National news

বিস্ময়কর দায়িত্বজ্ঞানহীনতা! সরকারের হাতে কাজেরও অভাব সম্ভবত

আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিসর বা সাধারণ পরিসর থেকে যখন তার প্রয়োগ হয়, তখন আমরা সে সব খণ্ডন করতে পারি, পত্রপাঠ নস্যাৎ করতে পারি। কিন্তু রাজদরবার থেকে যখন ধ্বনিত হয় অল্প বিদ্যার কণ্ঠস্বর, তখন তা বড্ড বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৭ ০২:৫৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

অল্প বিদ্যা যে সর্বদা ভয়ঙ্করী রূপেই দেখা দেয়, সে সত্য অজানা নয়। কিন্তু অল্প বিদ্যার প্রয়োগ যে উৎস ভেদে নিজের তাৎপর্য বদলাতে পারে, সে কথা অভিজ্ঞতা থেকেই উপলব্ধি করতে হয়। আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিসর বা সাধারণ পরিসর থেকে যখন তার প্রয়োগ হয়, তখন আমরা সে সব খণ্ডন করতে পারি, পত্রপাঠ নস্যাৎ করতে পারি। কিন্তু রাজদরবার থেকে যখন ধ্বনিত হয় অল্প বিদ্যার কণ্ঠস্বর, তখন তা বড্ড বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।

Advertisement

গর্ভবতী নারী এবং গর্ভস্থ সন্তানের সুস্বাস্থ্যের জন্য কী কী করণীয়, আচমকা তার নিদান দিয়েছে ভারত সরকারের আয়ুষ মন্ত্রক। গর্ভবতী নারীর জন্য ডিম-মাংস বর্জনীয়, কামনা-বাসনা-যৌনতা অকল্পনীয়— আয়ুষ মন্ত্রকের নিদান এমনই। আধ্যাত্মিক চিন্তায় দিনাতিপাত করতে হবে, উয়দাস্ত অনিন্দ্যসুন্দর শিল্পকলার মাঝে থাকতে হবে, হাতে সর্বক্ষণ মহান ব্যক্তিবর্গের জীবনী রাখতে হবে— তবেই নাকি সুস্থ-স্বাভাবিক সন্তান জন্ম নেবে। রীতিমতো পুস্তিকা প্রকাশ করে এই ‘সুমহান বাণী’ দিয়েছে আয়ুষ মন্ত্রক।

এই নিদান দেখার পর সর্বাগ্রে মাথায় আসে একটাই প্রশ্ন— কাজকম্মো কি কম পড়েছে? তা যদি না হবে, তা হলে এমন চূড়ান্ত বিভ্রান্তিমূলক এবং আদ্যন্ত অবৈজ্ঞানিক পরামর্শ সম্বলিত বই ছেপে ফেলার মতো যথেষ্ট সময় আয়ুষ মন্ত্রক পেল কী ভাবে? দীর্ঘ দিন শারীরবিদ্যা বা চিকিৎসা শাস্ত্র বিষয়ে পড়াশোনা করে সে বিষয়ে যাঁরা ‘কিঞ্চিৎ’ জ্ঞানার্জন করেছেন, তাঁরা সকলে বলছেন গর্ভবতী নারী এবং তাঁর গর্ভস্থের সুস্বাস্থ্যের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ আমিষ আহার অত্যন্ত জরুরি। প্রয়োজনে যৌনতাও ফলদায়ী, বলছেন চিকিৎসকরাই। কিন্তু অল্প-বিদ্যাধর ‘মহাজ্ঞানী’ আয়ুষ মন্ত্রক বলে দিয়েছে, ঠিক বিপরীতটাই জরুরি।

Advertisement

গর্ভবতী নারীর খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনচর্যা কেমন হবে, সে নিয়ে নিদান হাঁকার অধিকার সরকার পেল কোথা থেকে? এই বিষয়ে পরামর্শ বিলোতে যাওয়া কি আদৌ সরকারের কাজ?

ধরে নেওয়া যাক, জনসচেতনতার খাতিরে গর্ভবতী নারীর জন্য সুপরামর্শ সম্বলিত পুস্তিকা প্রকাশ করতে চায় দেশের সরকার। যদি উদ্দেশ্য তেমনই হয়, সে দায়িত্ব তো বর্তানোর কথা স্বাস্থ্য মন্ত্রকের উপরে! আয়ুষ মন্ত্রক এর মধ্যে আসে কোন পথ ধরে?

চূড়ান্ত অবৈজ্ঞানিক পরামর্শগুচ্ছ যখন হইচই ফেলে দিয়েছে গোটা দেশে, তখন আয়ুষ মন্ত্রকের তরফে জনৈক জানাচ্ছেন, প্রকাশিত পুস্তিকা পরামর্শ মাত্র। মানতেই হবে, এমন বাধ্যবাধকতা নেই।

মানার বাধ্যবাধকতাই যখন নেই, নিতান্ত জরুরি কোনও বিষয়ই যখন নয়, তখন সে নিয়ে পুস্তিকা প্রকাশ করতে যাওয়ার দরকারটা কী ছিল?

আয়ুষ মন্ত্রকের পুস্তিকা যে শুধু কেন্দ্রীয় সরকারকে হাস্যাস্পদ করেই ক্ষান্ত হয়েছে, তা কিন্তু নয়। বড়সড় বিপন্নতাও ঘনিয়ে তুলেছে। মন্ত্রকের তরফে যে সব পরামর্শ প্রচার করা হয়েছে, তা যে অবৈজ্ঞানিক, সে কথা বুঝে নেওয়ার সক্ষমতা কিন্তু এই বিপুলায়তন দেশের প্রত্যেক নাগরিকের নেই। ভারতীয় জনসংখ্যার এক বিরাট অংশের কাছেই সরকারি পরামর্শ বেদতুল্য। তাই গর্ভবতী নারীর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারি বিভাগ যে পরামর্শ দিচ্ছে, তাকে অভ্রান্ত এবং প্রশ্নাতীত বলেই মনে করবেন এক বিরাট সংখ্যক ভারতবাসী। এর ফলটা ঠিক কেমন হতে পারে, কেন্দ্রীয় সরকার কি আঁচ করছে? লক্ষ লক্ষ বা কোটি কোটি গর্ভবতীর আমিষ আহার যদি বন্ধ করে দেওয়া হয় দেশের প্রান্তে প্রান্তে আচমকা, প্রভাবটা কেমন হবে আয়ুষ মন্ত্রক কি বুঝতে পারছে?

সঙ্কটটা শুধু অল্প বিদ্যার নয়, সঙ্কট দায়িত্বজ্ঞানহীনতারও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন