Election Results 2019

অভিনন্দন নরেন্দ্র মোদী, তবে দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল

বৈচিত্রময় ভারতের ততোধিক বৈচিত্রপূর্ণ জনগোষ্ঠী যখন কোনও এক ব্যক্তির মধ্যে নিজেদের যাবতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখতে থাকে, তখন দায়িত্ব অনেক গুণ বেড়ে যায় বইকি!

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০০:৪৭
Share:

সাংবাদিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি রয়টার্স।

সম্পন্ন হল দেশের সপ্তদশ সাধারণ নির্বাচন। দীর্ঘ লড়াই শেষে দেশের মানুষের যে রায় শেষ পর্যন্ত জানা গেল, সে রায়ে সর্বাগ্রে অভিনন্দন প্রাপ্য বিজেপির। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই বিরাট জয় এবং এই বিপুল জনাদেশ বিজেপির দায়িত্ব আরও অনেক বাড়িয়ে দিল।

Advertisement

ঐতিহাসিক জয়ে সওয়ার হয়ে ক্ষমতায় ফিরলেন নরেন্দ্র মোদী। গত কয়েক বছর ধরেই মোদী তথা বিজেপির ঐক্যবদ্ধ বিরোধিতা চলছিল গোটা দেশে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পরস্পরের মধ্যে যাবতীয় বিরোধিতা ভুলে এক সুরে মোদী বিরোধিতায় নেমেছিল। নির্বাচন পর্যন্তই সে ঐক্য বহাল ছিল। কিন্তু জনাদেশ বলছে, বিজেপি বিরোধী এই বিরাট জোটের উপরে ভরসা রাখেননি নাগরিকরা। প্রায় বছর দুয়েক ধরে দেশের প্রত্যেকটা প্রান্তে ঐক্যবদ্ধ বিজেপি বিরোধিতা সত্ত্বেও যে ভাবে জিতল বিজেপি আবার, তাতেই দায়িত্বটা বেড়ে গেল মোদীর তথা বিজেপির।

বিপুল বৈচিত্রের দেশ ভারত। এ দেশের পরতে পরতে বিবিধতা। পরিচিত শব্দে ব্যাখ্যা করতে গেলে বলতে হয়, নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান। এমনই এক বৈচিত্রময় দেশ, দেশের নানা প্রান্তের নানা রকম জনগোষ্ঠী নিজের নিজের আশা-আকাঙক্ষার প্রতিফলন খুঁজে পেয়েছে নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে। বৈচিত্রময় ভারতের ততোধিক বৈচিত্রপূর্ণ জনগোষ্ঠী যখন কোনও এক ব্যক্তির মধ্যে নিজেদের যাবতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখতে থাকে, তখন দায়িত্ব অনেক গুণ বেড়ে যায় বইকি!

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: ‘ফকিরের ঝোলা আপনারা ভরে দিয়েছেন, এ জয় ভারতের সব নাগরিকের’

যে নির্বাচনের ফলাফলে সওয়ার হয়ে একটানা দ্বিতীয় বার দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী, সে ফলাফল ঐতিহাসিক। কোনও একটি দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পর পর দু’বার দেশের শাসন ক্ষমতা দখল করছে, এই রকম নজির গত প্রায় পাঁচ দশকে আর একটাই রয়েছে। সে নজিরে ইন্দিরা গাঁধীকে ছুঁয়ে ফেলেছেন নরেন্দ্র মোদী। গোটা দেশ কোন বিপুল মাত্রায় নিজেদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখছে নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে, এই ঐতিহাসিক জনাদেশই তার সবচেয়ে বড় সাক্ষী। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের বৈচিত্রময় আশা-আকাঙক্ষা পূরণের বিরাট দায়িত্বটা এ বার কিন্তু আরও গুরুভার হয়ে দেখা দিতে চলেছে নরেন্দ্র মোদীর জন্য।

এই নির্বাচনী ফলাফলের পরে দায়িত্ব বৃদ্ধি পেল বিরোধী শিবিরেরও। রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস হোক বা বিজেপি বিরোধী শিবিরে থাকা অন্য কয়েক ডজন রাজনৈতিক দল— গত প্রায় দু’বছর ধরে ক্রমশ ঐক্য জোরদার হচ্ছিল এদের মধ্যে। মোদী বিরোধিতায় বা মোদী সরকারের বিভিন্ন নীতির সমালোচনায় এই দলগুলো ক্রমশ পরস্পরের কাছাকাছি আসছিল এবং সমস্বরে বলছিল— ভারতের জন্য মোদী এবং তাঁর বিজেপি অত্যন্ত বিপজ্জনক। নির্বাচনের ফলাফল বলছে, সম্মিলিত বিরোধী শিবিরে সেই কণ্ঠস্বর গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি ভারতবাসীর। দায়িত্বটা বৃদ্ধি পেল বিরোধী শিবিরের সেখানেই। আগামী পাঁচ বছর আরও বেশি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এই দলগলোকে ভাবতে হবে, কী ভাবে দেশবাসীর সামনে নিজেদের মতকে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারা যায়।

আরও পড়ুন: অমেঠীতে পরাজয় রাহুলের, কংগ্রেস অস্তাচলে

ঐতিহাসিক বিজয় তথা বিপুল জনাদেশ অর্জন করতে পারার জন্য নরেন্দ্র মোদীর তথা বিজেপির এক বিরাট অভিনন্দন প্রাপ্য। এই অভূতপূর্ব জয় সত্যিই অভিনন্দনযোগ্য। আগামী পাঁচ বছরে ভারতবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা সাফল্যের সঙ্গে পূরণ করতে পারার প্রশ্নে শুভেচ্ছা রইল নরেন্দ্র মোদীর জন্য।

অভিনন্দন প্রাপ্য কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীরও। এই নির্বাচন আবার খুব বড় একটা ধাক্কা বয়ে এনেছে কংগ্রেসের জন্য। অমেঠীতে বাহুল গাঁধীর নিজের পরাজয় আরও গুরুতর তাৎপর্যের সম্ভবত। তার পরেও কংগ্রেস সভাপতি যে বার্তা নিয়ে দেশবাসীর মুখোমুখি হলেন, যে ভাবে জনতার রায়কে শিরোধার্য করার কথা বিনম্রতার সঙ্গে বললেন, যে কাঙ্ক্ষিত সৌজন্যে প্রতিপক্ষকে প্রাপ্য অভিনন্দনটা জানালেন, এই দেশের আর ক’জন রাজনীতিকের পক্ষে তেমনটা করা সম্ভব, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

এই নির্বাচন সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট কিছু বার্তা দিয়ে গেল প্রায় সব পক্ষকেই। প্রত্যেকটা জনাদেশের বার্তা এতটা সুস্পষ্ট হয় না বোধ হয়। কার জন্য ঠিক কী বার্তা দিলেন দেশের জনতা, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই তা বুঝে নিতে পারবে বলে আমরা আশা রাখতে পারি। নরেন্দ্র মোদী থেকে রাহুল গাঁধী, চন্দ্রবাবু নায়ডু থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়— প্রত্যেকেই জনতার সে বার্তা অভ্রান্ত পড়ে নেবেন এবং আগামী পাঁচ বছরে ভারতীয় গণতন্ত্রকে আরও সশক্ত ও সমৃদ্ধ করে তুলবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন