Editorial news

সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা কিন্তু মরসুমি হতে পারে না

গণতান্ত্রিক আনুষ্ঠানিকতা এবং সাংবিধানিক সৌজন্যের স্বার্থেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানে হাজির হওয়ার চেষ্টা করবেন বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৯ ০১:০৪
Share:

—ফাইল চিত্র।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বার নরেন্দ্র মোদী শপথ নেবেন ৩০ মে। সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করবেন বলে জানালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গণতান্ত্রিক আনুষ্ঠানিকতা এবং সাংবিধানিক সৌজন্যের স্বার্থেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানে হাজির হওয়ার চেষ্টা করবেন বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন।

Advertisement

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অবস্থান বা সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে স্বাগতযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ছবিটা এই রকমই হওয়া উচিত। রাজনৈতিক বা মতাদর্শগত প্রশ্নে দূরত্ব যতটাই থাকুক বিভিন্ন শিবিরের মধ্যে, রাষ্ট্রের প্রতি এবং সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রশ্নে একসঙ্গে কাজ করার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকবেন সাংবিধানিক পদাধিকারিরা— বাতাবরণটা এইরকমই হওয়া উচিত গণতন্ত্রে।

কিন্তু বাতাবরণটা এইরকম কি থাকে সবসময়? ঘূর্ণিঝড় ফণী যখন তাণ্ডব চালিয়ে গেল বাংলার একাংশে, তখন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একাধিকবার ফোন করেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে ফোন আসার খবর পেয়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে যোগাযোগের চেষ্টা করেননি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি নিজে বৈঠক করেননি, রাজ্য প্রশাসনের কোনও কর্তাকেও কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠকে বসতে দেননি।

Advertisement

আরও পড়ুন: মোদীর শপথে যাবেন মমতা, বললেন ‘সাংবিধানিক সৌজন্য’-এর জন্যই

ওই ঘটনা কি গণতান্ত্রিক সৌজন্য বা সাংবিধানিক দায়বদ্ধতার পরিচয় দিয়েছিল? এই সৌজন্য বা দায়বদ্ধতা তো মরসুমি হতে পারে না। কোনও মরসুম গণতন্ত্র এবং সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধতা দেখানোর অনুকূল এবং কোনওটা প্রতিকূল, এমন তো হতে পারে না। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাঝে ফণী হানা দিয়েছিল, সে কথা ঠিক। নির্বাচনী প্রচার চলাকালীন নরেন্দ্র মোদী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে তিক্ত আদানপ্রদানের মহাপ্রাচীরও হয়তো মাথা তুলেছিল। কিন্তু সে সবের পরেও নরেন্দ্র মোদী দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীই ছিলেন। নাগরিকদের প্রতি দায়বদ্ধতা তখনও ততখানিই ছিল, যতটা এখন রয়েছে। দুর্গত নাগরিকদের সুরাহায় কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তাকে নির্বাচনের কারণে অস্বীকার করা যায় কী ভাবে!

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

প্রতিবেশী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই ফণীর মোকাবিলায় অগ্রসর হয়েছিলেন। রাজনীতির ময়দানে প্রতিবেশী রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রীর দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দলের বৈরিতা কিন্তু কিছু কম নয়। তা সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক সৌজন্যে এবং সাংবিধানিক দায়বদ্ধতায় দু’পক্ষই অটল ছিলেন। কাম্য এই ছবিটাই। দায়বদ্ধতার গভীরতা এই ছবিতেই ধরা পড়ে।

মতাদর্শগত বা নীতিগত পার্থক্য বিভিন্ন দলের মধ্যে থাকবেই। ভিন্ন ভিন্ন মতের এই সমাহার এবং সহাবস্থানই সুস্থ গণতন্ত্রের লক্ষণ। কোনও কারণেই বা কোনও মরসুমেই এই সহাবস্থানকে অস্বীকার করার প্রবণতা মেনে নেওয়া যায় না। নরেন্দ্র মোদী থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গাঁধী থেকে চন্দ্রবাবু নায়ডু, প্রত্যেকেরই সে কথা মনে রাখার দায় রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন