Editorial News

কার অপদার্থতা? স্পষ্ট ব্যাখ্যা চাই

যে সে পরীক্ষা নয়, রাজ্য সরকারের আমলা নিয়োগের পরীক্ষা। সেই পরীক্ষা নিয়েও এমন চূড়ান্ত গাফিলতি! যে ভাবেই ঘটুক ঘটনাটা, কোনও না কোনও স্তরে অপদার্থতা তো রয়েইছে। আশঙ্কার মেঘটাকে জমাট বাঁধায় সেই অপদার্থতাই।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৮ ০০:৫৯
Share:

ফাইল চিত্র।

এই অদ্ভুত কাণ্ডকে কী বলা হবে, তা নির্ধারণ করা খুব দুরূহ। গাফিলতি? অপদার্থতা? নাকি ইচ্ছাকৃত? উত্তর পাওয়া খুব দুরূহ। আর উত্তর কে দেবেন বা উত্তর কার তরফ থেকে আসা উচিত, সে নিয়ে চর্চা করতে গেলেই এক প্রবল দায় ঠেলাঠেলি শুরু হয়ে যাবে। সেই ঠেলাঠেলির মাধ্যমেই শিকড়ে পৌঁছনোর পথগুলোকে প্রবল সমস্যাসঙ্কুল করে তোলা হবে।

Advertisement

ডব্লুবিসিএস-এর (মেন) ঐচ্ছিক উর্দু বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে সোমবার। পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে যৎপরোনাস্তি বিস্ময়ের সম্মুখীন হয়েছেন। ২০১৭ সালের পরীক্ষার জন্য যে প্রশ্নপত্র তৈরি হয়েছিল, তার সঙ্গে হুবহু মিলে গিয়েছে এ বছরের প্রশ্নপত্র। পরীক্ষার্থী থেকে আমলা,পরীক্ষা নিয়ামক থেকে রাজ্য সরকারি কর্তা— কেউই মনে করতে পারছেন না, আগে কখনও এমনটা ঘটেছে কি না।

ডব্লুবিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরির নিয়ম কী রকম? নিয়ম হল, এ বছরের প্রশ্নপত্রে যে সব প্রশ্ন রইল, সেই সব প্রশ্নের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পরের বছরের প্রশ্নপত্রে থাকতে পারে। তার চেয়ে বেশি কোনও ভাবেই নয়। আর কী ঘটল? ২০১৭ সালের উর্দু প্রশ্নপত্রে যে সব প্রশ্ন ছিল, সে সবের ১০০ শতাংশ ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্রে তুলে দেওয়া হল।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

এমনটা ঘটতে পারে কী ভাবে? যাঁরা প্রশ্নপত্র তৈরি করলেন, তাঁরা কি প্রশ্নপত্র তৈরির নিয়ম জানতেন না? নাকি খেয়ালখুশিতে কাজ করা শুরু হয়েছে? নাকি অসতর্কতার সীমা অতিক্রম করে গিয়েছে পরীক্ষা নিয়ামক সংস্থা পাবলিক সার্ভিস কমিশন? নিয়ম না জেনেও যদি কেউ প্রশ্ন তৈরি করতে বসেন, তা হলেও কি আগের বছরের প্রশ্নপত্রের সঙ্গে তা হুবহু মিলে যাওয়া সম্ভব? তা হলে কী ভাবে ঘটল এই কাণ্ড?

কয়েকটা সম্ভাবনার কথা ভেবে দেখা যাক। হতে পারে, অসতর্কতা বশত গত বছরের প্রশ্নপত্রকেই এ বারের প্রশ্ন বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। অথবা হতে পারে, খেয়ালখুশিতে প্রশ্নপত্র তৈরি করেছেন প্রশ্নকর্তারা। খাটাখাটনির এড়াতেই হোক বা পরীক্ষার্থীদের আতান্তরে ফেলতে, গত বছরের প্রশ্নপত্রকেই ফের ছাপিয়ে নিয়েছেন। অথবা হতে পারে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই এমনটা ঘটানো হয়েছে, কোনও প্রভাবশালীর কোনও স্বার্থ হয়ত জড়িত ছিল।

আরও পড়ুন
ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় হুবহু গত বারের প্রশ্নপত্র‍!

তবে এ সবই আসলে জল্পনা। সবই হল গলদটাকে আঁচ করার চেষ্টা। আসলে কী ঘটেছে, পরীক্ষা নিয়ামকরা মুখ না খোলা পর্যন্ত তা বোঝা খুব শক্ত। আশ্চর্যজনক ভাবে পাবলিক সার্ভিস কমিশন এই অদ্ভুত কাণ্ডের কোনও ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করল না। ঊর্ধ্বতন কোনও স্তর থেকেও কোনও মন্তব্য এল না।

যে সে পরীক্ষা নয়, রাজ্য সরকারের আমলা নিয়োগের পরীক্ষা। সেই পরীক্ষা নিয়েও এমন চূড়ান্ত গাফিলতি! যে ভাবেই ঘটুক ঘটনাটা, কোনও না কোনও স্তরে অপদার্থতা তো রয়েইছে। আশঙ্কার মেঘটাকে জমাট বাঁধায় সেই অপদার্থতাই। পরীক্ষার মাধ্যমে আমলাদের খুঁজে নেওয়ার দায়িত্ব যাঁদের উপরে, তাঁরাই এত অপদার্থ! তা হলে যাঁরা ডব্লুবিসিএস পরীক্ষা দিয়ে আমলা হচ্ছেন, তাঁদের হালটা কেমন? প্রশ্ন আরও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে গলদটা না হয় ধরা পড়েছে। অন্য আরও অনেক ক্ষেত্র কি রয়েছে, যেখানে পাবলিক সার্ভিস কমিশন এমনই কোনও চূড়ান্ত গাফিলতি ঘটিয়ে ফেলেছে সকলের অলক্ষ্যেই? যদি তেমনটা ঘটে থাকে, তা হলে আমাদের প্রশাসনিক কাঠামোটার উপরে কতটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তা কি আমরা ভাবতে পারছি?

যে গলদ ধরা পড়ল, তা শুধুমাত্র হিমশৈলের অগ্রভাগ কি না, জানা যায় না। কিন্তু ডব্লুবিসিএস-এর প্রশ্নপত্র নিয়ে এই অদ্ভুত ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে, পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর হয়ে উঠে থাকতে পারে মেঘের আড়ালে আড়ালে। সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ জরুরি, অবিলম্বে জরুরি। ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা নয়, স্পষ্ট ব্যাখ্যা সামনে আসা জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন