর্তি প্যান্ডেলে শোভিত হতেই, নতুন দিগন্ত খুলে গেল! দুর্গাপুজোয় জায়গাও বেশি, তদ্দিনে ঘটনার ঘনঘটাও বাড়বে, সামনে আসবেন অাইপিএলের নায়ক, বিশ্বকাপের নায়ক, হয়তো নতুন ফিল্ম বা যুদ্ধকাণ্ডও নতুন নায়ক উগরে দেবে। আমরা চিরকালই দেবতারে প্রিয় করি প্রিয়েরে দেবতা, এ বার থেকে মানুষ ও দেবতা সমানে সমানে পাশাপাশি প্রণাম কেড়ে নিক!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন